Gavaskar Gambhir

প্রাক্তনদের সমালোচনার মুখে গম্ভীর অন্য সুর গাভাসকারের

খেলা

দক্ষিণ ‌আফ্রিকার বিপক্ষে হারের পর দেশ জুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। ভারতীয় দলের ক্রিকেটারদের থেকেও বেশি সমালোচিত হচ্ছেন কোচ গৌতম গম্ভীর। সাংবাদিক সম্মেলনে তাঁর নিজের সমর্থনে কথা বলার পর থেকে এই সমালোচনা আরও বেড়েছে। সমালোচকদের মধ্যে দেশি-বিদেশি প্রাক্তন ক্রিকেটাররাও রয়েছেন।
প্রাক্তন পেসার ভেঙ্কটেশ প্রসাদ সমাজমাধ্যমে লিখেছেন, ‘পরিবর্তনের কথা বলে এড়ানো যাবে না। সুদর্শন, জুরেল আর রেড্ডি ছাড়া সকলের ৭-৮ বছর কাটিয়ে ফেলেছে দলে। অনেকেই অভিজ্ঞ। এটা আসলে অজস্র কৌশলগত ভুলের ফল। ভুল থেকে শিক্ষা নেয়নি, উলটে বেশি অল রাউন্ডারদের খেলিয়েছে। বিষয়টি বিরক্তিকর।’
সংক্ষিপ্ত বক্তব্য প্রাক্তন প্রোটিয়া ক্রিকেটার হার্সেল গিবসের। তিনি বলেছেন, ‘আইপিএল কমিয়ে বেশি করে টেস্ট খেলা উচিত।’
দীনেশ কার্তিক সমাজমাধ্যমে ছাড়া এক ভিডিওয় বলেছেন, ‘আগে দলগুলো ভারতে আসতে ভয় পেত। এবার তারা ঠোঁট চাটবে। শেষ তিনটে সিরিজে মধ্যে দু’টো সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে ভারত। তাও আবার বারো মাসের মধ্যে। অতিরিক্ত অল রাউন্ডার ক্রিকেটার নেওয়া হয়েছে। পছন্দের অল রাউন্ডার, পেস অলরাউন্ডার নীতীশ রেড্ডি গোটা ঘরোয়া মরশুমে ১৪ ওভার বল করেছে।’ এরপর তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘কোথায় তিন নম্বর ব্যাটার? কতটা সুযোগ সে পায় দলে স্থির হওয়ার জন্য? ওয়াশিংটন সুন্দর কলকাতায় তিন নম্বরে নামল, গুয়াহাটিতে নামল সাই সুদর্শন। এইযে দল থেকে বাদ দেওয়া আর বারবার পরিবর্তন এটা কি দলে প্রভাব ফেলছে না? এর উত্তর কি?’
কিংবদন্তি লেগ স্পিনার অনিল কুম্বলে একসময় ভারতের কোচ ছিলেন। তিনিও একই রকম কথা বলেছেন। কুম্বলে বলেন, ‘টেস্ট ম্যাচে অন্যরকম মানসিকতা লাগে। এত জন অল রাউন্ডার লাগে না। এতবার বাদ দেওয়া আর বদল, ব্যাটিং অর্ডারে বদল। প্রতিটা মুহূর্তে দলে নতুন ক্রিকেটার আসছে, কিছু বাদ যাচ্ছে। আমার মনে হয় বসে চিন্তা করা উচিত। এই ফলাফল ভোলা যাবে না। ভারতের টেস্ট ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সবার আগে আলোচনা করতে হবে কি করা উচিত। গত ৬-৮ মাসে অনেক বড় ক্রিকেটাররা অবসর নিয়েছেন। কি ঘটেছে সেই বিষয়ে একটা দৃষ্টিভঙ্গি থাকা উচিত। কথা বলা উচিত দলের সঙ্গে।’
