Meenakshi Mukerjee

ধর্মীয় বিভাজনের বিরুদ্ধে লড়াই হবে প্রতি ইঞ্চিতে: মীনাক্ষী

রাজ্য জেলা

অনির্বাণ দে- ফারাক্কা

স্থায়ী কাজ ও ইনসাফের দাবিতে সোমবার উত্তর দিনাজপুর থেকে শুরু হয় ডিওয়াইএফআই’য়ের ইনসাফ যাত্রা। রায়গঞ্জ থেকে এগিয়ে চলে মুর্শিদাবাদের দিকে। মঙ্গলবার সকাল ১০ টাতেই মিছিল শুরু হয় ফারাক্কার অর্জুনপুরে কান্তার মোড় থেকে। সাত সকালেই তাপমাত্রা ৩৫ পার করে গিয়েছিল। সেসব অগ্রাহ্য করেই এদিন ডিওয়াইএফআই কর্মীদের জন্য রাস্তায় দুই ধারে অপেক্ষায় ছিলেন গ্রামের মানুষ। অধিকার আদায়ে, রাজ্যকে বাঁচানোর লড়াইয়ের স্লোগান নিয়েই এদিন এগিয়ে চলে ‘‘কাজ ও সম্প্রীতির যাত্রা’’। স্লোগানে উঠে আসে ভাঙন মোকাবিলায় স্থায়ী পদক্ষেপের দাবি, কর্মসংস্থান, শিল্পের দাবি। এলাকায় সম্প্রীতির দাবি।
মিছিল শেষ হয় লালমাটিতে। সেখানেই হয় সভা। বক্তব্য রাখেন ডিওয়াওইএফআই রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখার্জি। ছিলেন ডিওয়াইএফআই নেতা  ধ্রুবজ্যোতি সাহা, আকবর আলি, ইন্দ্রজিৎ বর্মণ, সন্দীপন দাস, সৈয়দ নুরুল হাসান সহ স্থানীয় যুব ও গণ আন্দোলনের নেতৃত্ব।
বেলডাঙ্গা থেকে সামসেরগঞ্জ, বারবার সাম্প্রদায়িক রাজনীতির টার্গেট করা হয়েছে মুর্শিদাবাদ জেলাকে।  যে জেলার ইতিহাসে, যাপনে মিশ্র সংস্কৃতির শক্ত বুনিয়াদ,  সেই জেলাই আরএসএস’র টার্গেট। এই জেলা থেকেই লক্ষলক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক দেশে, বিদেশে কাজ করেন নির্মাণশ্রমিক থেকে অসংগঠিত বিভিন্ন ক্ষেত্রে। এক সময়ের রাজ্যের অর্থনৈতিক ভরকেন্দ্রে এখন গ্রামে গ্রামে বাড়ছে অভাব, বাল্য বিবাহ, অপুষ্টি। সেই জেলাকেই সাম্প্রদায়িক রাজনীতির পরীক্ষাগার বানাতে ময়দানে তৃণমূল, বিজেপি। তেমনটাই দেখা যাচ্ছে, সাম্প্রতিক ঘটনায়। সেই পরিকল্পনা ভেস্তে দিতেই এদিন মুর্শিদাবাদে পথ চলা শুরু করেছে ডিওয়াইএফআই’র ‘‘কাজ ও সম্প্রীতির যাত্রা’’। সোমবার রাতেই ডিওয়াইএফআই’র এই যাত্রা ফরাক্কায় এসে পৌঁছায়।
এরপর রঘুনাথগঞ্জের সেখালিপুর পঞ্চায়েতের কৃষ্ণশাইল মোড় থেকে ফের শুরু হয় দীর্ঘ মিছিল। মিছিলে জুড়েছেন বিড়ি শ্রমিক থেকে পরিযায়ী শ্রমিকরাও। প্রায় ৫ কিলোমিটার পথ হেঁটে।  