'Bangla Bachao Yatra

‘বাংলা বাঁচাও যাত্রা’ প্রস্তুতি তুঙ্গে কোচবিহারে

জেলা

সাংবাদিকদের মুখোমুখি অনন্ত রায়।

অমিত কুমার দেব: কোচবিহার

লোকসংস্কৃতি রক্ষায় আব্বাস উদ্দিনের জন্মভিটে সংরক্ষণ, তার জন্মভিটেতে উচ্চমানের ভাওয়াইয়া চর্চা কেন্দ্র গড়ে তোলা, খলিসামারিতে পঞ্চানন বর্মার জন্মভিটেতে বাম আমলে গড়ে ওঠা সংগ্রহশালার উন্নীতকরণ, কোচবিহার চকচকা শিল্প বিকাশ কেন্দ্রে জুটপার্ক গড়ে তোলা তুফানগঞ্জ ২নং ব্লকে জালধোয়া ঘাটে রায়ডাক নদীর ওপর স্থায়ী সেতু নির্মাণের মত বিভিন্ন স্থানীয় দাবি, ভোটার তালিকায় বৈধ ভোটারদের নাম যেন কোন ভাবেই বাদ না যায়, এই দাবির পাশাপাশি বিভিন্ন দাবিকে সামনে রেখে ২৯নভেম্বর কোচবিহার জেলার তুফানগঞ্জ থেকে শুরু হচ্ছে সিপিআই(এম)র বাংলা বাঁচাও যাত্রা।
সোমবার বেলা ১টায় তুফানগঞ্জ দোল মেলার মাঠে জনসভার মধ্য দিয়ে শুরু হবে এই যাত্রা। এই মহতী জনসভায় বক্তব্য রাখবেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যা মীনাক্ষী মুখার্জি। এছাড়াও উপস্থিত থাকবেন সিপিআই(এম) নেতা আভাস রায় চৌধুরী, জিয়াউল আলম, অলকেশ দাস, ময়ূখ বিশ্বাস প্রমূখ। এই সভার শেষে বাংলা বাঁচাও যাত্রা তুফানগঞ্জ থেকে শুরু হয়ে পৌঁছবে আলিপুরদুয়ারের ভাটিবাড়িতে। সোমবার সিপিআই(এম) কোচবিহার জেলা দপ্তরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে একথা জানালেন সিপিআই(এম) কোচবিহার জেলা সম্পাদক অনন্ত রায়।
এদিন তিনি জানান, ২৮নভেম্বর বেলা ১টায় কোচবিহার জেলার মাথাভাঙার পঞ্চানন মোড়ে রায়সাহেব পঞ্চানন বর্মার মূর্তিতে মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, পার্টি নেত্রী মীনাক্ষী মুখার্জী সহ নেতৃত্বরা। এরপর তাঁরা যাবেন মাথাভাঙ্গা মহকুমার খলিসামারি এলাকায় পঞ্চানন বর্মার জন্মভিটেতে। এখানেই বাম আমলে সংগ্রহশালা নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পর এই সংগ্রহশালার জন্য এক টাকাও বরাদ্দ করেনি রাজ্যের বর্তমান ক্ষমতাসীনরা। তাই পঞ্চানন বর্মার জন্ম ভিটা থেকেই বার্তা দেওয়া হবে যদি এই সংগ্রহ ছাড়া উন্নীত করবার জন্য রাজ্যের সরকার কোন অর্থ বরাদ্দ না করে, তাহলে গণসংগ্রহের মধ্য দিয়েই সংগ্রহশালাটির উন্নীতকরণ করা হবে।
ওদিনই বেলা ৩টায় নেতৃত্বরা পৌঁছাবেন কোচবিহার জেলার তুফানগঞ্জ মহকুমার বলরামপুরে। এখানেই অনাদরে, অযত্নে পড়ে রয়েছে ভাওয়াইয়া সম্রাট আব্বাস উদ্দিনের জন্মভিটে। ১৯০১সালের ২৭অক্টোবর কোচবিহার জেলার তুফানগঞ্জ মহকুমার বলরামপুরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। এখানেই বেড়ে ওঠার পাশাপাশি সংগীত চর্চা শুরু তাঁর। এই মুহুর্তে টিনের চালার ঘরটি ক্রমান্বয়ে পোড়ো বাড়ির রূপ নিয়েছে। কিন্তু উদাসীন সরকার। রাজ্যে বামফ্রন্ট সরকারের সময়কালে প্রস্তুতি শুরু হয় প্রবাদপ্রতিম এই মানুষটির জন্মভিটাটি সংরক্ষণের। আর ২০১১সালে রাজ্যের ক্ষমতা দখলের পর আব্বাসউদ্দিন স্মৃতিভবন সহ ভাইয়াইয়া সংগীতের গবেষণাগার গড়ে তোলার ঘোষণা করেছিল রাজ্যের বর্তমান সরকার। কিন্তু কোনো প্রতিশ্রুতিই পূরণ করা হয়নি। তাঁর জন্মভিটেতে উচ্চমানের ভাওয়াইয়া চর্চা কেন্দ্র ও বরেণ্য শিল্পীর এই জন্মভিটাকে কোচবিহার হেরিটেজের অন্তর্ভূক্ত করার দাবি তোলা হবে এদিন। শ্রদ্ধা জানানো হবে ভাওয়াইয়া সম্রাট আব্বাস উদ্দিন আহমেদকে।
এদিন অনন্ত রায় বলেন, গোটা রাজ্যে নৈরাজ্যের বাতাবরণ। গোটা দেশ ও রাজ্যে ধর্মনিরপেক্ষতা এবং গণতন্ত্র আক্রান্ত। দেশের মানুষের ঐক্য সম্প্রীতিকে দুর্বল করার ষড়যন্ত্র চলছে প্রতিনিয়ত। রাজ্যে উন্নয়ন বলে কিছু নেই। কর্মসংস্থান নিয়ে কোন উত্তর নেই রাজ্যের সরকারের। রাজ্যে কৃষক তাঁর উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। নারী নিরাপত্তা তলানিতে ঠেকেছে। শিক্ষকের অভাবে ধুঁকছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শিক্ষিত বেকারদের কর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকায়, তাঁরা পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে চলে যাচ্ছেন বিভিন্ন রাজ্যে। আর ভিনরাজ্যে গিয়ে বাংলা ভাষা বলার অপরাধে চরম বিড়ম্বনার মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের। এই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে এই বাংলা বাঁচাও যাত্রা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক, কারণ মানুষের ইস্যুকে মানুষের কাছে নিয়ে গিয়ে, তাদেরকে লড়াইতে শামিল করার লক্ষ্যেই এই যাত্রা। এই কর্মসূচিতে সব অংশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার এদিন আহ্বান জানান অনন্ত রায়।

Comments :0

Login to leave a comment