Municipality recruitment scam

অভিষেককে সমন পাঠানো হচ্ছে না কেন, আদালতের প্রশ্ন ইডি, সিবিআই-কে

রাজ্য

মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি সোমবার দলীয় সভায় বলেছিলেন যে, তিনি মেসেজ পেয়েছেন অভিষেককে গ্রেপ্তার করা হবে ভোটের আগে। তাঁর সেই বক্তব্যের পর চব্বিশ ঘন্টাও কাটল না। পৌর কর্মী নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় অভিষেক ব্যানার্জিকে সমন পাঠানো হচ্ছে না কেন, মঙ্গলবার ইডি এবং সিবিআই’র তদন্তের অগ্রগতি দেখে উষ্মা প্রকাশ করে এই মন্তব্য করেন বিচারপতি অমৃতা সিনহা। 
এদিন আদালত মন্তব্য করেছে যেভাবে তদন্ত এগচ্ছে তাতে সবাই সন্দেহ করছে। সব কিছু নাগালের মধ্যে পেয়েও যথাযথ পদক্ষেপ হচ্ছে না কেন? ২০২১ সালের জুলাই মাসে তদন্তের কাজ শুরু হয়েছে। এখনও ধীর গতিতে তদন্ত চলছে। প্রাথমিক শিক্ষক এবং পৌরকর্মী নিয়োগে ঠান্ডা মাথায় ওপর থেকে দুর্নীতি হয়েছে। তদন্তের কাজ হচ্ছে নিচ থেকে ওপরে যাওয়া। ওপর থেকে নিচে নামা হচ্ছে না কেন? এদিন বিচারপতি অমৃতা সিনহা ইডি’র দেওয়া ‘লিপস অ্যান্ড বাউন্ড নিয়ে প্রেস বিবৃতিকে সামনে রেখেই তদন্তকারী সংস্থাকে প্রশ্ন করেছেন। এদিন আদালত নির্দেশ দিয়েছে, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সিবিআই’র সিট যেভাবে তদন্ত করছে পৌরকর্মী নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় এই সিট’ই তদন্ত করবে। আদালতের পর্যবেক্ষণে এই তদন্ত চলবে। প্রাথমিক শিক্ষকদের ক্ষেত্রে ইডি এবং সিবিআই অবৈধ নিয়োগের যে তালিকা তৈরি করেছে। সেই তালিকা অনুযায়ী প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকে অযোগ্যদের নামের তালিকা তৈরি করে আদালতে জমা দিতে হবে। অভিষেক ব্যানার্জির ক্ষেত্রে তদন্তের অগ্রগতির রিপোর্ট ইডি ১৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আদালতে জমা দেবে।
এদিন এই মামলায় উঠে আসে লিপস অ্যান্ড বাউন্ডের ইডি’র তল্লাসি প্রসঙ্গ। এই সংস্থায় প্রায় ১৬ ঘন্টা তল্লাশি চালিয়ে পৌরকর্মী দুর্নীতি মামলায় বহু তথ্য পেয়েছে তদন্তকারী সংস্থা। আদালতে ইডি’র দেওয়া তথ্য সামনে আনেন আইনজীবী ফিরদৌস সামিম। তিনি বলেন ওই সংস্থায় প্রথমে চিফ অপারেটিভ অফিসার ছিলেন সুজয় কৃষ্ণ ভদ্র। ২০১২-১৬ পর্যন্ত তিনি কোম্পানির আরও গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন ছিলেন। অভিষেক ব্যানার্জি ওই কোম্পানির প্রথমে ডিরেক্টর এখনও তিনি সিইও পদে রয়েছেন। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সুজয় কৃষ্ণ ভদ্রকে গ্রেপ্তার করলেও অভিষেক ব্যানার্জি এখনও বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ওই কোম্পানি থেকে এখন পর্যন্ত মাত্র ১২৬ কোটি টাকার হদিশ পাওয়া গেছে। এখান থেকেই আরও অনেক বেশি টাকা নিয়োগ দুর্নীতিতে লেনদেন হয়েছে। এখান থেকেই রুজিরা নারুলার তিনটি ব্যাঙ্ক আকাউন্টের হদিশ তদন্তকারী সংস্থা পেয়েছে।
এদিন বিচারপতি এই মামলার শুনানির সময় সিবিআই’র আইনজীবীকে প্রশ্ন করেন তদন্তে সিটের কতজন সদস্য কাজ করছেন। এই তদন্তের সঙ্গে যুক্ত অফিসাররা অন্য কাজে ব্যস্ত আছেন কীনা  তা আদালত জানতে চেয়েছে। এই শুনানির সময়ই ইডি’র আইনজীবী আদালতকে জানান, অভিষেক ব্যানার্জির দায়ের করা একটি পৃথক মামলা বিচারাধীন রয়েছে। সেখানে তিনি আদালতের কাছে রক্ষাকবচ চেয়েছেন। আইনজীবীর এই বক্তব্য শুনেই বিচারপতি সিনহা বলেন, মামলা বিচারাধীন থাকলে সমন পাঠানো যাবে না কোথায় ঠিক হয়েছে। প্রসঙ্গত, এই পৌরকর্মী নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় রক্ষাকবচ চেয়ে অভিষেক ব্যানার্জির একটি মামলা বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের এজলাসে রয়েছে। সেই মামলার শুনানি শেষ হয়েছে। রায়দান স্থগিত রয়েছে।  
এদিন আদালত শুনানির সময় মন্তব্য করেছে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য। দুর্নীতির এই ব্যাপকতায় তিনি একা যুক্ত ছিলেন এটা মেনে নেওয়া যায় না। এরসঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের সামনে আনতে হবে। অযোগ্য যাঁরা কাজ করছেন তাঁদের যেমন চিহ্নিত করা হচ্ছে তেমন ভাবেই বঞ্চিত যোগ্যদের জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। 
উল্লেখ্য, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি এবং পৌরকর্মী নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত  মামলায় সুপ্রিম কোর্ট গত ২১আগস্ট রাজ্য সরকারের আবেদন খারিজ করে দিয়েছিল । পৌরকর্মী নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের দেওয়া সিবিআই তদন্তের ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে রাজ্য সরকার শীর্ষ আদালতে গিয়েছিল। সুপ্রিম কোর্ট  পৌরকর্মী দুর্নীতি মামলায় সিবিআই এবং ইডি’র তদন্ত বহাল রেখেছে। পৌরকর্মী নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় শীর্ষ আদালতে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ তাদের পর্যবেক্ষণে বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গে পৌরকর্মী নিয়োগ এবং স্কুল শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত যে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে তা একই চক্রের মাধ্যমে সংগঠিত হয়েছে। শীর্ষ আদালত এদিন তার পর্যবেক্ষণে আরও বলেছে, স্কুল শিক্ষক নিয়োগে যেসংস্থা ওএমআর শিট তৈরি করেছিল সেই একই সংস্থা পৌরকর্মী নিয়োগের ওএমআর শিটের বরাত পেয়েছিল। ফলে একই কোম্পানি শিক্ষক নিয়োগ এবং পৌরকর্মী নিয়োগের ওএমআর শিট তৈরি করার বরাত পেয়েছিল। শীর্ষ আদালতেই সামনে এসেছিল প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ এবং পৌরকর্মী নিয়োগের মধ্যে একটি বড়রকমের যোগসূত্র রয়েছে। মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্ট এই যোগসূত্রের মধ্যে কারা যুক্ত রয়েছেন তাদের দ্রুত খুঁজে বের করতে বলেছে।
 

Comments :0

Login to leave a comment