শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস কোম্পানির তথ্য রিপোর্ট আকারে জমা পড়ল হাইকোর্টে। বৃহস্পতিবার সিল করা খামে ইডি এই তথ্য জমা দিয়েছে। গত ১৪ সেপ্টেম্বর স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় বিচারপতি অমৃতা সিনহা লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের বিশদ তথ্য জানতে চেয়েছিলেন।
রাজ্যে শিক্ষক দুর্নীতি মামলায় তৃণমূল সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জির পারিবারিক সংস্থা লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের নাম সামনে এসেছে। কোটি কোটি টাকার লেনদেন কীভাবে হয়েছে তা খতিয়ে দেখতেই অভিষেক ব্যানার্জির নিজের সংস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত রিপোর্ট আদালত তলব করেছিল। একই সঙ্গে আদালত জানতে চেয়েছিল ওই সংস্থার সিইও এবং অন্যান্য সমস্ত ডিরেক্টরের সম্পত্তির হিসাব আদালতে জমা দিতে হবে। এই সংস্থা কবে সরকারি নথিভুক্ত হয়েছিল বা রেজিস্ট্রেশন কবে হয়েছিল তাও আদালত জানতে চেয়েছিল।
বিচারপতি সিনহা নির্দেশ দিয়েছিলেন, এই মামলায় বলিউডের যে সমস্ত অভিনেতা-অভিনেত্রীর নাম উঠে এসেছে তাঁদের সম্পত্তির হিসাব জমা দিতে হবে। বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সেই রিপোর্ট মুখবন্ধ খামে জমা দিয়েছে। তদন্তকারী সংস্থা শুধু আদালতকে জানিয়েছে একজন অভিনেতার নাম এখনও পর্যন্ত পাওয়া গেছে। তাঁর ৪০লক্ষ টাকার হদিশও পাওয়া গেছে। ইডি’র আইনজীবীর এই বক্তব্য শুনে বিচারপতি অবাক হয়ে বলেন, এতদিনে মাত্র একজনের হদিশ পেলেন। তদন্তের সময় কত নামই তো উঠে এসেছিল। মাত্র একজনের নাম দেওয়া হলো কেন?
কলকাতা হাইকোর্টে যখন এই মামলার শুনানি চলছে তখন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জি দিল্লিতে ছিলেন। এই মামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, আমার লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের সব তথ্যই তদন্তকারী সংস্থার হাতে রয়েছে। নতুন করে কিছু দেওয়ার নেই। আমি ইডির জেরায় সব উত্তর দিয়েছি। আগেই তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের সিইও তিনি নিজেই। এখনও তিনি ওই পদে রয়েছেন। তবে এই সংস্থার কাজ কী ছিল তা এখনও পরিষ্কার করেনি ইডি।
লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের অফিসে তল্লাশি চালিয়ে ইডি যে সমস্ত নথি উদ্ধার করেছে তা দেখেই তদন্তকারী সংস্থা বলেছে, এই সংস্থা নিয়োগ দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। আগেই এই সংস্থার পদস্থ কর্মচারী সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রকে (কালীঘাটের কাকু) গ্রেপ্তার করেছে ইডি। তিনি এখন জেলে রয়েছেন। এর মধ্যেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের একটি পৃথক কোম্পানির সঙ্গে লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছে। কালীঘাটের কাকুর এই আলাদা কোম্পানির নাম এসডি এন্টারপ্রাইজ। আদালতকে জানানো হয়েছে এই সংস্থার সঙ্গে লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের আর্থিক লেনদেন হয়েছে।
এদিন বিচারপতি অমৃতা সিনহার এজলাসেই ইডি’র তরফে অভিযোগ করা হয় কলকাতা পুলিশ বিভিন্ন কায়দায় তদন্তে হেনস্তা করছে। লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসে যে ১৬টি ফাইল ডাউনলোড করা হয়েছে তা নিয়ে বারে বারে চিঠি পাঠিয়ে কলকাতা পুলিশ তদন্তের কাজে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। একজন সংসদীয় পদে থাকা ব্যক্তির প্রভাব এখানে রয়েছে। এই ঘটনায় পুলিশের হস্তক্ষেপ বাঞ্ছনীয় নয়। কলকাতা পুলিশের তরফ থেকে আদালতকে জানানো হয়েছে, বহু ক্ষেত্রে দেখা গেছে ইডি’র ভুয়ো পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি কাজ করছেন। কলকাতা পুলিশ এব্যাপারে ইডি’কে কয়েকটা চিঠি পাঠিয়েছে। এদিন বিচারপতি সিনহা বলেন, পুলিশের এই অতি সক্রিয়তার কোনও প্রয়োজন নেই। একটি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকদের হেনস্তা করা বন্ধ করতে হবে। এব্যাপারে নতুন করে আর পুলিশকে তদন্ত করতে হবে না।
এই মামলার চলাকালীন প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির পৃথক একটি অভিযোগের শুনানির সময়ে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের ভূমিকা নিয়ে আরও একবার অসন্তোষ প্রকাশ করে আদালত। ওএমআর বিকৃত হয়েছে একথা পর্ষদ কর্তৃপক্ষ কীভাবে জানল। যাঁদের চাকরি বাতিল হয়েছে পর্ষদ তাঁদের চাকরি বাতিল করল কীভাবে? এমন ৯৬জন শিক্ষক রয়েছেন যাঁদের চাকরি বাতিল হয়েছে। কীভাবে পর্ষদ এঁদের চাকরি বাতিল করতে পারল। আইনজীবী ফিরদৌস সামিম বলেন, সিবিআই তদন্তের ওপর ভিত্তি করেই পর্ষদ স্বীকার করেছে ওএমআর শিট নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। শুধুমাত্র ৯৬জনের ক্ষেত্রে এই দুর্নীতি হয়েছে তা নয়। রাজ্যের প্রতিটি জেলায় এই বেআইনিভাবে নিয়োগ হয়েছে। পর্ষদ কর্তৃপক্ষ সব জেনে চুপ করে বসে আছে। ইডি এবং সিবিআই তদন্ত দুর্নীতির প্রমাণ সামনে আনার পরই পর্ষদ চাকরি বাতিলের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে। ওএমআর বিকৃত করা এবং ওএমআর নষ্ট করে ফেলার কাজ হয়েছে পর্ষদে। ফলে তদন্তের ফলাফল পর্ষদ অস্বীকার করতে পারছে না। ওএমআর নষ্ট করা, নকল ওএমআর তৈরি করা এবং চাকরি বাতিল সংক্রান্ত পর্ষদের বক্তব্য জানতে চেয়েছে আদালত। আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর পর্ষদকে হলফনামা দিয়ে এই বক্তব্য আদালতকে জানতে হবে।
Comments :0