Purulia

সমবায়ে জমানো টাকা ফেরানোর দাবিতে পুরুলিয়ায় পথ অবরোধ

জেলা

বামফ্রন্ট সরকারের আমলে সমবায় ছিল গ্রামের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম কেন্দ্র ভূমি। মানুষজন আপদে-বিপদে সেই সমবায় সমিতিতে টাকা রাখতেন। পুরুলিয়ার কেন্দা থানার জামবাদ অঞ্চলের বানসা সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতিতে বহু প্রান্তিক মানুষ তাঁদের কষ্টার্জিত অর্থ জমা রেখেছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে টাকা তুলতে গেলে নানা অজুহাতে ফিরিয়ে দেওয়া হতো। আবেদন নিবেদনে কোন লাভ না হওয়াতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পুরুলিয়ার কেন্দা থেকে পুঞ্চা যাওয়ার রাস্তা অবরোধ করেন কয়েকশো মহিলা এবং পুরুষ। ৩-৪ ঘন্টা অবরোধ চলার পথ পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপে তুলে নেওয়া হয় অবরোধ।
সম্প্রতি হঠাৎ করে বানশা সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতিতে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। অভিযোগ উঠে আসে যে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতির। আমানত কারীরা টাকা ওঠাতে এলে দিনের পর দিন তাদেরকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। কখনো বলা হয় পরে আসতে। আবার কখনো বলা হয় টাকা নেই দেওয়া যাবে না। দীর্ঘদিন ধরে এই অবস্থা চলার ফলে ক্ষোভে ফুঁসছেন স্থানীয় মানুষজন। বৃহস্পতিবার সকালে শত শত আমানতকারী সমবায়ের নিচে জমায়েত হয়ে রাস্তায় বসে পড়েন, শুরু হয় অবস্থান বিক্ষোভ। অবরোধে আটকে পড়ে যাত্রীবাহী বাস সহ অসংখ্য যানবাহন। আমানতকারী জামবাদ গ্রামের বাসিন্দা সস্তা সরকার জানিয়েছেন এক লাখ টাকা তার ওখানে জমা আছে। সেই টাকা তোলার জন্য আসছেন আর ঘুরে ঘুরে যাচ্ছেন। এই মুহূর্তে তার ভীষণ পয়সার দরকার। বানসা গ্রামের বাসিন্দা পানপতি মাহাতো জানিয়েছেন তার দেড় লাখ টাকা জমা আছে। টাকা তুলতে এসে ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ২৩ সালেই তার সেই টাকা ওঠার কথা ছিল। বৃদ্ধ বয়সে যাতে টাকা তুলে কাজে লাগাতে পারেন সেই জন্যই একটু একটু করে কষ্ট করে টাকা জমিয়েছেন। কিন্তু প্রয়োজনের সময় সেই টাকা তুলতে পারছেন না। মিনতি রজক নামে আরেক আমানতকারী জানিয়েছেন সন্তানদের রেখে বর্ধমানে কাজ করতে গিয়ে পয়সা জমিয়েছিলেন। সেটাই এই সমবায়ে জমা রেখেছিলেন। তার পঞ্চাশ হাজার টাকা জমা আছে। সেই টাকা তুলতে আসলে তাকে ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তার দাবি গত তিন বছর ধরে এইরকম অচলাবস্থা চলছে। আর এক আমানতকারী সনাতন রজকের বক্তব্য প্রায় দশ লাখ টাকা তার জমা আছে। এখন ঘর করবেন বলে টাকা তুলতে আসছেন। আর ঘুরে ঘুরে যাচ্ছেন। এটা কতদিন ধরে চলতে পারে। গ্রামাঞ্চলের কৃষকদের অন্যতম ভরসা হচ্ছে এই সমবায়গুলি। যেখানে তাঁরা কষ্ট করে করে একটু একটু করে টাকা জমিয়েছেন। সামনে কৃষি মরশুম আসছে। সেই সময় জমানো টাকা তোলা অত্যন্ত দরকার। কিন্তু দিনের পর দিন একই অচল অবস্থা থাকার কারণে এদিন বাধ্য হয়ে তারা বিক্ষোভ দেখান।  পরে কেন্দা থানার পুলিশ এসে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর তুলে নেওয়া হয় অবরোধ। অতি সম্প্রতি এই সমবায় সমিতির নির্বাচনে বাম ও প্রগতিশীল প্রার্থীরা সমস্ত আসনে জয়লাভ করেছেন। সেখানে শাসকদল কোন প্রার্থী দিতে পারেনি। আমানতকারীদের আশা এবার অন্তত তারা তাদের প্রাপ্য টাকা বুঝে পাবেন। আর শাসক দলের যারা এতদিন ধরে গরীব মানুষের টাকা নয়ছয় করেছেন তাদের আশঙ্কা এবার হয়তো সত্য প্রকাশিত হয়ে পড়বে।

Comments :0

Login to leave a comment