অতি দ্রুত ইন্টারনেট সংযোগ, স্যাটেলাইট ইন্টারনেট ভারতে চালু দিকে এগিয়েছে এলন মাস্কের স্টারলিঙ্ক। কেবল ভারত নয়, মাস্কের ‘সরাসরি স্যাটেলাইট মারফত ইন্টারনেট’ পরিষেবা ঘিরে বিশ্বের বহু দেশেই রয়েছে আশঙ্কা এবং আপত্তি।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ফেব্রুয়ারিতে আমেরিকা গিয়ে কেবল সেদেশের রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গেই নয়, বৈঠক করেছিলেন মাস্কের সঙ্গেও।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন মাস্ক তা আদৌ নতুন নয়। স্যাটেলাইট সংযোগ সরাসরি উপভোক্তাকে দেওয়া হয়েছে আগেও। তবে ভারতে প্রতিরক্ষা পরিকাঠামোর মতো অত্যন্ত স্পর্শকাতর ক্ষেত্র ছাড়া সরাসরি স্যাটেলাইট ইন্টারনেট ব্যবহারের অনুমতি ছিল না। তার সঙ্গে দেশের সুরক্ষার গুরুতর সম্পর্ক আছে। সেই সঙ্গে ইন্টারনেট পরিষেবা ভিত্তিক ব্যবসার একচেটিয়া হাতে চলে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।
ভারতে গোড়ায় ফাইবার কেবল পরিষেবাদাতা দুই বড় সংস্থা রিলায়েন্স জিও এবং এয়ারটেল আপত্তি জানিয়েছিল। সম্প্রতি দুই সংস্থাই জানিয়েছে যে স্টারলিঙ্কের সঙ্গে দুই সংস্থার চুক্তি হয়েছে। তবে তার বিশদ এখনও স্পষ্ট নয়।
স্টারলিঙ্কের পরিষেবা নিয়ে আপত্তি তুলেছিল ইউক্রেনের আমেরিকা বিষয়ক সংসদীয় কমিটি। বিভিন্ন অংশও সরব হয়। এই অংশের অভিযোগ, রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের সময়ে ক্রিমিয়ায় সামরিক অপারেশন আটকে গিয়েছিল স্টারলিঙ্ক হঠাৎ পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়ায়। ভূ-রাজনৈতিক সমীকরণে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী কোনদিকে, তার ওপর নির্ভর করে স্টারলিঙ্কের বাণিজ্যিক পরিষেবা।
অভিযোগ রয়েছে ব্রাজিলেও। স্টারলিঙ্কের মতো সরাসরি ইন্টারনেট সংযোগে প্রত্যন্ত এলাকায় সহজে পৌঁছে দেওয়া যায় ইন্টারনেট সংযোগ। কিন্তু সমাজে তার ফলাফল কী হবে, কোন ধরনের তথ্য ছড়ানো হবে, তথ্যের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে দেশের সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের বিধিনষেধ কতটা মান্য হবে তা নিয়ে একগুচ্ছ প্রশ্ন রয়েছে।
ভারতেও প্রত্যন্ত এলাকায় টেলিযোগাযোগ মানচিত্র বদলে দেওয়ার ভাবনা শুনিয়েছেন কেন্দ্রীয় টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রশেখর পেন্নামানি। ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষ পরিস্থিতির মাঝে, গত ১৩ মে, টেলিকম দপ্তরের প্রাথমিক ইচ্ছাপত্র জোগার করেছেন মাস্ক।
বিশ্বের প্রায় একশোটি দেশে মাস্কের স্টারলিঙ্ক আবেদন করে বসে রয়েছে। জাতীয় স্তরের সরকারগুলিকে চাপের মুখে ফেলা হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুমোদন না পেয়ে সরকারের বিরুদ্ধে প্রচারে নামে মাস্ক। বলতে থাকেন তিনি যে শ্বেতাঙ্গ বলেই অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। কৃষ্ণাঙ্গ হলে অনুমোদন পেয়ে যেতেন! সেই বিতর্ক এখনও মেটেনি।
ভারতে টেলিযোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, প্রথম ধাক্কাতেই সেকেন্ডে ৬০০-৭০০ গিগাবাইট দ্রুত পরিষেবা দিতে পারে স্টারলিঙ্ক। সরকার এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলিকে ধরাই প্রথম লক্ষ্য মাস্কের। তবে সরাসরি উপভোক্তাদের দেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে। তার খরচ যদিও ভারতে চালু ডেটা প্যাকেজের কয়েকগুন হবে। কোনও একটি এলাকায় কতজন ব্যবহার করতে পারবে, তারও সীমাবদ্ধতা থাকবে। তবে ধীরে ধীরে, এই মডেলে, দেশের ইন্টারনেট পরিষেবার ব্যবসা, মাস্কের নিয়ন্ত্রণে।
পাশেই বাংলাদেশে ২১ মে থেকে পরিষেবা চালু করেছে স্টারলিঙ্ক। নেপালেও সরকারি স্তরে চলছে পর্যালোচনা। ভারতে আগামী বছরে সাধারণ গ্রাহকদের কাছে পরিষেবা মিলতে পারে। বাণিজ্যিক সূত্রের খবর, মাসে, সবচেয়ে কম, ৮৪০ টাকা, হারে স্টারলিঙ্ক দিতে পারে প্যাকেজ।
ভারতে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পরিষেবার আবেদন জানিয়েছে আমাজনও। জানা গিয়েছে, ভারতী এয়ারটেল এবং রিলায়েন্স জিও অন্য দুই বিদেশী সংস্থার সঙ্গে যৌথ অংশীদারিত্বেও ব্যবসায় নামার পরিকল্পনা করেছে।
India Starlink
ভারতের ইন্টারনেট পরিষেবা কী যাচ্ছে মাস্কের কবজায়?

×
Comments :0