গল্প
মা
সৌরীশ মিশ্র
নতুনপাতা
"অ্যাই রিনি, কোথায় তুই? দেখে যা তাড়াতাড়ি।"
"কি মা?"
"আয় না, দেখতে পাবি। শোওয়ার ঘরে চলে আয় চটপট।"
"আসছি মা।"
এতক্ষণ বসার ঘরের মেঝেতে বসে ড্রয়িং খাতায় রঙ-পেনসিল দিয়ে একটা বিড়ালের ছবি আঁকছিল ছ' বছরের রিনি। এবার সে উঠে পড়ল। ছুটে চলল ওদের শোওয়ার ঘরে।
শোওয়ার ঘরে ঢুকেই রিনি দেখল, ওর মা দাঁড়িয়ে ঘরের ডানদিকে যে জানলা দুটো আছে সেটার সামনে।
"কি হয়েছে মা?"
"এদিকে আয়, দেখে যা।"
পায়ে পায়ে মায়ের পাশটায় এসে দাঁড়াল রিনি।
"ঐ দ্যাখ্। মা পায়রাটা কেমন খাওয়াচ্ছে ছানাটাকে।" রিনির মা আঙুল তুলে জানলার বাইরে দেখতে বলেন মেয়েকে।
রিনি দেখল, ওদের বাড়ির ঠিক পাশের, বুড়োদা-দের বাড়ির জানলার সানশেডের ওপর, মুখে করে আনা খাবার ওর ছানাটাকে কি আদর করেই না মুখে ঢুকিয়ে দিচ্ছে মা পায়রা! রিনি এও লক্ষ্য করল, একবারের খাওয়ানো শেষ হতেই ছানা পায়রাটা ওর অল্প-অল্প পালকে ঢাকা ডানা দুটো মেলে মায়ের পিছন পিছন ঘুরতেই থাকছে আর সাথে চিঁ-চিঁ করে ক্রমাগত ডাকতেই থাকছে ততক্ষণ, যতক্ষণ না ওর মা ওকে ফের আর একবার খাবার মুখে পুড়ে দিচ্ছে।
রিনি বুঝতে পারে, এইটাই সেই ছানাটা যেটা কয়েক দিন আগে ডিম ফুটে হয়েছিল বুড়োদা-দের বাড়ির ছাদের একটা লফ্টের মধ্যে। রিনিদের ছাদ থেকে বুড়োদা-দের বাড়ির ছাদের ঐ অংশটা দেখা যায় স্পষ্ট। রিনিই একদিন বিকেলে ছাদে ঘুরতে ঘুরতে দেখেছিল প্রথম, একটা ডিম কিছু শুকনো ডালপালার মধ্যে ঐ লফ্টটায়। তখুনি মাকে আর পরেরদিন সকালে বাবাকে দেখিয়েছিল রিনি ডিমটা। ওটার পাশে একটা পায়রাকে বসে থাকতে দেখে ঐ ডিমটা যে পায়রারই ডিম সেটা ওর মা-বাবা বলার আগেই বুঝে গিয়েছিল রিনি।
ছানা পায়রাটা যে দু'-চারদিন হল একটু আধটু করে উড়ছেও, সেটা লক্ষ্য করেছে রিনি। সাথে এও খেয়াল করে দেখেছে সে, ছানাটা কিন্তু উড়ে দূরে কোথাও যাচ্ছে না। কখনো ছাদের লফ্টটা থেকে বেড়িয়ে উড়ে এসে বসছে ছাদের উপর, কখনোবা বাড়ির সানশেডগুলোর উপর, এই যেমন এখন বসেছে এসে।
"কি যত্ন করে খাওয়াচ্ছে দেখেছিস?" ফের বললেন রিনির মা।
"হ্যাঁ। ঠিক যেমনি করে তুমি আমাকে খাইয়ে দাও আদর করে, ঠিক তেমনি আদর করে, তাই না মা?"
"হ্যাঁ রে। ও হতে পারে পাখি, তবু ও-ও তো মা।"
রিনি মায়ের আরো কাছ ঘেঁষে আসে। রিনির মা রিনিকে বাঁ হাত দিয়ে টেনে নেন নিজের কাছে।
তখনও মা পায়রাটা তার বাচ্চাটিকে সস্নেহে খাইয়ে দিচ্ছে।
রিনি আর ওর মা দেখতেই থাকে সেই সুন্দর দৃশ্য।
Comments :0