ডিফেন্ডারদের ত্রাস কিলিয়ান এমবাপে। যাঁকে আটকাতে কালঘাম ছুটে যাচ্ছে বিশ্বের সেরা ডিফেন্ডারদের। যে ফুটবলার কাতার বিশ্বকাপে ইতিমধ্যেই পাঁচ গোল করে ফেলেছেন। কিন্তু তাঁকে আটকানোর জন্য কোনও বিশেষ পরিকল্পনা রাখছে না মরক্কো। অনেকেরই মনে হবে এটা মনস্তাত্ত্বিক খেলা। বড় দলের বিরুদ্ধে নামার আগে সব কোচই এমন করে থাকেন।
আদতে তা একেবারেই নয়। এটাই পরিকল্পনা মরক্কোর অ্যাভোকাডো কোচ ওয়ালিদ রেগরাগুইয়ের। পরিকল্পনা নিয়েই এগোতে ভালোবাসেন ওয়ালিদ। চলতি বিশ্বকাপে মরক্কোর অভূতপূর্ব উত্থানের নেপথ্যে কিন্তু ওয়ালিদই। তাঁর কার্যকরী পরিকল্পনার জন্যই এতদূর এসেছে আফ্রিকা মহাদেশের দলটি। যদি ফ্রান্স শেষ চারে আটকে যায়, আটকে যাবে ওয়ালিদের সাহসী মস্তিষ্কের কাছে।
সেমিফাইনালের আগের দিন সাংবাদিক সম্মেলনে এসে অকপটে বলে যান, ‘এমবাপেকে আটকানোর জন্য কোনও বিশেষ ট্যাকটিক্যাল পরিকল্পনা রাখছি না। এমবাপে ছাড়া ফ্রান্স দলে রয়েছে আন্তোয়ান গ্রিজম্যান, ওউসম্যান ডেম্বলের মতো ফুটবলাররা। গ্রিজম্যান সেরা ছন্দে আছে। ডেম্বেলে ডান প্রান্ত দারুণ ফুটবল খেলছে। তাই, একজনকে আটকানোর পরিকল্পনা করে লাভ হবে না। দলকে রুখতে হবে। আমাদের মনোযোগ থাকবে ফ্রান্সকে সমস্যায় ফেলা।’ ওয়ালিদের বাড়তি সংযোজন, ‘আমি জানি আমরা ফেভারিট নই। কিন্তু আমরা আত্মবিশ্বাসী। মরিয়া নয়া ইতিহাস লেখার ব্যাপারে। বিশ্বকাপ জিততে চাই। এর জন্য আমাকে আপনারা পাগল ভাবতেই পারেন। তবে আমি মনে করি কিছুটা পাগলামো ভালো।’ 
বাঁ-দিক দিয়ে গতি বাড়িয়ে ঘোড়ার মতন ছোটেন এমবাপে। মরক্কোর ডানপ্রান্তে খেলেন আসরফ হাকিমি। দু’জন একে অপরকে ভালো মতন চেনেন। বছরভর একসঙ্গে পিএসজি’র হয়ে ট্রেনিং করেন। হাকিমির ঘাড়ে এমবাপেকে রোখার দায়িত্ব। হাকিমি-এমবাপে দ্বৈরথ প্রসঙ্গে ওয়ালিদ বলছেন, ‘আমার থেকে এমবাপেকে ভালো চেনে হাকিমি। নিজের বন্ধুকে হারানোর জন্য তেতে রয়েছে হাকিমি। মাঠে ভালো লড়াই হবে। কেউ কাউকে এক ইঞ্চিও জমি ছাড়বে না।’ হাকিমির উদ্দেশ্যে হুঙ্কার দিয়েছেন এমবাপেও। বলেছেন, ‘হাকিমিকে ধ্বংস করে দেব আমি।’ এমবাপেকে নিয়ে ফ্রান্স কোচ দিদিয়ের দেশঁও নিশ্চিত কোনও পরিকল্পনা আটবেন। যেমন, ইংল্যান্ড ম্যাচে ফ্রান্সের দশ নম্বর জার্সিধারীকে একটু পেছন থেকে অপারেট করিয়েছিলেন। যদিও এমবাপে সেদিন নিজের সেরা ছন্দে খেলতে পারেননি। 
নির্দিষ্ট লক্ষ্য এবং ক্ষুধা না থাকলে সর্বোচ্চ পর্যায়ে সফল হওয়া যায় না কখনও। সেটা ভালো মতোই জানেন ওয়ালিদ। সেভাবেই দলকে তৈরি করেছেন। তাতেই সাফল্য আসছে। ফ্রান্সকে হারিয়ে মরক্কো ফাইনালে উঠলে ঐতিহাসিক ব্যাপার হয়ে যাবে। তিনি যোগ করেছেন, ‘আমরা খুবই উচ্চাকাঙ্ক্ষা। ক্ষুধার্ত। আমরা আফ্রিকাকে শীর্ষে নিয়ে যেতে চাই। সেমিফাইনালে খেলতে নেমে মানসিকভাবে শক্তিশালী থাকতে হবে, ক্লান্ত হওয়া যাবে না। ফ্রান্সকে হারিয়ে ফাইনালে যেতে চাই।’ 
মরক্কোর ফুটবলাররা ক্লান্ত হচ্ছে না। গোটা ম্যাচ ছুটে বেড়াচ্ছে অদম্য মনোভাবে। এখনও অপরাজিত। আত্মঘাতী গোল খেলেও ক্রোয়েশিয়া, বেলজিয়াম, স্পেন ও পর্তুগালের মতো বড় দলগুলি মরক্কোর ডিফেন্স ভেঙে গোল দিতে পারেনি। ফাঁকা জমি দিচ্ছে না। এমবাপে, জিরু সমৃদ্ধ ফ্রান্সের আক্রমণভাগ কি পারবে মরক্কোর ডিফেন্স ভেঙে দিতে? না হাকিম জিয়েচ, এন নেসিরিদের মতো কেউ গোল দিয়ে দেশকে ফাইনালে তুলে তাঁদের রূপকথাকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে!
                                        
                                    
                                
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
Comments :0