Adani Modi

প্রকল্পের মূল্যায়নে আদানির লোক বসিয়ে প্রশ্নের মুখে মোদী

জাতীয়

Adani Confident in Assessment Panel Modi Under Scanner

কেন্দ্রের পরিকাঠামো প্রকল্পের বরাত নিশ্চিত করতে মোদী ঘনিষ্ঠ আদানির লোককে প্রকল্পের মূল্যায়ন কমিটির সদস্য করা হয়েছে। আদানির মোট ৬টি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প মোট বিনিয়োগ হবে ১৫ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা। কেন্দ্রের মূল্যায়ন কমিটিতে আদানির নিজস্ব লোক রেখে নিশ্চিত করা হচ্ছে এই প্রকল্পের বরাত। আদানি গ্রিন এনার্জি লিমিটেড (এজেল)’র মূল উপদেষ্টা জনার্দন চৌধুরিকে সেপ্টেম্বর মাসেই পরিবেশ মন্ত্রক নিযুক্ত করেছে জলবিদ্যুৎ ও নদী উপত্যকা প্রকল্পগুলির মূল্যায়ন কমিটিতে। নতুন করে এই কমিটি বানিয়ে অ-প্রাতিষ্ঠানিক সাত সদস্যের মধ্যে জায়গা করে দেওবা হয় জনার্দনকে। মোদী ঘনিষ্ঠ আদানির সরকারি প্রকল্পে এই খুল্লাম খুল্লা স্বার্থের সংঘাতের ঘটনা মঙ্গলবার এক সর্বভারতীয় দৈনিকে ফাঁস হওয়ায় শোরগোল পড়ে গেছে। বিরোধীদের মন্তব্য, আদানির প্রধান সেবক (মোদী) আদানির কর্মচারীকে পরিবেশ মন্ত্রকের বিশেষজ্ঞ মূল্যায়ন কমিটির সদস্য নিয়োগ করে ৬টি আদানি প্রকল্পকে অনুমোদন করিয়েছে। এটাই কি মোদী সরকারের সহজ ব্যবসার উদাহরণ!
ওই দৈনিক পত্রিকায় মোদী ঘনিষ্ঠের নিয়োগ ও বরাত অনুমোদনের এই খবর প্রকাশ হয়েছে। বিরোধীরা এঘটনার তীব্র সমালোচনা করেছেন। তারা জানান, মোদীর ঘনিষ্ঠ আদানির লোকজনকে সরকারি প্রশাসনে নিয়োগ করে  তারা যে বরাত অনুমোদন করাচ্ছে এঘটনা তার প্রমাণ। সরকারি প্রকল্পের বরাত নিয়ে দুর্নীতির এটি জ্বলন্ত উদাহরণ। 
আদানি গোষ্ঠীর বিদ্যুৎ উৎপাদন সংস্থা আদানি গ্রিন এনার্জি লিমিটেড সংস্থার সম্প্রতি পরামর্শ দাতা নিয়োগ হয়েছেন জনার্দন চৌধুরি। তিনি আগে ২০২০ সালে এনএইচপিসি থেকে অবসর গ্রহণের পর তাকে ২০২২সালে আদানি গ্রিন সংস্থায় জলবিদ্যুৎ বিষয়ে পরামর্শদাতা হিসাবে নিয়োগ হন।  এদিকে আদানি গ্রিনের পরামর্শদাতা চৌধুরিকে  গত ২৭ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রের পরিবেশ মন্ত্রক তাদের জলবিদ্যুৎ প্রকল্প  বিশেষজ্ঞ মূল্যায়ন কমিটি বা এক্সপার্ট অ্যাপরাইজাল কমিটির সদস্য হিসাবে নিয়োগ করে। চৌধুরি সহ কোনও প্রতিষ্ঠানে যুক্ত নন এই রকম সাত জনকে নয়া কমিটিতে নিয়োগ করা হয়েছে। এই নতুন কমিটি গঠনের পরে ১৭-১৮ অক্টোবর হয়েছে কমিটির প্রথম বৈঠক। মুলত কেন্দ্র যে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প এবং রিভার ভ্যালি প্রকল্প বেসরকারি হাতে তুলে দিতে চাইছে তা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়। বিশেষজ্ঞ কমিটির এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আদানি গ্রিন এনার্জির পরামর্শদাতা চৌধুরি। এই বৈঠকে মহারাষ্টের সাতারার ১৫০০মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ প্রকল্প আদানির হাতে তুলে দেওয়ার কথা বিবেচনা করা হয়েছে। আদানি গোষ্ঠীএই প্রকল্প সরকারের যেসব শর্ত দিয়েছে তা সংশোধনের দাবি জানায়। তা মেনেও নিয়েছে কমিটি। এদিকে কেন্দ্রের যে বিশেষজ্ঞ কমিটি আদানি গ্রিন এনার্জিকে এই প্রকল্প দেওয়ার কথা বিবেচনা করেছে সেই কমিটিতে গ্রিন এনার্জির পরামর্শদাতা চৌধুরি থাকেন কিভাবে তা নিয়ে  প্রশ্ন উঠেছে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস তার প্রতিবেদনে জানিয়েছে, আদানির গ্রিন এনার্জির পরামর্শদাতা চোধুরিকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমি বৈঠকে উপস্থিত ছিলাম, তবে সাতারার জলবিদ্যুৎ প্রকল্প এবং  গ্রিন এনার্জি নিয়ে যখন আলোচনা হয় তাতে আমি অংশ গ্রহণ করিনি। আমি বিরত ছিলাম। তাকে জানানো হয় বৈঠকের মিনিটসে কিন্তু আপনার বিরত থাকার কথা লেখা নেই। তিনি বলেন, আমরা মিনিটস সংশোধন করে নেব। