Teacher Recruitment Case

পার্থ সহ ৭জনই ফের জেলে

রাজ্য

Teacher Recruitment Case

নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে মুখে কুলুপ, কীভাবে টাকার বিনিময়ে অযোগ্যদের চাকরি দেওয়া হলো, ঘনিষ্ঠ বান্ধবীর বাড়িতে উদ্ধার হওয়া নগদ প্রায় ৫০ কোটি টাকা কি তাঁরই, সেসব প্রশ্নে নীরব থাকলেও জেল হেপাজতে থাকা প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জি এদিন সাংবাদিকদের কাছে রীতিমত ভবিষ্যৎবাণী করে জানিয়ে দিলেন পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলই জিতবে!
জেল হেপাজতের মেয়াদ শেষের পরে সোমবারই তাঁকে আলিপুর আদালতে তোলা হয়। 

 

আদালতে ঢোকার মুখেই সাংবাদিকরা তাঁকে প্রশ্ন করেছিলেন, পঞ্চায়েত ভোটে কী হবে, কে জিতবে? পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন- ‘তৃণমূল, তৃণমূল’!
খাতায় কলমে পার্থ চ্যাটার্জি তৃণমূল থেকে ‘সাসপেন্ড’। খোদ অভিষেক ব্যানার্জি সাংবাদিক বৈঠক করে তা জানিয়েছিলেন। যদিও পার্থ চ্যাটার্জি কি আদৌ দল থেকে সাসপেন্ড হয়েছেন  নাকি তা স্রেফ মিডিয়ার কাছে ঘোষণা মাত্র? আরাবুল ইসলাম, কুণাল ঘোষের মতো পার্থ চ্যাটার্জিও কি জেল থেকে ফিরে ফের মমতা ব্যানার্জির ঘনিষ্ঠ বৃত্তে ঢুকে পড়বেন? পার্থ চ্যাটার্জির সাসপেনশন লেটার বলে আদৌ কোনও বস্তু কি তৃণমূলের কাছে আছে? এমন প্রশ্নই এর আগে উঠেছিল গেল ইডি’র বিশেষ আদালতে বিচারকের প্রশ্নে। 

 

গত ২৮ সেপ্টেম্বর বিচারক পার্থ চ্যাটার্জির আইনজীবীদের বলেনতিনি দল থেকে সাসপেন্ড? তাহলে সেই সাপেনশনের চিঠি কোথায়? দেখান’। তা আজও আদালতে দেখাতে পারেননি আইনজীবীরা। পার্থ চ্যাটার্জিও তৃণমূলই ভোটে জিতবে বলে দাবি করে ফের তৃণমূলে হারানো পদ ফিরে পাওয়ারও ইঙ্গিত দিয়ে রাখলেন বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।

 

 


সোমবার দীর্ঘ সওয়াল, জবাব শেষে এসএসসি নিয়োগ কাণ্ডে পার্থ চ্যাটার্জি, সুবীরেশ ভট্টাচার্য সহ সাতজনেরই জামিনের আবেদন ফের খারিজ করে দিল আদালত। তাঁকে ফের ১৪দিনের জেল হেপাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।
সিবিআই’র তরফে এর আগে দায়ের করা চার্জশিটে পার্থ চ্যাটার্জিকেই গোটা কাণ্ডে মূল চক্রী হিসাবেই দেখানো হয়েছিল। নিয়োগ পদ্ধতিতে দুর্নীতি রয়েছে, টাকার বিনিময়ে অযোগ্যদের চাকরি দেওয়া হয়েছে- তা সবটাই মন্ত্রী হিসাবে পার্থ চ্যাটার্জি শুধু জানতেন নয়, সেই প্রক্রিয়ায় সরাসরি যুক্তও ছিলেন। এর আগে গত ১৪ নভেম্বর শুনানির সময়েও সিবিআই আদালতে জানায়- গ্রুপ সি’তে নিয়োগের ক্ষেত্রে শূন্য পদের থেকেও বেশিজনকে নিয়োগ করা হয়েছিল। তা কেবলমাত্র টাকার বিনিময়েই। পার্থ চ্যাটার্জির মন্ত্রী থাকাকালীন এই দুর্নীতি হয়েছে। এদিনও একই সুরে সিবিআইয়ের তরফে আদালতে পার্থ চ্যাটার্জির জামিনের প্রবল বিরোধিতা করে বলা হয়, তদন্তের এই পরিস্থিতিতে যদি পার্থ চ্যাটার্জির মতো প্রভাবশালীরা জামিন পায় তবে গুরুতর ক্ষতি হবে। উনি যা করেছে তা সামজের পক্ষে খুবই খারাপ দৃষ্টান্ত। গ্রুপ-সি পদে অযোগ্যদের টাকার বিনিময়ে স্কুলে স্কুলে ঢোকানো হয়েছে। একটা প্রজন্মকে নষ্ট করা হয়েছে, সমাজে পরিচিতি আছে এমন ব্যক্তিদের এমন কাজ খুবই প্রভাব ফেলে সমাজে।

