শ্যামল কুমার মিত্র
অতিক্রান্ত ১১ বছরে মোদী সরকারের ভ্রান্ত বিদেশ নীতির কারণে বিশ্বে নির্জোট দেশগুলির নেতৃত্বে থাকা ভারত আজ আক্ষরিক অর্থে, গোটা বিশ্বে বন্ধুহীন। প্রতিবেশী ৭টি দেশের সঙ্গে অতীতের উষ্ণ সম্পর্কের পরিবর্তে ভারতের সম্পর্ক বৈরিতার। যেহেতু প্রতিবেশী পরিবর্তন করা যায় না, তাই প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা দেশের স্বার্থেই জরুরি। যে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে ভারতের কমবেশি বন্ধুত্বের সম্পর্ক এখনো টিকে আছে, তার নাম ভুটান। মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য এই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। অবিলম্বে ভারত সরকার প্রকাশ্যে বলুক, ‘বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্য তাঁর ব্যক্তিগত। ভারত সরকার এ বক্তব্য সমর্থন করে না।’ অবশ্য এ দেশের বিদেশ মন্ত্রকের থিঙ্কট্যাঙ্ক এ হেন পরিণত বোধের পরিচয় রাখতে পারবে বলে মনে হয় না।
দার্জিলিঙের পাহাড়, তরাই অঞ্চল, ভুটানের পাদদেশে অবস্থিত ডুয়ার্স অঞ্চল প্রকৃতিক কারণেই বিপর্যয় প্রবণ এলাকা। পূর্ব হিমালয় পর্বত একটি তরুণ পার্বত্য এলাকা যা ভঙ্গুর বা ফ্রাজাইল। এখনো গঠনগত স্থায়ী আকার পায়নি। পাহাড় সংবলিত ১৭টি রাজ্যের ১৪৭টি জেলার উপগ্রহ চিত্র নির্ভর সমীক্ষা অনুসারে, ভূমিধসের ঝুঁকির মাত্রা অনুযায়ী দেশের প্রথম ৩৫টি জেলার মধ্যে রয়েছে দার্জিলিঙ। ১৯৭০ থেকে ২০১০ — এই ৪০ বছরে হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে ৩০টি অর্থাৎ বছরে গড়ে ০.৭৫টি 'মেঘ ভাঙা বৃষ্টি' নথিভুক্ত হয়েছে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের দাপটে ২০১০ থেকে ২০২০— এই ১০ বছরে এই অঞ্চলে নথিভুক্ত 'মেঘ ভাঙা বৃষ্টি'র সংখ্যা ৮০ অর্থাৎ বছরে গড়ে ৮টি। 'মেঘ ভাঙা বৃষ্টি' ২০১০-২০২০ দশকে পূর্ববর্তী দশকের তুলনায় ১১.৪৩ গুণ বেড়েছে। আগামী দিনে তা আরও অনেকটাই বাড়বে।
পশ্চিমে নেপাল-দার্জিলিঙ সীমান্তের মেচি থেকে শুরু করে পূর্বদিকে বাংলা-অসম সীমানার সঙ্কোশ নদী পর্যন্ত বিস্তৃত তরাই ও ডুয়ার্সে আছে ১২টি নদী, যাদের মধ্যে মহানন্দা, তিস্তা, জলঢাকা, তোর্ষা ও রায়ডাক 'বিগ ফাইভ' নামে পরিচিত। তরাই-ডুয়ার্স অঞ্চলে পশ্চিম থেকে পূর্বদিকে এগলে পড়ে মেচি, বালাসন, লিশ, ঘিশ, মূর্তি, কুর্তি, জরুন্তি, ডায়না, রেতি, সুকৃতি, ডিমা, ডিমডিমা, কালজানির মতো অনেক নদী গোটা পাহাড়ে মাকড়সার জালের মতো ছড়িয়ে আছে। এই সমস্ত নদীর উৎস সিকিম, ভুটান, তিব্বতে যেগুলি পশ্চিমবঙ্গের পাহাড়ি এলাকার অনেক