Labour Code

মোদীর কর্পোরেট তোফা

সম্পাদকীয় বিভাগ

গত কয়েকদিন যাবৎ সংবাদপত্রের পাতায়, টিভির পর্দায়, অনলাইন মিডিয়ায় ঢালাও বিজ্ঞাপন, সহাস্য মোদী মুখে আহা কি আনন্দ! শ্রম বাজারের কি বিপুল সংস্কার। শ্রমজীবীর মুক্তির আশ্বাস! বহু চর্চিত মোদীর সেই শ্রম কোড। কিন্তু কী ঘটছে পর্দার অন্তরালে।  দেশজুড়ে রাজপথে কেন শ্রমজীবীদের বিক্ষোভ? দেশ  ধুঁকছে, শ্রমের বাজারে হায়ার অ্যান্ড ফায়ার, স্বল্প মূল্যে শ্রমের কেনাবেচা। কাজের বাজারে হাহাকার। তারমধ্যেই শ্রমিকের সংগঠন, সংগঠিত শ্রমজীবী আন্দোলন রুখতে এই বিজ্ঞাপিত ‘মোদী আনন্দ’র সাধের শ্রম কোড। দেশ এমন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে, যেখানে একদিকে শ্রমকোড নামে দমনের উল্লাস, অন্যদিকে ক্ষোভে উত্তাল রাজপথ।
কেন শ্রমকোডের বিরোধিতায় নেমেছেন শ্রমজীবীরা? কারণ শ্রমকোড প্রথমত শ্রমিকের সংগঠন দমনের অন্যতম ‌আইনি  হাতিয়ার শাসকের। আদৌ ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করা যাবে কিনা তাতেই প্রশ্ন চিহ্ন ঝুলিয়ে দিয়েছে এই কোড। স্বীকৃত ইউনিয়ন পাওয়াও কঠিন হয়ে যাবে এর ফলে। কিভাবে হবে শ্রম বিরোধের নিষ্পত্তি, মজুরির ফয়সালা, কর্মরত মানুষ কিভাবে উথ্থাপন করবেন তাঁদের ন্যায্য দাবি? শ্রমিক ছাঁটাই হবে নির্বিচারে, প্রতিবাদে সংগঠিত হবার রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, এটাঁই বিজ্ঞাপনে মোদীর মুখে শ্রমজীবীর মুক্তির আশ্বাস। 
উল্লাসের আরও বড় কারণ, বিরোধ যদি আরও বড় আকার নেয়, তখন যদি নিরুপায় শ্রমজীবীর ধর্মঘটের পথে যেতে হয়, সেই অধিকারও তো প্রায় বাতিলই করা হয়েছে এই শ্রমকোডে। মালিক কিংবা সরকার যে কেউ  যেকোনো একটা কারণ দেখিয়ে ধর্মঘটকে অবৈধ বলে দিতে পারবে। এই আইনগুলো আসলে ইউনিয়নের কোনও কার্যক্রম চালাতে দেবে না, শ্রমিকদের কোণঠাসা করবে।
শ্রম কোডে ১২ ঘণ্টা কাজের স্পষ্ট বার্তা দিয়ে দিয়েছে। একেই ঢাকঢোল পিটিয়ে শ্রমিকের ‘মুক্তির আস্বাদ’ সরকারি বিজ্ঞাপনে। শ্রমিকের অধিকার খর্ব করে  শ্রমকোড আসলে কর্পোরেটের মুনাফা বাড়ানোর  আইনি রক্ষাকবচও বটে। চুক্তিভিত্তিক কর্মীর কাজের নিরপত্তা বলে কিছু থাকবে কি?  না নোটিস, না ক্ষতিপূরণ, যেকোন সময় কাজে পূর্ণচ্ছেদ। ইএসআই, পিএফ, গ্র্যাচুইটি ? কোন কিছুরই নিশ্চয়তা থাকছে না। অসংগঠিত শ্রমিকদের জন্য কোনও স্কিম বা ফান্ড সেই ‌অর্থে থাকবে না। পিএফ দেওয়া আর না দেওয়া এরপর শুধু মালিকের ইচ্ছাধীন, এমন বহু রাস্তাই সযত্নে রক্ষিত শ্রমকেডে। সেখানে শ্রমজীবীর সামাজিক সুরক্ষা শুধু কথার কথাই থেকে যাবে, সোনার পাথর বাটির মতো।
কর্পোরেটকে তাফা দেবার এমন সুবন্দোবস্তের আরেক নামই এখন শ্রমকোড। বিজ্ঞাপনে মোদীর উল্লাসের কারণও এখানে। বলাই বাহুল্য, শ্রমজীবীর উন্মুক্ত ক্ষোভ, সংগঠিত প্রতিবাদের মূল প্রতিপাদ্যও এখানেই। 
বিভাজন বিদ্বেষের রাজনীতি যখন আন্ধকারের দিকে নিয়ে যেতে চাইছে, তখন তার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে রুজি-রুটির লড়াইকে আরও জোরালো করে তোলার শপথ নিচ্ছেন শ্রমিক, কৃষক, খেতমজুর, কর্মচারী থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রের মেহনতি মানুষ। কেন্দ্র ও রাজ্যের শাসকদলের প্রতি তাঁদের কড়া হুঁশিয়ারি কর্পোরেট-পুঁজিপতিদের স্বার্থে দেশবিরোধী, মেহনতি মানুষের স্বার্থবিরোধী পদক্ষেপ বন্ধ না করলে এবার আরও বড় প্রতিরোধের মুখে পড়তে হবে সরকারকে। কারণ এই লড়াই শুধু একটা আইনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর লড়াই নয়। এই লড়াইয়ের সঙ্গে জড়িয়ে আছে শ্রম ক্ষেত্রের ভবিষ্যৎ , দেশের ভবিষ্যৎ। এই লড়াই দেশ বাঁচানোরও লড়াই। এই লড়াই একই সঙ্গে বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে শ্রমজীবীর ঐক্যের লড়াইয়েরও প্রতীক।

Comments :0

Login to leave a comment