TMC BRIGADE

জনগর্জন হলো কই

সম্পাদকীয় বিভাগ

জনগর্জন সমাবেশ। কিন্তু জন অর্থাৎ জনগণ গেল কোথায়? মমতার ডাকে সাড়া দিয়ে ব্রিগেডে গর্জন করতে আসায় তাদের এত অনীহা কেন? তিন দশক আগে এই ব্রিগেডই উপছে পড়েছিল বামফ্রন্টের মৃত্যু ঘণ্টা বাজানোর প্রতীকী সমাবেশে। আবেগ আর স্বতস্ফূর্ততায় ছিল টইটুম্বুর। কিন্তু এবার সবটাই যেন নিয়মতান্ত্রিক যান্ত্রিকতায় মোড়া। ক্ষমতাসীন দল। অঢেল অর্থ। তারপর গোটা সরকারই কার্যত দলদাসে রূপান্তরিত। ফলে আয়োজনের বাহুল্যে, বিলাসিতায়, চমকে, অভিনবত্বে খামতি নেই। কিন্তু লোক কোথায়, যারা গর্জন করে ব্রি‍গেড কাঁপাবে? শঙ্কা বোধ হয় গোড়াতেই ছিল। তাই তিনদিকে ব্যারিকেড করে অর্ধেক জায়গা ছে‍‌ড়ে মাঠকে ছোট করে ফেলা হয়েছিল। তার মধ্যে আবার ঢাউস ঢাউস তিন চারটি মঞ্চ। মঞ্চ থেকে সামনের দিকে ৩৩০ মিটার র্যাঞম্প ঢুকে পড়েছে শ্রোতাদের ভেতরে। সেখান থেকে আবার ডান ও বাঁদিকে ছড়িয়েছে আরও বেশ খানিকটা। পিসি-ভাইপো মাইক হাতে পায়চারী করেছেন র্যা ম্পের এমাথা ওমাথা। পিসির পেছন পেছন হেঁটেছেন দলের ঘোষিত প্রার্থীরা। এত কিছুর পরও ছোট করে ঘিরে রাখা মাঠটাও ভরানো গেল না। দলের অন্দরেই তাই চাপা বিষাদের সুর। বিসর্জনের আগমনী নয়তো !
এমন সমাবেশে পিসি সাধারণত দীর্ঘ ভাষণ দেন না। এবার আরও কম কথা বলেছেন। নেত্রী কি নিজেই উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছেন। দীর্ঘ ভাষণ দেননি ভাইপোও। তবে এটা অনেকটাই স্পষ্ট হয়েছে পিসির থেকে ভাইপোর হাতে ব্যাটন হস্তান্তরের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। পিসি সম্ভবত অনুভব করতে পারছেন তাঁর শেষের ঘণ্টা বোধ হয় বাজতে শুরু হয়ে গেছে। গরিব মানুষের অধিকার, সম্ভ্রম, মর্যাদা কেড়ে নিয়ে গলায় শ্রীয়ের মালা পরিয়ে বেশিদিন ভুলিয়ে রাখা যায় না। রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে, রুজির শ্মশান বানিয়ে শুধু লক্ষ্মীভাণ্ডার দিয়ে মানুষের জীবন চলে না। মাকে মাসে ৫০০ টাকা দিয়ে ছেলে-মেয়ের চাকরির সুযোগ চিরতরে কেড়ে নেওয়ার পরিণতি যে কতটা ভয়ঙ্কর তা উপলব্ধি করছে বাংলার মানুষ। সাধারণ মানুষকে নানাভাবে কিছু অর্থ পাইয়ে দিয়ে ভুলিয়ে রেখে দেদার চুরি ও লুটের রাজত্ব বে‍‌শিদিন চলে না।
 বাংলার শিল্প সম্ভাবনাকে সমূলে উৎপাটন করে যুব সমাজকে রাজ্য ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে। নিজের রাজ্যে কাজ না পেয়ে ছেলে-মেয়েরা চলে যাচ্ছে ভিন রাজ্যে। অদক্ষ, অর্ধদক্ষ, দক্ষ, উচ্চ দক্ষ কোনও মানুষের কাজ নেই। যেটুকু কাজ আছে তাতে যা মজুরি মেলে পেট চলে না। তাই বেশি আয়ের জন্য অন্য রাজ্যে গিয়ে কষ্টের জীবন কাটাতে হয়। সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থার এতটাই অবনতি ঘটেছে যে সামান্য সামর্থ্য থাকলেও ছাত্ররা চলে যাচ্ছে বেসরকারি স্কুলে। সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। তাই শুধু কাজের তাগিদে নয়, শিক্ষার তাগিদেও ছেলে-মেয়েরা বিপুল হারে বাইরে চলে যাচ্ছে। রাজ্যের সব মেধা, সব দক্ষতা, উদ্ভাবনী ক্ষমতা চলে যাচ্ছে বাইরে। বাংলা ক্রমশ পরিণত হচ্ছে অপেক্ষাকৃত পিছিয়ে পড়াদের আস্তানায়। এরাজ্যের ভবিষ্যৎকে ধ্বংস করা হচ্ছে, সব স্বপ্নকে টুঁটি টিপে হত্যা করা হচ্ছে। চোর লুটেরাদের রাজত্বে এটা অনিবার্য ভবিতব্য। মানুষ সেটা বুঝতে শুরু করেছেন। তাই ব্রিগেডে জনগর্জন হয়নি। যেটুকু হয়েছে সেটা পিসি-ভাইপো’র আতঙ্কের গর্জন।
 

Comments :0

Login to leave a comment