উঁচুতে অবস্থিত। জল স্বাভাবিক নিয়মে উঁচু থেকে নিচের দিকে নামে। ফলে সিকিম, ভুটান, তিব্বতে অতিবৃষ্টি বা 'মেঘ ভাঙা বৃষ্টি' হলে বা বাঁধ, জলাধার, হ্রদ ভেঙে গেলে কিংবা হিমবাহের অস্বাভাবিক গলন কিংবা হিমবাহ ভেঙে গেলে বিপুল পরিমাণ জল ঐ রিভার সিস্টেমের মধ্য দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের পাহাড়ি এলাকায় আসবে, তারপর সমতলে চলে যাবে। জলের এই নিম্নগতি রুদ্ধ করা বাস্তবে অসম্ভব।
সাম্প্রতিক একাধিক ভূমিকম্প ও সিকিমে সাম্প্রতিক অতীতে হ্রদ ভাঙার বিপর্যয়ের পর পাহাড়ের রিভার সিস্টেমের তিস্তা সহ একাধিক নদী গতিপথ পরিবর্তন করেছে। তিস্তানদী অতিরিক্ত ধসপ্রবণ হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে এই গঠনপর্বে থাকা ভঙ্গুর এই পূর্ব হিমালয়ে উন্নয়নের নামে প্রকৃতির বিরুদ্ধে গিয়ে কী কী ঘটিয়েছি আমরা? তরাই-ডুয়ার্স অঞ্চলে সমান্তরালভাবে ২টি রেলপথ তৈরি করা হয়েছে - ১টি সেবক থেকে ডামডিম, ওদলাবাড়ি, মাল হয়ে আলিপুরদুয়ার পর্যন্ত, অন্যটি নিউ জলপাইগুড়ি, ময়নাগুড়ি, ধুপগুড়ি, ফালাকাটা হয়ে এগিয়েছে। তৈরি হয়েছে ২টি ন্যাশনাল হাইওয়ে - ১৭ এবং ৩১৭ নম্বর৷ এই ২টি রেলপথ এবং ২টি সড়কপথ জলের অনর্গল প্রবাহের পথে বড় বাধা। পশ্চিমবঙ্গের সেবক থেকে সিকিমের সিংতাম পর্যন্ত পাহাড় কেটে সুড়ঙ্গ বানিয়ে রেলপথ বানানো হচ্ছে, যার অভিঘাতে পাহাড়ে সংশ্লিষ্ট বিস্তীর্ণ এলাকা আরও ভঙ্গুর হয়ে ধসপ্রবণতা বাড়াচ্ছে। সিকিম থেকে পশ্চিমবঙ্গ পর্যন্ত তৈরি হয়েছে ৩০ টি ড্যাম, অনেক উঁচু উঁচু জলবিদ্যুৎ প্রকল্প।
মিরিক এলাকায় ২০২০ থেকে ২০২৪ এই ৪ বছরে ৭৩ হেক্টর জঙ্গল ধ্বংস হয়েছে। দার্জিলিঙ জেলার গোটা ভৌগোলিক এলাকার মাত্র ৫৩% সবুজ, ৪৭% কংক্রিটের জঙ্গল। রিভার বেড দখল করে, পর্যটন ব্যবসার নামে শ'য়ে শ'য়ে হোম স্টে, হোটেল, রিসর্ট হয়েছে। কর্মসংস্থানের গালভরা গল্পে পাহাড়ি নদীগুলির প্রায় প্রত্যেকটি নদীর খাতে আইনি/বেআইনি বালি, পাথর, ডলোমাইট খাদানের নামে অবৈজ্ঞানিক ও অপরিকল্পিতভাবে খনন করে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহের দফারফা করা হয়েছে। তালিকা আরও দীর্ঘ রয়েছে।
পরিবেশ বিধিকে অমান্য করে, প্রকৃতির স্বাভাবিক সহন ক্ষমতার বাইরে গিয়ে তথাকথিত 'উন্নয়ন' করা হয়েছে, সেই 'উন্নয়ন'-এর 'কো-ল্যাটারাল ড্যামেজ' তো সহ্য করতেই হবে। মজার বিষয় হল, যে কর্পোরেট মুনাফার প্রয়োজনে এই 'তথাকথিত উন্নয়ন', সেই কর্পোরেটদের কেউ, সরকারের মন্ত্রী-আমলা এই 'কো-ল্যাটারাল ড্যামেজ'-এ সামান্যতম ক্ষতিগ্রস্ত নন। সব ক্ষতি, সর্বনাশ, প্রাণহানি যা হয় তা নিতান্তই রামা কৈর্বত্য, রহিম শেখদের। বরং সরকারি ত্রাণ, পুনর্গঠনে বাবুদের হাতে উপরি দু'পয়সা আসে।
