একদিকে আমেরিকার বিশেষ প্রতিনিধি ঘুরিয়ে সংঘর্ষ বিরতির দায় কৌশলে ঠেলছেন হামাসের ঘাড়ে। আরেকদিকে ইজরায়েলের বাহিনী বুধবার গাজায় আরও ৩৬ জনকে হত্যা করেছে।
সংঘর্ষ বিরতির আলোচনা আরও জটিল করে বুধবারই ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ঘোষণা করেছেন ‘গাজায় হামাসের প্রধান মুহম্মদ সিনওয়ার নিহত হয়েছেন।’
হামাস নেতা প্রয়াত ইয়াহিয়া সিনওয়ারের ভাই মুহম্মদ সিনওয়ার। গত অক্টোবরে নিহত হয়েছিলেন ইয়াহিয়া সিনওয়ার। এর আগে গত অক্টোবরেই মুহম্মদ সিনওয়ারের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেছিলেন ইজরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী।
কেবল গাজাই নয়, চিরাচরিত কায়দায়, প্যালেস্তাইনের ওয়েস্ট ব্যাঙ্কেও ঘরে ঘরে ঢুকে হত্যা চালাচ্ছে ইজরায়েলের বাহিনী আইডিএফ। ক্ষোভ বিপুল হয়েছে ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে কুড়ি বছরে সদ্য যুবা জসিম ইব্রাহিম অল সদার মৃত্যুতে। অল সদার মা জানিয়েছেন সেনা কোনও নোটিশ না দিয়ে দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকেছে। অল সদাকে ঘুলি করেছে। অল সদা রক্তাক্ত অবস্থায় ছটফট করছিল। অ্যাম্বুল্যান্স বা ডাক্তার, কোনোকিছু ডাকতে দেয়নি ইজরায়েলের সেনা। অতিরিক্ত রক্তপাতে মৃত্যু হয়েছে কুড়ি বছরের প্যালেস্তিনীয়ের।
২০২৩’র ৭ অক্টোবর হামাসের প্রত্যাঘাতকেই কারণ দেখিয়ে অমানবিক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইজরায়েল। কিন্তু তার আগে থেকে ঠিক এভাবেই ঘরে ঘরে ঢুকে প্যালেস্তিনীয়দের হত্যা করেছে ইজরায়েলের সেনা।
এদিন ইয়েমেনের রাজধানী সানার বিমানবন্দরের কাছেও বোমা ফেলেছে ইজরায়েল। চলতি মাসে এই নিয়ে দু’বাস সানায় বোমা ফেলল নেতানিয়াহুর বাহিনী।
কিন্তু এত যুদ্ধ দেখিয়েও দেশের ভেতর বা আনত্রজাতিক স্তরে প্রত্যাখ্যান আটকাতে পারছেন না নেতানিয়াহু। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইহুদ ওলমার্ট আমেরিকার সংবাদ প্রতিষ্ঠান সিএএন-কে সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘‘নেতানিয়াহু যা চালিয়েছেন তা পুরোপুরো যুদ্ধ অপরাধ। কোনও সেনা ঠাণ্ডা মাথায় নিরস্ত্র নাগরিক, নারী এবং শিশুদের এভাবে খুন করতে পারে না।’’
ওলমার্ট গোড়ায় নেতানিয়াহুকেই সমর্থন জানাচ্ছিলেন। কিন্তু দেশের ভেতরই বিক্ষোভ ক্রমশ বাড়তে থাকায় বদলে নিয়েছেন বক্তব্য।
এদিন আমেরিকার প্রতিনিধি স্টিভ উইটকফ এক বিবৃতিতে বলেছেন যে স্থায়ী শান্তির সমঝোতা কাঠামো মেনে নিয়েছে হামাস। হামাসের হাতে বন্দি ইজরায়েলের দশ নাগরিককে ছাড়তে হবে। ইজরায়েলও তাদের জেল থেকে নির্দিষ্ট সংখ্যায় প্যালেস্তিনীয়দের ছাড়বে।
উইটকফ কৌশলে সংঘর্ষ বিরতির দায় হামাসের ওপরই চাপাতে চাইছেন। যেন হামাস চাইছেনা বলে সংঘর্ষ বিরতি হচ্ছে না।
হামাস বিবৃতিতে বলেছে, সমঝোতা এমন হওয়া প্রয়োজন যাতে স্থায়ী প্রকৃতির সংঘর্ষ বিরতিতে পৌঁছানো যায়। গাজার মাটিতে ইজরায়েলের সেনা আর সমর সরঞ্জাম বিছিয়ে রেখে এমন কোনও চুক্তি পৌঁছানো সম্ভব নয়। ইজরায়েলকে নিশ্চিত করতে হবে যে গাজার মাটি থেকে সেনাকে সরাবে তারা।
ইজরায়েলের সংবাদমাধ্যমের একাংশও প্রশ্ন তুলছে যে সংঘর্ষ বিরতি নিয়ে আলোচনার মাঝে হামাসের শীর্ষস্তরের নেতার মৃত্যুর খবর ঘোষণা করে কী বার্তা দিতে চাইছেন নেতানিয়াহু।
এদিন ইউরোপীয় ইউনিয়ন ফের ইজরায়েলের যুদ্ধনীতিতে আপত্তি জানিয়েছে। ইজরায়েলের বরাবরের সঙ্গী পশ্চিমী ধনী দেশগুলির পক্ষেও নিরবিচ্ছিন্ন সমর্থন দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না নেতানিয়াহুকে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এক বিবৃতিতে বলেছে যে গাজার অক্টোবর হামলার প্রত্যাঘাতের চেয়ে অনেক বেশি দূর এগিয়েছে ইজরায়েল।
Gaza Netanyahu
গাজায় সংঘর্ষ বিরতির আলোচনার মাঝে হামাস নেতাকে হত্যার ঘোষণা নেতানিয়াহুর

×
Comments :0