 

 


যদিও এদিন এজলাসে সওয়াল পর্বে বিচারক সিবিআইয়ের তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়েও উষ্মা প্রকাশ করেছেন। বিচারক এদিন সওয়াল পর্বে সিবিআই’র আইনজীবীকে থামিয়েই বিচারক বলেন, আপনাদের তদন্তের অগ্রগতি কত দূর, শুধু ষড়যন্ত্র বা তথ্য প্রমান নষ্ট হবে এই আশঙ্কা দেখিয়ে তো জেলে আটকে রাখা যায় না। সিবিআই’র তরফে তখন বলা হয় হাইকোর্টের নির্দেশেই তদন্ত চলছে, ইতিমধ্যে তদন্তের অগ্রগতি আদালতে জানানো হয়েছে। সময় লাগছে। এই দুর্নীতির পরিধি অনেকটাই। ধৃত ব্যক্তিদের জামিন দিলে সেই তদন্ত প্রক্রিয়াতেই ব্যাঘাত ঘটবে। 
নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে সিবিআই’র মামলায় ধৃত পার্থ চ্যাটার্জি, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি কল্যাণময় গাঙ্গুলি, এসএসসির প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্য, নিয়োগ নজরদারি কমিটির প্রাক্তন উপদেষ্ট শান্তিপ্রসাদ সিনহা, এসএসসির তৎকালীন সচিব অশোক সাহাকে সহ সাতজনেকই এদিন জেল হেপাজত শেষে আলিপুর তোলা হয়। পার্থ চ্যাটার্জির তরফে তাঁর আইনজীবীরা সোই অসুস্থতার কথাই জামিনের আবেদনে জানান। যদিও দু’পক্ষের দীর্ঘ সওয়াল জবাব শেষে বিচারক ফের তাঁদের জামিনের আবেদন খারিজ করে ১৪দিন জেল হেপাজতেরই নির্দেশ দেন। 

 

 


এর আগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর সিবিআই এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে চার্জশিট পেশ করে। তাতে অভিযুক্তের তালিকায় ১৬ জনের নাম রয়েছে। তালিকার ছয় নম্বরে রয়েছে পার্থ চ্যাটার্জির নাম। এরপর গত ২৫ অক্টোবর আলিপুর আদালতেই সিবিআই নবম-দশম শ্রেণির সহকারী শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় চার্জশিট দায়ের করে। তাতে ১২জনের নাম রয়েছেন। যদিও নবম-দশমে নিয়োগ দুর্নীতির চার্জশিটে পার্থ চ্যাটার্জির নাম নেই। তবে এটা এই মামলায় এরপরেও অতিরিক্ত চার্জশিট জমা দেওয়া হবে বলেও জানা গেছে সিবিআই সূত্রে।

Comments :0

Login to leave a comment