এই রুঢ় বাস্তবের উপর দাঁড়িয়ে পাহাড়ের মানুষকে বাঁচাতে সরকারকে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পিত পদক্ষেপ করতে হবে। সরকারের ভূমিকা কি? ২০০০ সালে পাহাড় এলাকার ভূত্বকের দুর্বল গঠন, ধসপ্রবণতা, সম্ভাব্য অতিবৃষ্টির কথা মাথায় রেখে পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকার ভূমি ব্যবহারের যে মানচিত্র এবং বিপর্যয়ের আগে ও পরে করণীয় বিষয়ের একটি গাইডলাইন তৈরি করেছিল, তার ভিত্তিতেই চলতে হবে। ভূমি ব্যবহার মানচিত্রে লেখা হয়েছিল - ১) পাহাড়ে নির্মাণ কাজের ক্ষেত্রে মাটি পরীক্ষা বাধ্যতামূলক৷ ২) সর্বোচ্চ ১১ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত গৃহ/অফিস/বাণিজ্যকেন্দ্র গড়া যাবে। (৩) পাহাড়ি ঝোরার ৫০০ মিটারের মধ্যে কোনও ধরনের নির্মাণ করা যাবে না। (৪) নদী লাগোয়া অঞ্চল এবং নদীর দু’পাড়ের যে এলাকা বাড়তি জলধারণের জন্য প্রয়োজন (রিভার বেড), সেই এলাকায় কোনও নির্মাণ করা যাবে না, কোনও ধরনের প্রতিবন্ধকতা রাখা যাবে না। এই রিভার বেডকে এমনভাবে সুরক্ষিত রাখতে হবে যাতে নদীর বাড়তি জল রিভারবেড ধারণ করতে পারে। (৫) রাস্তায় যে কোনও পণ্য/নির্মাণ সামগ্রীবাহী ট্রাক/গাড়িতে অতিরিক্ত ওজন বহন করা যাবে না। এই সব নির্দেশ সংবলিত সরকারি নথি বাজে কাগজের ঝুড়িতে আজ অবস্থান করছে।
যোশি মঠে ভয়ঙ্কর বিপর্যয়ের পর ২০২৩ সালে পরিবেশ কর্মী বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়, দার্জিলিঙ জেলায় অনুরুপ বিপর্যয়ের আশঙ্কা প্রকাশ করে অবিলম্বে কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করে মুখ্যমন্ত্রী, পরিবেশ ও বন দপ্তরের শীর্ষকর্তা এবং দার্জিলিঙের জেলাশাসককে পৃথক পৃথক চিঠি দেন। কেউ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। কার্শিয়াঙের বিজেপি বিধায়ক বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মা (বিপিবজগাঈ) বলেছেন, "বছরখানেক আগে পাহাড়ের প্রাকৃতিক পরিবেশের করুণ অবস্থা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে চিঠি দিয়েছি। কেন্দ্র কিছুই করেনি। এখন আবার বিপর্যয়ের পর প্রধানমন্ত্রীর নাম নিয়ে ছবি তোলার রাজনীতি চলছে। সেই রাজনীতিতে বিশ্বাসী নই।" অর্থাৎ সব কিছু জেনেও কেন্দ্র বা রাজ্য - কেউ কিচ্ছু করেনি।
