Bangladesh's Interim Government

ইউনুস সরকারের ওপর অনাস্থা, সেনা টহল জোরদার

আন্তর্জাতিক

মীর আফরোজ জামান: ঢাকা 
 
বাংলাদেশের অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান মহম্মদ ইউনূসের উপরে প্রবল চাপ। গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হয় দেশ সংস্কার ও সুষ্ঠ নির্বাচনের জন্য। সেখানে এই নির্বাচন নিয়েই প্রবল চাপে মহম্মদ ইউনূস। এতদিন রাজনৈতিক দলগুলি চাপ দিচ্ছিল, এবার সেনাও হুঁশিয়ারি দিয়েছে। মহম্মদ ইউনুসসহ উপদেষ্টা পরিষদের প্রতি অনাস্থা এনেছে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সৈনিক ও জুনিয়র অফিসাররা। শুক্রবার এক প্রেস রিলিজের মাধ্যমে তারা তাদের অবস্থান জনগণের মাঝে তুলে ধরেছেন। ইতোমধ্যে বিষয়টি সোস্যাল মাধ্যমে ব্যাপক ভাবে আলোচিত হচেছ। এই অযোগ্য সরকারে উপদেষ্টা পরিষদকে অবিলম্বে অপসারণ করে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের দাবি জানিয়েছে।
গত ৫ আগষ্টের পর প্রায় ৯ মাস সরকারের মেয়াদ হতে চললো অন্তবর্তীকালীন সরকারের। এই সময়ের মধ্যে সেনাবাহিনীর সঙ্গে ইউনুস সরকারের নানা বিষয়ে মত বিরোধ তৈরি হয়। বিশেষ করে মায়ানমারের সঙ্গে মানবিক করিডোরের বিষয়গুলো নিয়ে য়া জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়। সেনা নৌ ও বিমান বাহিনীর সৈনিক ও জুনিয়র অফিসাররা এই বিষয়গুলোয় প্রেস রিলিজে উল্লেখ করেছেন।
সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য বলেন, “প্রাণপ্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিটি সদস্য। গতবছরের জুলাই হতে এ যাবত স্বাধিনতার পর হতে বাংলাদেশ কঠিনতম ও বিশৃংখল সময় পার করছে। জুলাই হতে জনগণের যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল তাতে আমরা সামরিক বাহিনীর জুনিয়র অফিসার ও সৈনিকেরা সাধারণ জনগণের অনুভূতি ও আবেগের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সরকারের নির্দেশ অমান্য করতেও দ্বিধাবোধ করিনি একটি নতুন বাংলাদেশের প্রত্যয়ে স্বপ্ন দেখেছিলাম একটি ঐক্যবদ্ধ জাতির সাথে । কিন্তু ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর যেভাবে দেখতে চেয়েছিলাম আকাঙ্খার কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে”? 
তারা বলেন,‘সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিটি সদস্য জাতীয় ওক্যের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে সাধারণ জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানে চেষ্টায় থাকে। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করছি সেনা জনতার এই বিপ্লবকে পুঁজি করে একটি গোষ্ঠী নিজেদের ক্ষমতা ও প্রতিহিংসার রাজনীতির চর্চার মাধ্যমে দেশকে একটি অরাজক অবস্থার দিকে ঠেলে দিতে চাচ্ছে”। 
প্রেস রিলিজে সেনা সদস্যরা বলেন, “গণ মামলা ও মব-সন্ত্রাস প্রকোট আকার ধারণ করেছে। অনির্বাচিত ও অদক্ষ উপদেষ্টা পরিষদ দেশে মারাত্মক বিভাজনের রাজনীতি শুরু করেছে। আগস্টের উত্তাল দিনগুলোতে কোন অপরাধের সাথে জড়িত ছিলেন না তারাও মামলা ও হামলার স্বীকার হচেছন। দেশের সর্বোচ্চ বিচারালয়েও সব-সন্ত্রাসীদের ইচছার প্রতিফলন হচ্ছে। জাতীয় ওক্যের প্রতীক বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীকে নিয়েও এইসব মব-সন্ত্রাসীরা নোংরা কুটউক্তি করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। সেনা সদস্যদের অনেকের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে সোস্যাল মিডিয়ার এ সকল মিথ্যা প্রচারণাতে। শুধুমাত্র দেশের শান্তি প্রতিষ্ঠা ও একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে কোনো নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে মাননীয় সেনাপ্রধানের নির্দেশে আমরা এতদিন ধরে আমাদের সন্তানসম ছাত্রদের এবং তাদের বিপথে পরিচালিত করা মানুষদের ক্রমাগত তিরস্কার এবং মিথ্যাচার হজম করে চলেছি। বর্তমানে দেশের অর্থনীতি ও রাজনীতি সবচেয়ে ভয়াবহ ও ব্যর্থ সময় পার করছে বলে আমরা মনে করি। দেশের বিভিন্ন স্পর্শকাতর ও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে বিদেশি নাগরিকত্ব আছে এরকম বিজ্ঞ ব্যক্তিদের নিয়োগ আমাদের মেনে নিতে বাধ্য করা হচ্ছে। সেনাপ্রধানের সাথে আলাপ না করে নিরাপত্তা উপদেষ্টা নিয়োগ আমাদের প্রতি এই সরকারের চরম অসৌজন্যতা বলেই আমরা মনে করি।’’ 
সেনা সদস্যরা বলেন, “দ্রুততম সময়ের মধ্যে যদি বাংলাদেশের জনগণের মাঝে ওক্য ও শৃংখলা পুন:প্রতিষ্ঠা করা না যায় আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে বলে আমরা মনে করি। আমরা এই ব্যর্থ ও অনির্বাচিত সরকারকে আর সমর্থন না করার নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। দেশে আর কোনো মব সন্ত্রাস ও রাজনৈতিক হামলা মামলা বরদাস্ত করা হবে না। প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণিত ছাড়া কাউকে আর ঢালাও গ্রেপ্তার বা হয়রানি সহ্য করা হবে না। সকলকে সাথে নিয়ে একটি শান্তিপুর্ন সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে হলে হানাহারি বন্ধ করতে হবে। আমরা সশস্ত্র বাহিনী আজ হতে জনগণের পাশে দৃঢ় ভাবে থাকার অঙ্গীকার করছি।’’
সেনা সদস্যরা সর্বশেষে উল্লেখ করেন, “এই অযোগ্য সরকার দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। এই উপদেষ্টা পরিষদকে অবিলম্বে অপসারণ করে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের প্রয়োজনীয়তা আমরা অনুভব করছি।’’ 
অন্যদিকে, সরকারে প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুসের ও তাদের উপদেষ্টাদের পদত্যাগের পর একটি জাতীয় সরকার গঠনের বিষয়টি আলোচনায় আসছে। হয়তো সেদিকেই এগিয়ে চলেছে পরিস্থিতি। ইতোমধ্যে রাজধানী ঢাকায় সেনা টহল বাড়ানো হয়েছে। 

Comments :0

Login to leave a comment