সরকারি নথিতে 'মৃত' ঘোষণা হওয়ায় চরম দুর্ভোগের শিকার বানারহাটের এক গৃহবধূ। জীবিত থাকা সত্ত্বেও 'মৃত' হিসেবে চিহ্নিত হওয়ায় তাঁর সমস্ত সরকারি পরিষেবা বন্ধ হয়ে গেছে। গত ছ’মাস ধরে বন্ধ লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের সুবিধা, এবার বাতিল হয়েছে আধার কার্ড ও রেশন পরিষেবাও। জীবন্ত প্রমাণ দিতে বারবার সরকারি দপ্তরে ঘুরেও কাজ না হওয়ায় অবশেষে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন ওই মহিলা। ঘটনাটি সামনে আসতেই এলাকায় চাঞ্চল্য ও তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে বানারহাট ব্লকের সাঁকোয়াঝোরা-১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান পাড়া এলাকায়। অভিযোগকারী গৃহবধূর নাম শম্পা রায়। তিনি জানান, "আমার স্বামী বাইরে থাকেন। শ্বশুরমশাইয়ের মৃত্যুর পর তাঁর মৃত্যুসনদের জন্য আমি আবেদন করেছিলাম। শ্বশুরের সার্টিফিকেটও পেয়ে গেছি। কিন্তু কীভাবে আমার নাম জন্ম-মৃত্যু পোর্টালে মৃত্যুর তালিকায় উঠল, বুঝে উঠতে পারছি না!" তিনি আরও জানান, প্রায় ছ'মাস আগে লক্ষ্মীর ভান্ডার বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর সম্প্রতি আধার ও রেশন পরিষেবাও বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তিনি চরম সংকটে পড়েছেন।
বানারহাটের বিডিও নিরঞ্জন বর্মন এই ভুল স্বীকার করে নিয়েছেন। তিনি বলেন, "ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। ভুলবশত ওই মহিলার শ্বশুরের মৃত্যুসনদে তাঁর আধার নম্বর যুক্ত হয়ে গিয়েছিল, যার ফলে এই সমস্যা তৈরি হয়েছে। ইতিমধ্যেই ওই মহিলার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। আশা করছি খুব দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে।" বিডিও আরও জানিয়েছেন যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সরকারি আধিকারিকদের এমন গাফিলতির ফলে এক জীবিত মানুষ তাঁর প্রাপ্য পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হওয়ায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে এলাকাবাসীর মধ্যে। এই প্রসঙ্গে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে
সিপিআই(এম) জলপাইগুড়ি জেলা কমিটির সদস্য মুকুলেশ রায় সরকার বলেন, "এই ঘটনা প্রমাণ করে সাধারণ মানুষের প্রতি রাজ্য প্রশাসনের চূড়ান্ত উদাসীনতা ও অসংবেদনশীলতা। সামান্য একটি ভুল প্রশাসনিক কর্মীদের অদক্ষতা ও নজরদারির অভাবকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। লক্ষ্মীর ভান্ডার, আধার বা রেশন পরিষেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এক গৃহবধূ জীবনধারণের সংকটে পড়েছেন। দিনের পর দিন সরকারি দপ্তরে ঘুরেও তাঁর সমস্যার সমাধান হয়নি। শুধুমাত্র 'ভুলবশত' বলে দায় এড়ানো যায় না। আমরা দাবি জানাচ্ছি, অবিলম্বে শম্পা রায়কে জীবিত প্রমাণ করে তাঁর সমস্ত পরিষেবা চালু করা হোক এবং এই চরম গাফিলতির জন্য দায়ী আধিকারিকদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হোক। প্রশাসনিক এই ভুলের দায় শেষ পর্যন্ত সরকারকেই নিতে হবে এবং ক্ষতিগ্রস্ত মহিলার উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।" সিপিআই(এম) অবিলম্বে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের দাবি জানিয়েছে এবং প্রশাসনের সদিচ্ছা না থাকলে বৃহত্তর আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
Banarhat
প্রশাসনের উদাসীনতা, নিজেকে জীবন্ত প্রমাণ দিতে দপ্তরে দপ্তরে বানারহাটের গৃহবধূ

×
Comments :0