বিপর্যয়ের পর জনদরদি সাজার প্রতিযোগিতায় 'বিপর্যয় পর্যটন' বা 'ডিজাস্টার টুরিজিম' চলছে। এ ধরনের বিপর্যয়ে মানুষ এমনভাবে আহত হন যে তাদের উপযুক্ত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন হাসপাতালে 'ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট বেড' এবং 'ট্রমা কেয়ার সেন্টার'৷ এখন উত্তরবঙ্গে ৫টি (উত্তরবঙ্গ, রায়গঞ্জ, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, মালদহ) মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং ২টি (দার্জিলিঙ, কালিম্পঙ) জেলা হাসপাতাল রয়েছে। কিন্তু বড়সড় বিপর্যয় পথ দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসা দেওয়ার মতো ১টিও 'ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট বেড' নেই। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আছে ১টি মাত্র 'ট্রমা কেয়ার ইউনিট', যার বেডসংখ্যা মাত্র ২০। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীই স্বাস্থ্য মন্ত্রী। ফলে মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। আজও পাহাড় থেকে গুরুতর আহতদের 'এয়ার লিফট' করে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসার মতো উপযুক্ত পরিকাঠামো, হেলিপ্যাড নেই পাহাড়ে।
সাম্প্রতিক বিপর্যয়ের অন্তত ৭ দিন আগে থেকে লাগাতার আবহাওয়া দপ্তর পাহাড়ে অতি বৃষ্টির আগাম সতর্কবার্তা জারি করেছিল। জিএসআই ঘটনার অন্তত ৪৮ ঘণ্টা আগে জায়গা ধরে ধরে ভূমিধসের পূর্বাভাস দিয়েছিল। এত আগে সুনার্দিষ্ট আগাম পূর্বাভাসের পরেও স্থানীয় প্রশাসন নদীর পার থেকে মানুষজনকে সরিয়ে নেওয়া, ধসপ্রবণ এবং ধসের পূর্বাভাস যুক্ত এলাকাগুলি থেকে মানুষজনকে সরিয়ে আনা, প্রয়োজনীয় নথি, টাকাপয়সা, গয়নাগাঁটি, বইপত্র সহ অতি প্রয়োজনীয় জিনিষগুলি গুছিয়ে এক জায়গায় রাখার মতো সতর্কবার্তা বা সরকারি ব্যবস্থাপনায় সেগুলি নিরাপদ সরকারি হেপাজতে সরিয়ে নেওয়া, যে কোনও সময় বিপর্যয় ঘটার সম্ভাবনার প্রচার— এই সব ন্যূনতম প্রশাসনিক কাজগুলো স্থানীয় প্রশাসন করেনি। সমস্ত কর্মী, অফিসারদের ছুটি বাতিল করে প্রশাসনকে সম্ভাব্য বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত রাখেনি। এই কাজগুলা হলে নিশ্চিতভাবেই হতাহতের সংখ্যা এবং ক্ষতির পরিমাণ অনেকটাই কম হতো।
মানুষ রাতের বেলায় যখন নিদ্রামগ্ন, তখন প্রকৃতির ভয়াবহ রোষের মুখে অসহায় আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়েছে। এটা অপরাধ নয়? প্রশাসনের শীর্ষকর্তারা কলকাতায় মাননীয়ার সঙ্গে ফেস্টিভ মুডে ছিলেন, স্থানীয় প্রশাসন অপেক্ষায় ছিলেন কখন মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ আসে। পাহাড়ে