গত সপ্তাহের পর ফের নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। সোমবার তিনি চিঠি দিয়েছেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারকে।
এর আগে রাজ্যের সিইও-কে আগের চিঠিতে মুখ্যনির্বাচনী আধিকারিক কে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনের(এসআইআর)প্রক্রিয়া স্থগিত করার অনুরোধ করেন মুখ্যমন্ত্রী।
এদিন জ্ঞামেশ কুমারকে পাঠানো চিঠিতে ডেটা এন্ট্রি অপারেটর নিয়োগ সংক্রান্ত কমিশনের নির্দেশিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। বেসরকারি আবাসনে ভোট কেন্দ্র করার প্রস্তাবের বিরোধিতাও করেছেন মমতা।
রাজ্যে বিএলও-দের ওপরই ডেটা এন্ট্রির দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। আরেকদিকে ডেটা এন্ট্রি অপারেটর নিয়োগ না করার দায় চেপেছে রাজ্য সরকারের ওপর। কমিশন বললেও রাজ্য সরকার ডেটা এন্ট্রি অপারেটর নিয়োগ করেনি। এদিকে বিএলও-রা পড়েছেন মারাত্মক সঙ্কটে।
এদিন চিঠিতে ডেটা এন্ট্রি অপারেটর নিয়োগ না করার সেই দায় ঝেড়ে ফেলতে চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, এসআইআর'র জন্য পশ্চিমবঙ্গের সিইও দফতর জেলা নির্বাচনী আধিকারিকদের এক বছরের জন্য এক হাজার চুক্তিভিত্তিক ১ হাজার ডেটা এন্ট্রি কর্মী ও ৫০ জন সফ্টওয়ার ডেভেলপার নিয়োগ করার প্রস্তাব দিয়েছে। আবার কমিশন বলেছে যে চুক্তিভিত্তিক ডেটা এন্ট্রি কর্মী এবং বাংলা সহায়তা কেন্দ্রের কর্মীদের নিয়োগ করা যাবে না।
মুখ্যমন্ত্রী এই নির্দেশে উদ্বেগ জানিয়ে বলেছেন, জেলা দপ্তরে এই কাজ করার জন্য কর্মী নিযুক্ত রয়েছেন। বরাবর ফিল্ড অফিস এবং জেলা নির্বাচনী দপ্তর নিজেরা ঠিকা কর্মী নিয়োগ করে থাকে। এরপরেও গোটা বছরের জন্য কেন অস্থায়ী কর্মী নিয়োগ করার প্রয়োজন পড়ছে সিইও দপ্তরের, এই নিয়েই প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, নিজেদের প্রয়োজন মতো অস্থায়ী কর্মীনিয়োগ করার পূর্ণ অধিকার দেওয়া আছে জেলা নির্বাচনী দপ্তরগুলিকে। তাহলে জেলাস্তরের দপ্তরগুলিকে ছাপিয়ে কেন সিইও দপ্তর এই নিয়োগ প্রস্তাব দিচ্ছেন। তিনি আরো বলেন, যে কর্মীরা রয়েছে এবং যাদের প্রস্তাবিত এজেন্সির মাধ্যমে ঠিকায় নিয়োগ করা হবে তাদের কাজের মধ্যে কী পার্থক্য থাকবে? তাহলে কি বিশেষ কোনো রাজনৈতিক দলের স্বার্থপূরণের জন্য এই পদক্ষেপ গ্রহণ করছে সিইও দপ্তর?
এদিনই সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী ফের বলেছেন নির্বাচন কমিশন এবং রাজ্য সরকারের জন্য বিএলও-রা ভয়াবহ সঙ্কটে পড়েছেন। বিহারে যদি ডেটা এন্ট্রি অপারেটর নিয়োগ হয়, এরাজ্যে হবে না কেন? তিনি বলেছেন, বোঝাই যাচ্ছে প্রস্তুতি না নিয়েই এসআইআর-এ তাড়াহুড়ো করে নেমেছে নির্বাচন কমিশন। এই প্রক্রিয়ার সময়সীমা বাড়ানোরও দাবি করেছেন তিনি।
উল্লেখ্য, বিভিন্ন ক্ষেত্রেই দেখ যাচ্ছে এআরও অফিস থেকে বিএলও-দের উপর ক্রমাগত ডেটা এন্ট্রি কাজের জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে। কাউকে কাউকে বলা হচ্ছে এক রাতের মধ্যে দু’শো ফর্ম আপলোড করতে। এদিকে কমিশনের অ্যাপে কাজ করতে প্রচুর দেরি হওয়ার অভিযোগে সরব বিএলও-রা। একাধিক আত্মহত্যা হয়েছে, অসুস্থও হয়ে পড়ছেন বিএলও-রা।
জেলা নির্বাচন দপ্তরে ডেটা এন্ট্রির পর্যাপ্ত কর্মী থাকে তাহলে রাজ্যই বা কেন তা ব্যবহারের প্রস্তাব কমিশনকে এতদিন দেয়নি, এদিনের চিঠিতেও তার ব্যাখ্যা দেননি মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি, ভোট সংক্রান্ত কাজে রাজ্যের অস্থায়ী কর্মী দিয়ে কাজ করানোর ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতার গুরুতর অভাবও দেখা গিয়েছে বিভিন্ন পর্বে।
নির্বাচন কমিশনকে পাঠানো চিঠিতে আরও একটি বিষয়ও উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমার নজরে এসেছে যে নির্বাচন কমিশন ব্যাক্তিগত মালিকানাধীন আবাসনেও ভোটগ্রহণ কেন্দ্র করার প্রস্তাব দিয়েছেন। এমনকি জেলা স্তরেও এই বিষয়ে আলোচনা চালানো হচ্ছে বলে জানা যাচ্ছে। হঠাৎ নির্বাচন কমিশন কেন এই ধরনের প্রস্তাব করছেন তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী।
চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী উল্লেখ করেন, এই প্রস্তাব সমস্যাজনক। সবসময়ই এলাকার দুই কিলোমিটারের মধ্যে সরকারি এবং আধা-সরকারি ভবনগুলিকে ভোটগ্রহণ কেন্দ্র করা হয়। যাতে সাধারণ মানুষের সেখানে পৌঁছাতে এবং গোটা প্রক্রিয়ার নিরপেক্ষতা যাতে বজায় থাকে তাই এই ব্যবস্থা করা হয়। নিরপেক্ষতার অভাব, বিধিভঙ্গের আশঙ্কা সহ সাধারণ ও বিশেষ ব্যাক্তিবর্গের প্রতি বহিঃসদৃশ সৃষ্টি করার মতো একাধিক কারণে বেসরকারি ভবনগুলিকে এই কাজের জন্যব্যবহার করা হয় না।
এই ধরণের পদক্ষেপ কমিশনের ভাবমূর্তিতেও প্রভাব ফেলছে বলেও চিঠিতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেছেন যে কমিশনের এই ধরনের নির্দেশে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ঘিরে প্রশ্ন উঠবে।
উল্লেখ্য, রাজ্য নির্বাচন কমিশন পরিচালিত পঞ্চায়েত বা পৌরসভা ভোটেও বারবার এই স্বচ্ছতা না থাকারই অভিযোগ উঠেছে। কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন আবার গোটা দেশে সেই স্বচ্ছতা এবং নিরপেক্ষতা নিয়েই প্রশ্নের মুখে।
Mamata writes to commission
ডেটা এন্ট্রি অপারেটর: দায় কমিশনের ঘাড়ে ঠেলতে চিঠি মমতার
ডেটা এন্ট্রির কাজে নাকাল বিএলও'রা
×
Comments :0