ভ্রমণ — মুক্তধারা, বর্ষ ৩
পিণ্ডারির পথে...
অভীক চ্যাটার্জী
এক
2021 এর এপ্রিল মাস।COVID সবে শেষ হয়েছে। বাড়িতে থাকতে থাকতে প্রাণ ওষ্ঠাগত। মন চাইছে কোথাও দূরে ঘুরে আসতে। হিমালয়, পেঁজা তুলোর মতো মেঘ আর নীল আকাশ বারে বারে ডাকছে ফিরে যেতে তার কোলে।
সে কথা প্রতীককে বলতেই প্রতীক লাফিয়ে উঠলো। যেন এই কথার অপেক্ষা ও কতকাল ধরে করছে। শুরু হলো জল্পনা কল্পনা। শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত হলো এক ট্রেক, যেখানে প্রকৃতি তার রুক্ষতা আর লাবণ্যকে বড় যত্নের সাথে মিলিয়ে দিয়েছেন। আমরা চললাম পিন্ডারি গ্লেসিয়ারের উদ্দেশ্যে।
পিণ্ডারি গ্লেসিয়ার, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতায় ১২৬৪১ ফুট, এক অসম্ভব সুন্দর হিমবাহ, যার পথ একাধারে দুর্গম এবং ততোধিক অপূর্ব দৃষ্টিনন্দন পরিবেশে পরিপূর্ণ।
'মহাভারত’-এর কাহিনিতে বলা হয়েছে, পাণ্ডবেরা স্বর্গারোহণ যাত্রার সময় এই পথ অতিক্রম করেছিলেন। পিণ্ডারী হিমবাহের কঠিন ও নীরব পথ সেই আধ্যাত্মিক যাত্রার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। প্রতি বছর এখানকার স্থানীয়রা ‘পিণ্ডারী মেলা’ নামক উৎসবের মাধ্যমে এই ইতিহাসকে স্মরণ করেন।এই পিণ্ডারী হিমবাহ থেকে উৎপন্ন পিণ্ডার নদী (Pindar river) পরবর্তীতে আলাকানন্দার সাথে মিলিত হয় কর্ণপ্রয়াগে।
আমাদের যাত্রা শুরু হলো নিউ দিল্লী থেকে। আমরা প্রথমে দিল্লী থেকে পৌঁছলাম দেরাদুন। তারপর সেখান থেকে প্রাইভেট কারে রওনা দিলাম বাগেশ্বরের উদ্দেশ্যে। দেরাদুন থেকে বাগেশ্বরের রাস্তাটি বড় সুন্দর। এ পথ কখনও একলা ছাড়ে না। কখনও যমুনা, কখনো গঙ্গা, কখনও অলকানন্দা বা কখনো সরজু নদী সাথী হয়। আর এ পথে আমরা একে একে সাক্ষী হলাম দেবপ্রয়াগ, রুদ্রপ্রয়াগ এবং কর্ণপ্রয়াগের। অবশেষে গভীর রাতে আমি ও প্রতীক পৌঁছলাম বাগেশ্বরের হোটেলে। যেখানে আমাদের সাথে দেখা করার কথা আমাদের গাইড নন্দন সিং ধানুর। দেখা হলো। সে আমাদের খাবারের ব্যবস্থা করেই রেখেছিল। রুটি আর ডাল খেয়ে আমরা আমাদের ক্লান্ত শরীর এলিয়ে দিলাম নরম বিছানায়। সরাজুর কুলকুল ধ্বনিতে রাত আরও গভীর হলো বাগেশ্বরে।
চলবে
Comments :0