SFI

স্কুল বন্ধের বিরুদ্ধে আরও জোরদার হবে আন্দোলন, বলল এসএফআই

রাজ্য জেলা

গরমের ছুটির নাম করে অনির্দিষ্টকালের জন্য এরাজ্যের স্কুলগুলিতে তালা লাগিয়ে দিয়েছে রাজ্যের শিক্ষা দপ্তর। আসলে এভাবেই আড়াল থেকে শিক্ষাকে বেসরকারীকরণের অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে কেন্দ্র ও রাজ্যের সরকার। আর এই শিক্ষাকে বেসরকারি করণের প্রথম ধাপই হচ্ছে সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থাকে লাটে তুলে দেওয়া। তারই বন্দোবস্ত হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে দুর্বার ছাত্র আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি করছে এসএফআই। শুক্রবার কোচবিহার শহরের কমরেড গোপাল সাহা ভবনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে একথা জানালেন এসএফআই রাজ্য সভাপতি প্রণয় কার্যী ও রাজ্য সম্পাদক দেবাঞ্জন দে। এছাড়াও এদিনের এই সাংবাদিক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের কোচবিহার জেলা সম্পাদক প্রাঞ্জল মিত্র ও জেলা সভাপতি জিৎ কুমার পাল। 
এদিন এসএফআই রাজ্য সভাপতি প্রণয় কার্যী বলেন, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ইতিমধ্যেই এরাজ্যের প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক শিক্ষিকা চাকরি হারিয়েছেন। এই বিপুলসংখ্যক শিক্ষক শিক্ষিকা স্কুলছুট হওয়ায় শিক্ষার পরিকাঠামো ভেঙে পড়েছে রাজ্যের বড় অংশের স্কুলগুলিতে। প্রকৃতপক্ষে এই স্কুলগুলি চালানোই দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছে। এই বিষয়টি যাতে কোন ভাবেই সাধারণ মানুষের নজরে না আসে, তা ধামাচাপা দিতেই অনির্দিষ্টকালের জন্য স্কুলগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, করানোর সময় লকডাউন পরিস্থিতিতে ঠিক একই কায়দায় অনির্দিষ্টকালের জন্য শিক্ষা ব্যবস্থাকে বন্ধ করে দিয়ে কার্যত লাটে তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিল এই রাজ্য সরকার। আবারও একাজ করা হচ্ছে।  
২০১১ সালের আগে পর্যন্ত বছরে ৬৫টি ছুটি পেত স্কুলগুলি। এই ছুটি গুলি কিভাবে নেওয়া হবে, তা জেলাগত ভাবে শিক্ষা দপ্তরের সাথে কথা বলে ঠিক করে নিতো স্কুলগুলি। আর এই গরমের ছুটি কবে নাগাদ হবে তা আবহাওয়া দেখে স্থির হতো সে সময়। কারণ উত্তরবঙ্গের সাথে দক্ষিণবঙ্গের আবহাওয়া বিস্তর ফারাক রয়েছে। কিন্তু ২০১১সালের পর থেকে রাজ্যের ক্ষমতাসীনরা দক্ষিণবঙ্গ এবং উত্তরবঙ্গের স্কুলগুলিকে একসাথে গরমের ছুটি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এই সময় উত্তরবঙ্গের মানুষ রাতে ঘুমোনোর সময় চাদর বা কম্বল ব্যবহার করেন। অথচ দক্ষিণবঙ্গের সাথে উত্তরবঙ্গ স্কুলগুলিতেও চলছে গরমের ছুটি। 
এদিন প্রণয় কার্যী বলেন, ছুটি ঘোষণা হলে সরকারি এবং বেসরকারি স্কুলগুলির ছুটি হয় প্রায় একই সাথে। কিন্তু উত্তরবঙ্গের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে সরকারি স্কুলগুলি ছুটি থাকলেও বেসরকারি স্কুলগুলিতে এখনও পর্যন্ত গরমের ছুটি ঘোষণা করা হয়নি। এর থেকে পরিষ্কার রাজ্য সরকার তথা রাজ্যের শিক্ষা দপ্তর চাইছে বেসরকারি শিক্ষা ব্যবস্থা বেঁচে থাকুক আর সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থাটা ধ্বংস হয়ে যাক। 
রাজ্য জুড়ে বড় আন্দোলনের পরিকল্পনা গ্রহণ করছে সংগঠন। এই লড়াই যেমন ছাত্র-ছাত্রীর ঐক্যবদ্ধ ভাবে লড়বে। তার সাথে বর্তমান প্রজন্ম ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষার তাগিদে, দেশ এবং রাজ্যকে রক্ষা করবার তাগিদে, শিক্ষা ব্যবস্থাকে বাঁচিয়ে রাখার যে লড়াই এসএফআই  লড়তে যাচ্ছে, এই লড়াইয়ে শিক্ষানুরাগী, শিক্ষক, শিক্ষিকা এবং অভিভাবকদেরও এদিন শামিল হবার আহ্বান জানান প্রণয় কার্যী।
এদিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক দেবাঞ্জন দে মাধ্যমিক উত্তীর্ণ ছাত্র-ছাত্রীদের শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, যাদের ফলাফল খুব ভালো হয়নি তাদেরও পাশে আছে এসএফআই। পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ তারা যাতে না হারিয়ে ফেলে, এটা দেখার দায়িত্ব ছাত্র আন্দোলনের ওপর বর্তায়। বহু ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে যে মাধ্যমিক পরীক্ষার পর পর কোচবিহার সহ এরাজ্যের বহু ছেলে মেয়ে পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে চলে যাচ্ছেন ভিন রাজ্যে। কারণ শিক্ষার প্রতি তারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। যার ফলে প্রতিবছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীদের যে সংখ্যা থাকে, তার দু'বছর পরে গিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসছে যে ছেলে মেয়েরা, তার সংখ্যার মধ্যে একটা বড় রকমের পার্থক্য দেখা যাচ্ছে। এবারের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় যারা রেজিস্ট্রেশন করেছিলেন, তাদের মধ্যে ৫৫হাজার রেজিস্টার্ড ছাত্র-ছাত্রী উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেননি। ড্রপ আউট হয়ে গেছেন তারা। এবারে যারা পরীক্ষায় পাস করলেন মাধ্যমিকে, তারা যাতে ড্রপ আউটের শিকার না হন, তার জন্য এসএফআই লড়াই চালিয়ে যাবে গোটা রাজ্য জুড়ে বলে জানান তিনি।

Comments :0

Login to leave a comment