PROBANDHAY — KRISHANU BHATTACHARJEE — BHARATHPATHIK O RABINDRANATH — MUKTADHARA — 22 MAY 2025, 3rd YEAR

প্রবন্ধ — কৃশানু ভট্টাচার্য্য — রবীন্দ্রনাথের চোখে ভারতপথিক — মুক্তধারা — ২২ মে ২০২৫, বর্ষ ৩

সাহিত্যের পাতা

PROBANDHAY  KRISHANU BHATTACHARJEE  BHARATHPATHIK O RABINDRANATH  MUKTADHARA  22 MAY 2025 3rd YEAR

প্রবন্ধমুক্তধারা, বর্ষ ৩

রবীন্দ্রনাথের চোখে ভারতপথিক
কৃশানু ভট্টাচার্য্য


রবীন্দ্রনাথ তার সারা জীবনে বেশ কয়েকটি জীবনী গ্রন্থ রচনা করেছিলেন।  এগুলি হলো বুদ্ধদেব , যীশু খ্রীষ্ট, মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ, বিদ্যাসাগর চরিত, মহাত্মা গান্ধী।  এছাড়াও চারিত্রপূজা গ্রন্থে তিনি বেশ কিছু মানুষের কথা বলেছেন।  এই তালিকার অন্যতম গ্রন্থ ভারতপথিক রামমোহন রায়।  এই গ্রন্থটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল রামমোহন রায়ের মৃত্যু শতবার্ষিকী উপলক্ষে।
রবীন্দ্রনাথ রাজা রামমোহন রায কে চিনে ছিলেন ভারতপথিক হিসেবে।  সেই ভারত পথিক যিনি মনুষ্যত্বের সাধনায় ভেদবুদ্ধির অহংকার থেকে মুক্তি লাভের সাধনায় মানুষকে এক জায়গায় নিয়ে আসেন।  রবীন্দ্রনাথের মতে সেটাই ছিল ভারতের ঐক্যের যথার্থ পথ।  তিনি বলছেন, " আমাদের ইতিহাসের আধুনিক পর্বের আরম্ভ কালেই এসেছেন রামমোহন রায়।  বিদেশি কি স্বদেশী কেউ স্পষ্ট করে চিনতে পারেনি, তিনিই সেদিন বুঝেছিলেন এ যুগে যে আহ্বান সে সুমহৎ ঐক্যের আহ্বান।" রবীন্দ্রনাথ ১৩১৮ বঙ্গাব্দে রামমোহন রায় সম্পর্কে লিখেছিলেন রামমোহন রায় পৃথিবীর বেদনাকে হৃদয়ে লইয়া পৃথিবীর ধর্মকে খুঁজিতে বাহির হইয়াছিলেন।  মূর্তি পূজোর মধ্যে জন্মেও একজন মানুষ বহুকালব্যাপী সংস্কার আর দেশব্যাপী অভ্যাসের নিবিড়তার মধ্যে থেকে কি ভাবে বিশ্বমানবের হৃদয় নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছিলেন,  কিভাবে একটা দেশের আর্থ সামাজিক সাংস্কৃতিক চেহারাকে বদলে দেবার অসম যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিলেন রাজা রামমোহন রায়ের জীবনী পাঠ করলে সেই কথাই মনে পড়ে।  এদেশে কেবলমাত্র সতীদাহ প্রথা রদ নয়, পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তার পাশ্চাত্য যুক্তি এবং বিজ্ঞানের বিস্তার এবং সেই সঙ্গে সঙ্গে সীমিত পরিবেশের মধ্যেও একজন ভারতীয় হিসেবে নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার রামমোহন রায়ের সারা জীবন ধরে করে গেছেন। আর সেই কারণেই তিনি তার পরবর্তী প্রজন্মের বহু মানুষের কাছে আদর্শ স্থানীয়।  
তিনি নিজে যে ভারতবর্ষে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সেই ভারতবর্ষ অনেকটা অংশই ছিল অন্ধকারে নিমজ্জিত।  সেই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে রামমোহন তার গোটা জীবন ধরে করে গেলেন এক অন্তহীন লড়াই।  রবীন্দ্রনাথ সেই লড়াইকেই শ্রদ্ধা জানিয়েছেন তার রচনার মধ্যে দিয়ে।  বলেছেন, " পূর্ণ মনুষ্যত্বের সর্বাঙ্গীন আকাঙ্ক্ষাতে বহন করে এদেশের রামমোহন রায়ের আবির্ভাব হয়েছিল। ভারতবর্ষে তিনি যে কোন নতুন ধর্মের সৃষ্টি করেছিলেন তা নয়, ভারতবর্ষ যেখানে ধর্মের মধ্যে পরিপূর্ণতার রূপ চিরদিনই ছিল সেখানে বৃহৎ সামঞ্জস্য, যেখানে শান্তশিবমদ্বৈতম, সেইখানকার সিংহদ্বার তিনি সর্বসাধারণের কাছে উদঘাটিত করে দিয়েছিলেন।" রামমোহন রায় পশ্চিমের সঙ্গে পূর্ব কে মেলানোর কাজ আজীবন করে গেছেন।  এর জন্য স্বদেশের বহু মানুষের সঙ্গে তার বিরোধ হয়েছে কিন্তু কোন বিরোধ তাঁকে পথভ্রষ্ট করতে পারে নি। আর সেই কারণেই তিনি রবীন্দ্রনাথের ভারত থিক যার কর্মযাত্রা কোন বাধা দিয়েও থামিয়ে রাখা যায়নি।

Comments :0

Login to leave a comment