প্রতীম দে
‘‘কিন্তু সেই শিশুটিকে আমি
ভিড়ের ভিতর আজ কোথাও দেখছি না।
শিশুটি কোথায় গেল? কেউ কি কোথাও তাকে কোন
পাহাড়ের গোপন গুহায় লুকিয়ে রেখেছে?’’
‘উলঙ্গ রাজা’ কবিতায় ছেলেটাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। কিন্তু আমাদের রাজ্যে শাসকের চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন করা শিলাদিত্য চৌধুরী, অম্বিকেশ মহাপাত্ররা নিখোঁজ হয়নি। তাদের ঠিকানা হয়েছে জেল। এক রাত হলেও জেলে থাকতে হয়েছে তাঁদের। কারণ তাঁরা সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। মুখ্যমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেছেন।
                        
                        
যেই জনগন গণতন্ত্রের ভিত্তি সেই জনগনকেই বাধা দেওয়া হয়েছে নিজের মত প্রকাশ করতে।
২০১১ সাল থেকেই বাংলার আকাশে বাতাসে যেন একটা কথা গুন গুন করে। সেটা হচ্ছে শাসকের বিরুদ্ধে কথা বলা যাবে না। ২০১৪ সালের পর থেকে তা গোটা ভারতের আকাশে গুন গুন করছে। কৌস্তভ বাগচীকে রাতে বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার আর পরদিনই আদালতে জামিনে ফের বেড়েছে গুনগুনানি।
ফ্যাসিস্ট। ইতিহাসের একটা শব্দ। সময় বদলেছে। কিন্তু বদলায়নি ফ্যাসিস্টের চরিত্র। 
ক্ষমতায় আসার পরপরই সিপিআই(এম) নেতা গৌতম দেব, সুজন চক্রবর্তীদের বাড়ি পুলিশ পাঠানো হয়। আইনি নোটিশ দেওয়া হয়। কিন্তু তাঁদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি মমতা ব্যানার্জির সরকার।
                        
                        
এখানেই শেষ নয়। বিরোধী দলের নেতারা শুধু নয়। মমতার বিরোধিতা করার জন্য জেলে যেতে হয়েছে বহু সাধারণ মানুষকে। সারের দাম বাড়ায় প্রকাশ্য সভায় মুখ্যমন্ত্রীকে প্রশ্ন করায় জেলে যেতে হয়েছিল শীলাদিত্য চৌধুরীকে। ফেসবুকে মমতা ব্যানার্জি এবং মুকুল রায়ের কার্টুন পোস্ট করার জন্য জেলে যেতে হয়েছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্রকে।
শাসকের রোষ থেকে রেহাই পাননি প্রয়াত তৃণমূল নেতা তপন দত্তের স্ত্রী প্রতীমা দত্ত। হাওড়ার নিহত তৃণমূল নেতার স্ত্রী স্বামীর খুনের বিচার চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার জন্য তাকেও মিথ্যা মামলায় জেলে যেতে হয়েছিল।
                        
                        
যাঁদের কথা বলা হলো তারা কেউ দমে যাননি। ২০১৬ সালে বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেসের সমর্থনে বিধানসভা নির্বাচনে লড়াই করেন প্রতীমা দত্ত এবং অম্বিকেশ মহাপাত্র।
প্রতিবাদ করলে যেমন জেলে যেতে হয়েছে তেমন আবার জুটেছে সিপিআই(এম) ক্যাডার তখমা। যেমন কামদুনির মৌসুমী কয়াল এবং টুম্পা কয়াল। কামদুনি গন-ধর্ষনের পর মুখ্যমন্ত্রী যখন নির্যাতিতার পরিবারের সাথে দেখা করতে যায় তখন দোষীদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ দেখান গ্রামবাসীরা। সেই বিক্ষোভের প্রথম সারিতে ছিলেন টুম্পা ও মৌসুমী। তাদের সেই সময় সিপিআই(এম) ক্যাডার বলে আক্রমণ করেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। টিভি শো তে মুখ্যমন্ত্রীকে প্রশ্ন করায় একই তকমা জুটেছিল ছাত্রী তানিয়া ভরদ্বাজের।
                        
