EDITORIAL

মোদী পারবেন না

সম্পাদকীয় বিভাগ

গত দু’বছর ধরে বিভিন্ন সরকারি সংস্থাকে দিয়ে তদন্ত, দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ, যাবতীয় নথিপত্র যাচাই করেও কল্পিত অভিযোগের কণামাত্রও খুঁজে পাওয়া যায়নি তখন নিউজক্লিকের কণ্ঠরুদ্ধ করতে মশা মারতে কামান দাগার মতো চরম প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে ভয়ঙ্কর কালাকানুন ইউএপিএ প্রয়োগ করেছে মোদী সরকার। নিউজক্লিকের অস্তিত্ব কোনও অবস্থাতেই সহ্য করতে পারছে না আধিপত্যবাদী শাসক দল। মোদী ঘনিষ্ঠ কর্পোরেট মালিকানাধীন গোদী মিডিয়ার বিপরীতে সত্যিকারের নির্ভীক নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার স্পর্ধা দেখিয়েছে নিউজক্লিক। দে‍‌শের শ্রমিক, কৃষক ও দলিত জনসমষ্ঠির অধিকার রক্ষার লড়াইকে অগ্রাধিকার দিয়ে অর্থ সম্পদ-আয় বৈষম্যের বিরুদ্ধে সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠাকে অগ্রাধিকার দিয়ে মানুষের পক্ষে বিকল্প সাংবাদিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এই অনলাইন নিউজ পোর্টাল স্পষ্টত এবং খোলাখুলিভাবে শ্রমিক-কৃষক, দলিত-আদিবাসীদের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারের পক্ষে, যুদ্ধের বিরুদ্ধে শান্তির পক্ষে। ভারতের সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র রক্ষার গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার মত প্রকাশের-সমালোচনার-বিরোধিতার অধিকার রক্ষার যে কোনও লড়াইয়ের ধ্বনিকে প্রতিধ্বনিত করে। ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক ঘৃণা ও বিদ্বেষ, হিংসা ও দাঙ্গার স্থল থেকে প্রকৃত সংবাদ তুলে এনে প্রচার করে। এমন একটি সংবাদ পোর্টাল মোদী জমানায় জীবিত থাকবে এটাই আশ্চর্যের বিষয়। পূর্ব দিল্লির দাঙ্গার সময়, এনআরসি’র বিরুদ্ধে দিল্লির শাহিনবাগের আন্দোলনের তথ্য নির্ভর সংবাদ-বিশ্লেষণ প্রচার করেছে। দিল্লির উপকণ্ঠে বর্ষকালব্যাপী ঐতিহাসিক কৃষক আন্দোলন নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রচার করেছে। মোদীর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ শিল্পপতি আদানি গোষ্ঠীর নানা অনিয়ম নিয়ে সাহসের সঙ্গে আঙুল তুলেছে। এরপর নিউজক্লিক যে মোদী সরকারের প্রধানতম টার্গেট সেটাই স্বাভাবিক। এখনই এই জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী নিউজ পোর্টালকে বন্ধ করা না গেলে, নিদেন পক্ষে ভয় দেখিয়ে সন্ত্রস্ত করে পুলিশ, ইডি, সিবিআই, আয়কর বিভাগ দিয়ে নাজেহাল করা না গেলে সামনের লোকসভা নির্বাচনে সমূহ বিপদ। মোদী সরকারের যাবতীয় জুমলাবাজি, প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যর্থতা, চমক-নাটকের পর্দা ফাঁস করে দেবে। তাই যে করেই হোক নিউজক্লিককে আটকাতে হবে। আর নিউজক্লিককে পদানত করা গেলে মোদী মিডিয়ার বিপরীতে আর কোনও সৎ-নির্ভীক-নিরপেক্ষ সাংবাদিকতা মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না। এমন অঙ্ক কষেই পরিকল্পনা হয়েছে। অন্য কোনও অভিযোগে নিউজক্লিকের টিকিও স্পর্শ করা যাচ্ছে না। অতএব লাগিয়ে দাও দেশদ্রোহিতা ও দেশবিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগ। দাগিয়ে দাও চীনের এজেন্ট বলে। তারপর ঠুকে দাও ইউএপিএ আইনে মামলা। তারপর জেলে পচুক বাকি জীবন। এটা এমনই এক দানবীয় আইন, জামিন মিলবে না। বছরের পর বছর শুধু তদন্ত চলবে। চার্জশিট হবে কিন্তু প্রমাণ মিলবে না। আসলে বিরোধী ও সমালোচকের কণ্ঠ রুদ্ধ করতে, সরকারের ব্যর্থতা তথ্য সহযোগে তুলে ধরা আটকাতে, জুমলাবাজি ফাঁস আটকাতে মোদী সরকারের কাছে আর কোনও অস্ত্র নেই। হিটলার যা পারেনি মোদীরা ভাবছেন সেটা করে দেখাবেন। মানুষের যাবতীয় গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা কেড়ে ভাবছেন হিটলারকেও টপকে যাবেন। পারবেন না। সেটা হতে দেবে না জাগ্রত গণতান্ত্রিক চেতনা।

Comments :0

Login to leave a comment