আরেক প্রাক্তন ক্রিকেটার মহম্মদ কাইফ বলেছেন, ‘ভারতের নতুন করে ভাবা উচিত ঘরের মাঠে কিভাবে টেস্ট খেলা উচিত তাই নিয়ে। সম্পূর্ণ হতাশাজনক এই পারফরম্যান্স। স্থির নয় কিছুই। দৃষ্টিভঙ্গি নেই, পরিকল্পনা নেই। খুব বেশি বাদ দেওয়া আর বদল চলছে। আমরা ঘরোয়া ক্রিকেটে সবুজ উইকেটে খেলেও স্পিনের পিচে টেস্ট খেলেছি। কিছু ব্যাটারের টেস্ট খেলার মানসিকতা থাকে। ভারের টেস্ট পরিকল্পনা নিয়ে ভাবা উচিত।’
একই সুর প্রাক্তন ইংল্যান্ড অধিনায়ক মাইকেল ভনেরও। তিনি বলেছেন, ‘টেস্টে সবথেকে খারাপ খেলা দল এই মুহূর্তে ভারত।’
গতবছরেই অবসর নিয়েছেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। তিনি একটু অন্যরকম কথা বলেছেন, ‘কোনও ক্রিকেটার কিন্তু এগিয়ে এসে বলছে না যে কোচই আসল সমস্যা। তারা এও বলছে না যে সিদ্ধান্তটা একাই নিয়েছে। নিঃসন্দেহে সিদ্ধান্ত সবসময়েই  ভালো নিতে হয়। কিন্তু আমি কোনও ব্যক্তিকে আক্রমণ করার পক্ষপাতী নই। কারণ এটাই সবসময় করা হয়।’
সৌরভ গাঙ্গুলি অবশ্য আশাবাদী। তিনি বলেছেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকা ভালো দল। ভারতের ক্রিকেটাররা তরুণ। পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। ওরা আগামী দিনে ভালো খেলবে।’
সুনীল গাভাসকার অবশ্য গম্ভীরের পক্ষ নিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘ও কোচ। ও দলকে প্রস্তুত করবে। কোচ নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে কথা বলে। মাঠে ক্রিকেটারদের কাজটা করতে হয়। যারা ওকে দায়ী করছে, তাঁদের প্রতি আমার প্রশ্ন তোমরা কি করছিলে যখন ওর কোচিংয়ে ভারত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতল? তখন বলেছিলে ওকে সরানো হোক? তখন কি বলেছিলে যে ওর সঙ্গে চুক্তি বাড়িয়ে সারাজীবন সাদা বলের কোচ করা হোক? যদি তা না বলে থাকো তাহলে দল যখন খারাপ খেলছে তখন কোচকে আক্রমণ করা যায় না।’ তিনি যোগ করেন, ‘ওকে কৃতিত্ব দিচ্ছ না। যদি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি আর এশিয়া কাপ জয়ের কৃতিত্ব দিতে প্রস্তুত না থাকো, তাহলে দয়া করে বলো কেন দল ২২ গজে গিয়ে ভালো খেলছে না বলে ওকে দায়ী করছ।’
এরপর গাভাসকার জানান রোহিত শর্মা আর বিরাট কোহলি থাকলেই যে সাফল্য আসত, এমনটা তিনি মনে করেন না। তিনি বলেন, ‘অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত ওদের। হয়তো ভবিষ্যতে ওদের বলা হবে ভেবে দেখতে। তবে এখানে থাকলেই যে ভারত জিতল, এমনটা আমি মনে করি না। ওরা থাকতেও নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে হারত হয়েছিল। কি ফলাফল হয়েছিল? ০-৩, তাই না? তারপরে অস্ট্রেলিয়ায় কি হলো? আমাদের এমন ভাবা উচিত নয়। আমরা ভাবিও না যে ওদের কে অবসরের দিকে আমরাই ঠেলে দিয়েছি কিনা। এভাবে দেখাটাই ভুল।’

Comments :0

Login to leave a comment