                        
এতো গেল স্বৈরাচারি তৃণমূল সরকারের কথা। এবার আসা যাক ফ্যাসিস্ট বিজেপি সরকারের কথায়। ২০১৪ সাল। কেন্দ্রে ক্ষমতায় এলো বিজেপি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তারপর থেকেই বিরোধীদের ওপর চলছে লাগাতার আক্রমণ। পুলিশ দিয়ে, দলীয় কর্মী দিয়ে, উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন গুলোকে ব্যাবহার করে চলছে লাগাতার আক্রমণ। মোদী জমানায় বার বার শিরোনামে উঠে এসেছে জহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়। এবিভিপি এবং উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের সদস্যাদের হাতে বার বার আক্রান্ত হয়েছে এসএফআই কর্মী সমর্থকরা। মাথা ফেটেছে ঐশী ঘোষের। গ্রেপ্তার হয়েছেন ওমর খালিদ। মোদী বিরোধী কথা বলার জন্য জেলে যেতে হয়েছে তাঁকে। জুটেছে দেশদ্রহী তখমা। 
সাংবাদিক জুবেইর, সিদ্দিক কাপ্পান জেলে গিয়েছেন সরকার বিরোধী খবর করার জন্য। মানুষের কাছে সঠিক খবর তুলে ধরার জন্য। সাংবাদিক, ছাত্র, কবি যেমন প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন তেমন মোদী শাসনে প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন বিরোধী দলের নেতা কর্মীদের ওপর।
                        
                        
সম্প্রতি দিল্লি বিমান বন্দর থেকে জোর করে গ্রেপ্তার করা হয় কংগ্রেস নেতা পবন খেরাকে। পবন খেরার অপরাধ সে নরেন্দ্র মোদীর সমালোচনা করেছিলেন। আমাদের রাজ্যে কয়েকদিন আগেই গ্রেপ্তার হন একমাত্র বিরোধী বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকী। আর আজ কৌস্তভ বাগচী। 
সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির শমীক লাহিড়ীর কথায়, ‘‘কেন্দ্রে ফ্যাসিস্ট। রাজ্যে স্বৈরাচারী শাসক। মোদী এবং মমতার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। একজন বিধায়ককে মিথ্যা মামলা দিয়ে ৪২ দিন জেলে আটকে রাখা হচ্ছে। এই জিনিস কখনও ভাবা যায়না কোন গণতান্ত্রিক দেশে।’’
গোটা বিশ্বের ইতিহাসে যত ফ্যাসিস্ট শক্তি রাজ করেছে সবার একটাই লক্ষ ছিল তা হলো বিরোধী পরিসর শূন্য করা। তাই ২০১১ সালের পর একের পর এক মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে সিপিআই(এম) কর্মী সমর্থকদের। মিছিল আইন অমান্য করতে গেলে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দেওয়া হচ্ছে। ডিএ’র দাবিতে মিছিল করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন সরকারি কর্মীরা। জেলে রাত কাটাতে হয়েছে তাঁদের।
                        
                        
নতুন সংশোধনী আইন রাজ্য সরকার পাশ করিয়েছে বিধানসভায়। যেই আইনে বলা হচ্ছে সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করলে আন্দোলনকারীর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে ক্ষতিপূরণ নেওয়া হবে। 
কিন্তু প্রশ্ন থাকছে ২০০৭ সালে সে সময়ে বিরোধী নেত্রী মমতা ব্যানার্জি যখন বিধানসভা ভাঙচুর করলেন, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করলেন তার ক্ষতিপূরণ কে বা কারা দেবে?
                                        
                                    
                                
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
Comments :0