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে এই প্রকল্পে বিশেষজ্ঞ কমিটি আদানির গ্রিন এনার্জিকে  দেওয়ার কথা বিবেচনা করায় এই প্রকল্পে কেন্দ্রের সবুজ সঙ্কেত পাকা হয়ে গেল। প্রসঙ্গত পরিবেশ সংরক্ষন আইন অনুসারে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে পরিবেশ দপ্তরের ছাড়পত্র বাধ্যতামূলক। বিশেষজ্ঞ কমিটি এতে অনুমোদন দেওয়ায় পরিবেশ দপ্তরের ছাড়পত্র মিলে যায় ।
এদিকে আদানির পরামর্শ দাতা নিয়ে তৈরি বিশেষজ্ঞ কমিটির হাতে আরও যে প্রকল্পগুলি রয়েছে তা হলো, অন্ধ্র প্রদেশের রাইওয়াদা ( ৮৫০ মেগাওয়াট) ও পেডাকোটা (১ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট) জলবিদ্যুৎ প্রকল্প, মহারাষ্ট্রের পাটগাঁও (২ হাজার ৪৫০ মেগাওয়াট), কয়না –নিভাকোনে ( ১ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট), মালসেজঘাট (১ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট), তারালি (১ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট)। এই সব প্রকল্পও আদানির হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলে খবর। এদিকে আদানির পরামর্শদাতা বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্য হিসাবে আদানির প্রকল্প নিয়ে আলোচনায় বিরত থাকলেও ‌আদানি বিরোধী সংস্থার বিরুদ্ধে আপত্তি জানানো সুযোগ থাকে। ফলে কমিটিতে আদানি গোষ্ঠীর সদস্যের উপস্থিতিতে স্বার্থের সংঘাত কাজ করছে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। 
এদিকে কেন্দ্রীয় প্রকল্পে কেন্দ্রের বিশেষজ্ঞ কমিটিতে মোদী ঘনিষ্ঠ আদানির লোক নিয়োগ সরব হয়েছেন বিরোধীরা। তারা বলছেন, কেন্দ্র মনে করে যেহেতু আদানির লোক কমিটিতে নিয়োগ হয়েছে তাকে কখনো স্বার্থের সংঘাত বলা যাবে না। যেমন আদানির শেয়ার বাজারে জালিয়াতি নিয়ে সব তথ্য ফাঁস হয়ে গেলে সংসদে যারা তাতে সরব হচ্ছেন তাদের সদস্যপদ বাতিলের দাবি করছে বিজেপি। এই আদানির লোক কমিটিতে নিয়োগ মুখ খুললেও তাতে  বিজেপি বলতে শুরু করবে এটা স্বার্থের সংঘাত নয়। এটা বন্ধুর ব্যবসা সহজ করে দেওয়া। তাতে স্বার্থের সংঘাত কেন হবে ? কংগ্রেস  জানিয়েছে, ‘আদানির প্রধান সেবক (মোদী) আদানি কর্মচারী জনার্দন চৌধুরিকে পরিবেশ মন্ত্রকের বিশেষজ্ঞ মূল্যায়ন কমিটির সদস্য হিসাবে নিয়োগ করেছেন। সেই কমিটি আদানির ৬টি প্রকল্প (১০ হাজার৩০০ মেগাওয়াট) অনুমোদন করতে চলেছে। ইতিমধ্যে সাতারার ১ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে। এটা কি মোদীর সহজ ব্যবসা নীতি? শিবসেনা (ইউবিটি) নেতা প্রিয়াংঙ্কা চতুর্বদী এপ্রসঙ্গে বলেন, দয়া করে একে স্বার্থের সংঘাতের উদাহরণ বলবেন না. মোদীর জমানায় বলা হচ্ছে বন্ধুর জন্য সরকারি সুযোগ পাইয়ে দেওয়া হলে তা স্বার্থের সংঘাত হতে পারে না।  তাঁর প্রশ্ন, কি করে একজন ব্যক্তি বেসরকারি সংস্থার কর্মচারী হয়ে আবার সরকারি সংস্থার বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্য নিয়োগ হতে পারে? তিনি বলেন, কারা কি উদ্দেশ্যে এই নিয়োগ করলো কেন করলো তা নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও এতে  কোন তদন্ত হবে না। মোদীর বন্ধুর জন্য পরিবেশ মন্ত্রক তার কর্মচারীকে নিয়োগ করেছে। তাতে কোনও স্বার্থের সংঘাত থাকতে পারে না!

Comments :0

Login to leave a comment