যখন মানুষ মরছে, মাননীয়া তখন রেডরোডের কার্নিভালে টালিগঞ্জের কিছু তৃণভোজী সেলিব্রিটিদের সঙ্গে নাচাগানায় ব্যস্ত। থানার ওসি থেকে ডিজি/কমিশনার, বিডিও থেকে মুখ্যসচিব - প্রশাসনিক পিরামিডের এই প্রত্যেকটি স্তরে দায়িত্ব, কর্তব্য ও দায়বদ্ধতা নির্দিষ্ট করে দেওয়া। কোনও স্তরে কেউ দায়িত্ব, কর্তব্যে অবহেলা করলে তা দেখার দায়িত্বও স্তর অনুসারে ভাগ করে দেওয়া আছে। পুলিশ ও সাধারণ প্রশাসনে স্থানীয় প্রশাসনের প্রয়োজন ভিত্তিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা থাকা দরকার, প্রশাসনের সাবলীল গতিশীলতা ও জনমুখীনতার প্রয়োজনে।
দুর্ভাগ্য নিজেকে 'এক এবং একমাত্র ক্ষমতাকেন্দ্র' হিসাবে প্রতিষ্ঠা দেওয়ার, ব্যক্তি ইমেজ তৈরির লক্ষ্যে মাননীয়া এই বহু পরীক্ষিত প্রশাসনিক পিরামিডটা ধ্বংস করেছেন। ফলে সর্বক্ষেত্রে প্রশাসনের সর্বস্তর নিজেরা কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না, অপেক্ষা করে থাকতে হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের জন্য৷। ঠিক এই কারণেই বিপর্যয়ের আগাম সতর্কতার পরেও পাহাড়ে স্থানীয় প্রশাসন হাত গুটিয়ে বসেছিল, আর যে মানুষগুলির প্রাণ বাঁচানো যেত, যে সম্পত্তি ধ্বংস আটকানো যেত, তাও করতে পারেনি স্থানীয় প্রশাসন। প্রশাসনের এই মমতা সর্বস্বতা জনবিরোধী।
সর্বনাশ যা হওয়ার তা হয়েছে, ভবিষ্যতে পাহাড়ের মানুষকে বাঁচাতে অবিলম্বে ২০০০ সালের নির্দেশিকা অক্ষরে অক্ষরে কার্যকর করতে হবে। নদীখাতগুলির অতীত নাব্যতা ফিরিয়ে দিয়ে জলের অনর্গল প্রবাহের পথ করে দিতে হবে। রিভারবেডগুলি জবরদখল মুক্ত করে বাড়তি জলধারণের জন্য রিভারবেডকে উপযুক্ত করে তুলতে হবে। সর্বোপরি স্থানীয় প্রশাসনকে এই ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলায় পেশাদারি পারদর্শিতা এবং স্থানীয় স্তরে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার দিতে হবে। অন্যথায় পাহাড়ে আরও বড় বিপর্যয় শুধু সময়ের অপেক্ষা।
'উন্নয়ন' তো মানুষের জন্য, কিন্তু 'উন্নয়ন'এর নামে 'কর্পোরেট মুনাফা' নিশ্চিত করার 'স্বআরোপিত দায়বদ্ধতা'কে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে সরকার প্রকৃতি ধ্বংস করবে, আর প্রাণ ও সম্পত্তির মূল্যে মানুষ 'কো ল্যাটারাল ড্যামেজ'এ সর্বস্বান্ত হবেন -এমনটা চলতে পারে না। 'ডিজাস্টার টুরিজ্যিম' এ সংবাদ মাধ্যমে উঠে আসার প্রতিযোগিতার বদলে রাজনীতিকরা প্রকৃতি, পরিবেশ অক্ষুণ্ণ রেখে ভারসাম্যের উন্নয়নের দাবিতে, আরও কত মানুষ মরার পর সোচ্চার হবেন? আদৌ কোনোদিন হবেন কি?
Comments :0