‘এটি আত্মহত্যা নয়, একটি পরিকল্পিত হত্যা। এই খুনের দায় মুখ্যমন্ত্রীকেই নিতে হবে। আমরা এই খুনের বিচার চাই।’ তৃণমূল নেতা কর্মীদের হুমকি ও চাপে স্বরূপনগরের আইসিডিএস কর্মী রেবা বিশ্বাসের আত্মহত্যার প্রসঙ্গে মঙ্গলবার বসিরহাটের হঠাৎগঞ্জে দাঁড়িয়ে দ্ব্যর্থহীনভাবে এ কথা জানিয়ে দিলেন সিআইটিইউ নেত্রীরা। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার সমীক্ষা আইসিডিএস, আশা কর্মীরা আর করবেন না। এরপরেও যদি করতে বাধ্য করে তাহলে বিক্ষোভ রাজপথে থাকবে না। প্রয়োজনে নবান্নের ১৪ তলাতে গিয়ে আছড়ে পড়বে বিক্ষোভের ঢেউ।
রেবা বিশ্বাসকে তৃণমূলের হুমকির ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি’র পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটি। সংগঠনের রাজ্য সভানেত্রী জাহানারা খান এবং সম্পাদিকা কনীনিকা ঘোষ এক বিবৃতিতে বলেছেন, যারা হুমকি প্রদর্শন করেছে তাদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে এবং আবাস যোজনার সমীক্ষার সাথে যুক্ত সকল কর্মীকে উপযুক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে। 
আইসিডিএস কর্মী রেবা বিশ্বাসের মৃত্যু নিছক আত্মহত্যা নাকি পরোক্ষভাবে তাঁকে হত্যা করা হলো— এই প্রশ্ন তুলে এদিন সিআইটিইউ উত্তর ২৪ পরগনা জেলা কমিটি ‘স্বরূপনগর চলো’ ডাক দেয়। সমর্থন জানায় সিপিআই (এম) উত্তর ২৪পরগনা জেলা কমিটি ও সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি। শুরু হয় দফায় দফায় রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ, প্রতিবাদ। প্রথমে হঠাৎগঞ্জ বাজারে স্বরূপনগর তেঁতুলিয়া রোড অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু হয়। পুলিশ বিক্ষোভ তুলতে এলে শুরু হয় তর্কবিতর্ক। বিক্ষোভের আঁচ টের পেয়ে পুলিশ পিছু হটে। একঘণ্টা রাস্তা অবরোধ করে চলে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সভা।
 বক্তব্য রাখেন সিপিআই (এম) উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক মৃণাল চক্রবর্তী, শ্রমিক নেতা হামাল উদ্দিন আহমেদ, শিবশঙ্কর ঘোষ, আবদুল খালেক খান সহ অন্যান্য। সভাপতিত্ব করেন সিপিআই(এম) নেতা দেবাশিস দত্ত। 
সভায় মৃণাল চক্রবর্তী বলেন গৃহহীনরা ঘর পাচ্ছে না। চাকরি বিক্রির মতো ঘর বিক্রি করছে তৃণমূলের পঞ্চায়েত আধিকারিকরা। বিজেপি’র সদস্যরাও একই কাজ করছে। প্রতিবাদসভা চলাকালীন হঠাৎগঞ্জ বাজার সংলগ্ন স্বরূপনগর সিডিপিও-কে স্মারকলিপি জমা দেওয়া হয় আইসিডিএস কর্মী ইউনিয়নের পক্ষ থেকে। ডেপুটেশন শেষ করে শুরু হয় প্রতিবাদ মিছিল। 
মিছিল এগিয়ে যায় স্বরূপনগর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন বিডিও অফিসের দিকে। দীর্ঘ পথ হেটে মিছিল এসে পৌঁছায় বিডিও অফিসের মূল প্রবেশদ্বারে। তখন সেখানে পুলিশের বিশাল বাহিনী। মিছিল বিডিও অফিসে প্রবেশ করতে গেলে পুলিশ বাধা দিলে রাস্তায় বসে পড়ে শুরু হয় ফের রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ। সেখানে বিক্ষোভ সভায় গার্গী চ্যাটার্জি পুলিশ প্রশাসনের এহেন আচরণের তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ২০বছর আগে রেবা বিশ্বাসের স্বামী মারা গেছেন। তাঁর এই সামান্য আয়ের উপর নির্ভরশীল পরিবার। নিঃসন্তান রেবা বিশ্বাসকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হলো। পুলিশ চুপ, বিডিও চুপ। তারা আত্মহত্যা বলে রাবার স্ট্যাম্প লাগাচ্ছে। কিন্তু সিআইটিইউ চুপ থাকবে না। শেষতক এই লড়াই চলবে।
সভায় সিআইটিইউ নেত্রী মধুমিতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মধুজা সেন রায় ও রত্না দত্ত, অতসী চক্রবর্তী ও মহিলা নেত্রী আত্রেয়ী গুহ ও সিপিআই (এম) নেতা রাজু আহমেদ বক্তব্য রাখেন। তাঁরা বলেন, সরকার আইসিডিএস, আশা কর্মীদের নিরাপত্তা না দিয়ে গুন্ডা লেলিয়ে দিচ্ছে। আমরাও চাই গরিব মানুষ ঘর পাক। কিন্তু স্বচ্ছতা রাখতে দেওয়া হচ্ছে না। সভায় উপস্থিত ছিলেন সিপিআই (এম) নেতা প্রতাপ নাথ, মহিলা নেত্রী রুনু ব্যানার্জি, যশোধরা বাগচী,  শ্রমিক নেত্রী ইরিনা ইরানি সহ অন্যান্যরা। বিক্ষোভসভা চলাকালীন নেত্রীবৃন্দ ৬ দফা দাবিতে স্মারকলিপি জমা দেন বিডিও’র কাছে। 
                                        
                                    
                                
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
Comments :0