ভ্রমণ — মুক্তধারা, বর্ষ ৩
পিণ্ডারির পথে...
অভীক চ্যাটার্জী
চার
এবারে আমাদের গন্তব্য ফুরকিয়া, যাকে পিণ্ডারী ট্রেকের শেষ ক্যাম্প বলা যায়। ফুরকিয়ার দূরত্ব দ্বালী থেকে প্রায় পাঁচ কিমি। কিন্তু রাস্তা কঠিন। আমরা সকালে যখন দ্বালী থেকে বেরোলাম ফুরকিয়ার উদ্দেশ্যে, আকাশের অবস্থা খুব ভালো ঠেকলো না। আমরা প্রমাদ গুনলাম, কিন্তু এগিয়ে চললাম। পথ ভরে আছে রডোডেনড্রনে। লাল আভা তার ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে। সেসব পিছনে ফেলে এগিয়ে চললাম আমরা ফুরকিয়ার দিকে। যখন পৌঁছলাম ফুরকিয়া, বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। আমরা কোনোরকমে KMVN ট্রেকারস হাটে ঢুকলাম। বৃষ্টির জোর বাড়ল। এবার ঝড় বৃষ্টির সাথে তুষারপাতও শুরু হলো। আমরা দুজন চুপচাপ ঘরের ভেতর বসে এসব দেখছি। আমার মন বলছে, এ বৃষ্টি থামার নয়। রাত হলো। সারারাত দুর্যোগের তীব্রতা আরও বাড়ল। আমরা রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
পরদিন সকালে অবস্থা আরও খারাপ। চারদিক বরফের চাদরে ঢেকে গেছে। বৃষ্টি এখনো পরে চলেছে। সেই সাথে ঝড়। নন্দন বলল এ ঝড় থামার নয়। চলুন, নেমে যাই। পাহাড়ে গাইডের সাথে তর্ক করতে নেই। আমরা দুজনেই তবুও একবার বোঝানোর চেষ্টা করলাম নন্দনকে। কিন্তু প্রকৃতি আজ বড়ই বিরূপ। আমাদের ফেরার পথই স্থির হলো। কারণ, এর বেশি দেরি করলে, ফেরার পথও বন্ধ হয়ে যাবে। বিফলমনোরথ আমি ও প্রতীক মা নন্দাদেবীর উদ্দেশ্যে প্রণাম করে ফেরার পথ ধরলাম।
ফেরার পথ অনেক সহজ, নিচের পথ। কিন্তু মন যে অপূর্ণ। অপূর্ণ এক স্বপ্ন নিয়ে আমরা নেমে আসতে লাগলাম দ্বালী হয়ে খ্যাতির উদ্দেশ্যে।
এ যাত্রা হয়তো এক ব্যর্থতার গল্প বলে। কিন্তু এই পথের যে অভিজ্ঞতা আমরা সঞ্চয় করেছি, সেটাও কিছু কম পাওয়া নয়। এই পাইনের বন, এই স্রোতস্বিনী নাম না জানা পাহাড়ি নদী আবার আমায় ডাকবে। আর আবার আমি বেরিয়ে পড়ব এক নতুন যাত্রাপথে। এক নতুন ঠিকানায়।
সমাপ্ত
Comments :0