মিছিল শেষ হয় বড়জুমলা মোড়ে। সমাবেশে মীনাক্ষী মুখার্জি বলেছেন, কাজ চাইতে গেলে এলাকায় সম্প্রীতির প্রয়োজন। সম্প্রীতির পরিবেশকে টিকিয়ে রাখতে গেলে এলাকায় কাজের প্রয়োজন। পশ্চিমবঙ্গের বেকার ছেলেমেয়েদের ভোট লুটের কাজে লাগানো হচ্ছে। লটারির নেশায় বুঁদ করে দেওয়া হচ্ছে। কাজ না পেয়ে পরিযায়ী শ্রমিক হতে বাধ্য হচ্ছে যুবক যুবতীরা। তিনি প্রশ্ন করেছেন, বিজেপি শাসিত রাজ্যে কতোজনকে কাজ দিয়েছে বিজেপি ? জবাব দিতে হবে। মীনাক্ষী বলেছেন, রাজ্যে তৃণমূল বিজেপির কথা শোনানোর জন্য মঞ্চ তৈরি করে দিয়েছে। মাইকও জোগাড় করে দিয়েছে। আর দুই দল মিলে রাজ্যে দাঙ্গার পরিবেশ তৈরি করছে। আনিস খানকে যখন খুন করল তখন তিন ঘন্টা ধরে পুলিশ আসেনি। সামসেরগঞ্জে যখন চন্দন দাস, হরগোবিন্দ দাসকে খুন করা হয়েছে। তখনও পুলিশ আসেনি। রাজ্যে পুলিশের এটাই ভূমিকা। রাজ্যের যিনি মুখ্যমন্ত্রী, তিনিই পুলিশমন্ত্রী। তাঁর নির্দেশেই কি এসব হচ্ছে ? জবা  দিতে হবে।
মীনাক্ষী বলেছেন, সরকার রাজ্যে কারখানা করলে , ১০০ দিনের কাজ ২০০ দিন করলে রাজ্যের এই অবস্থা হতো না। বিজেপি, তৃণমূল বেকার ছেলেমেয়েদের পিষে মারতে চাইছে। দুই সরকার মন্দির তৈরিতে ব্যস্ত। তরুণ প্রজন্মর জন্য সরকারের কী পরিকল্পনা ?
সমাবেশে ডিওয়াইএফআই রাজ্য সভাপতি ধ্রুবজ্যোতি সাহা বলেছেন, রাজ্যের যুবক যুবতী, ছাত্রছাত্রীরা রাজ্যের ভবিষ্যৎ। এই ভবিষ্যৎ রক্ষা করতে ডিওয়াইএফআই মাটি কামড়ে রাস্তায় আছে। ধর্মীয় বিভাজনের বিরুদ্ধে প্রতি ইঞ্চিতে লড়াই হবে। বিজেপি, আরএসএস’এর রাজনীতিকে তৃণমূল রুখবে না। সব মানুষকে একজোট হয়েই বিজেপি, আরএসএসকে আটকাতে হবে। রাজ্য থেকে তৃণমূলকে বিদায় করতে হবে।
এদিন  মীনাক্ষী মুখার্জি বলেছেন, তৃণমূল বিজেপির মুখে একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই করে। এরা দুজনেই একশো দিনের কাজকে নষ্ট করতে চাইছে। দুই দলই শিক্ষার ক্ষেত্রকে, কাজের ক্ষেত্রকে শেষ করে দিতে চাইছে। এর বিরুদ্ধে লড়বে রাজ্যের যুবক যুবতীরা। এই লড়াইয়ে বুক চিতিয়ে থাকবে ডিওয়াইএফআই।
২১ থেকে ২৩ শে জুন বহরমপুরে হবে ডিওয়াইএফআই’র ২০ তম পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সম্মেলন। বহরমপুর রবীন্দ্রসদনে কমরেড মানব মুখার্জি ও তরুণ মজুমদার মঞ্চে হবে সম্মেলন। সম্মেলন উপলক্ষ্যে বহরমপুরের নাম করণ করা হয়েছে কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও মৃণাল সেন নগর হিসেবে। ২১ জুন বহরমপুর এফইউসি ময়দানে প্রকাশ্য সমাবেশ হবে। নওজোয়ান ভারত সভা- শতবর্ষ মঞ্চে বক্তব্য রাখবেন মহম্মদ সেলিম, হিমঘ্নরাজ ভট্টাচার্য , মীনাক্ষী মুখার্জী। সভাপতিত্ব করবেন ধ্রুবজ্যোতি সাহা। সমাবেশকে সফল করার আহ্বানও জানানো হয় এদিন। রঘুনাথগঞ্জের পর লালগোলায় হয় পদযাত্রা, সমাবেশ।

Comments :0

Login to leave a comment