BLO Dies Lucknow

ফের বিএলও’র মৃত্যুর অভিযোগ যোগীরাজ্যে

জাতীয়

ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধনী’র অতিরিক্ত কাজের চাপে বুথ লেভেল অফিসার’র মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে বাংলা সহ একাধিক রাজ্যে। অতিরিক্ত কাজের চাপে এবার উত্তর প্রদেশের মালিহাবাদের সারাওয়া গ্রামের বাসিন্দা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বিজয় কুমার ভার্মা(৫০)’র মৃত্যু হয়েছে। তাঁর স্ত্রী সঙ্গীতার অভিযোগ এসআইআর’র কর্তব্যরত ঊর্ধ্বতন আধিকারিকরা তাঁকে দায়িত্ব পালনের জন্য অতিরিক্ত চাপ দিচ্ছিলেন। শুক্রবার রাত ৯টা নাদাগ মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে মারা যান তিনি।
প্রথম দফায় বিহারে এসআইআর হয়। বিহার নির্বাচনের পর দ্বিতীয় দফায় এসআইআর শুরু হয় পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাডু, উত্তর প্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তিশগড়, গোয়া, গুজরাট, কেরালা, লাক্ষাদ্বীপ, মধ্য প্রদেশ, পুদুচেরি এবং আন্দামান নিকোবরে। বিএলও-দের প্রশিক্ষণের কাজে শেষ করে ৪ নভেম্বর থেকে শুরু হয় এনিউমারেশন ফরম বিলির কাজ। এসআইআর প্রক্রিয়ার মধ্যেই কেরালা, রাজস্থান, তামিলনাড়ু এবং পশ্চিমবঙ্গের বিএলও আত্মহত্যার ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। বুথ লেভেল অফিসারের মৃত্যু ছাড়াও অসুস্থতার খবর সামনে এসেছে। 
বিজয় কুমার ভার্মার স্ত্রী’র অভিযোগ এসআইআর’র দায়িত্ব পালনের তীব্র মানসিক চাপের কারণে তাঁর স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর মতে ১৫ নভেম্বর সন্ধ্যায়  বিজয় কুমার বিএলও হিসেবে কাজ করছিলেন। ঠিক সেই সময় তিনি হঠাৎ বাড়িতে পড়ে যান। তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিড়সকরা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। প্রায় এক সপ্তাহ চিকিৎসার পর  শুক্রবার রাত ৯টা নাগাদ তাঁর মৃত্যু হয়। পরিবারের অভিযোগ, প্রতিদিন অসংখ্য এসআইআর ফরম পূরণ করার জন্য আধিকারিকদের চাপের কারণে বিজয় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন। অসুস্থতার পর প্রশাসন একটি বিবৃতি জারি করে জানিয়েছে যে অসুস্থতার কারণে বিএলওকে এসআইআর’র দায়িত্ব থেকে ছুটি দেওয়া হয়। মৃত বিএলও’র স্ত্রী দাবি করে বলেন, যে বিজয় কুমার টানা তাঁর মোবাইল ফোনে ডেটা আপলোড করতেন। প্রায়শই বিশ্রাম ছাড়াই ঘন্টার পর ঘন্টা কাজ করতেন। এর ফলে তার ঘুমের উপর প্রভাব পড়ে এবং মানসিক চাপ বেড়ে যায়। কাজের চাপ এবং ঘন ঘন ফোন আসার কারণে বিজয়ের মনে প্রচণ্ড কষ্ট হচ্ছিল।
ঘটনা প্রসঙ্গে উত্তরপ্রদেশ প্রাথমিক শিক্ষা মিত্র সংঘ জানিয়েছে যে বিএলওদের উপর প্রতিদিন ২০০টি এসআইআর ফরম পূরণ করার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে।  অন্যদিকে গ্রামবাসীদের অনুপস্থিতি, ধান কাটার মৌসুমের কারণে বিএলওরা প্রতিদিন মাত্র ২০-২৫টি ফরম পূরণ করতে সক্ষম হচ্ছেন। বারবার ফোন করে চাপ দেওয়া হচ্ছে, এবং এর ফলে বেশিরভাগ বিএলও প্রচণ্ড মানসিক চাপের মধ্যে রয়েছেন। তাঁরা জানিয়েছে যে এই অবাস্তব চাপের কারণে তাদের সহকর্মী বিজয় ভার্মার মৃত্যু হয়েছে। বিজয় ভার্মার মৃত্যুর খবর পেয়ে এলাকার সমস্ত শিক্ষা তাঁর বাড়িতে পৌঁছে শ্রদ্ধা নিবেদনের করেন। একটি সভা করে উত্তরপ্রদেশ প্রাথমিক শিক্ষা মিত্র সংঘের মালিহাবাদ ইউনিটের ব্লক সভাপতি বচনেশ কুমার, সাধারণ সম্পাদক বিজয় কুমার গুপ্ত, সিনিয়র সহ-সভাপতি বিনোদ সিং প্রমুখ জানিয়েছেন যে, বিএলওদের বারতি কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। নিহতের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা এবং তাঁর ছেলের জন্য একটি সরকারি চাকরির দাবি জানিয়ে তাঁরা এসডিএম’র কাছে একটি স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন। তারা বলেছেন, যদি এই দাবি শীঘ্রই পূরণ না হয়, তাহলে তারা আন্দোলন শুরু করতে বাধ্য হবেন। স্মারকলিপিটি স্পিড পোস্টের মাধ্যমে ডিএমএ’র কাছে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
উল্লেখ্য, চলতি মাসের গোড়ায় পূর্ব বর্ধমানে একজন বিএলও’র মৃত্যু হয়। নমিতা হাঁসদা নামে পেশায় ওই অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী মেমারির চকবলরামপুরের বাসিন্দা। ২৭৮ নম্বর বুথের বিএলও হিসাবে কাজ করছিলেন তিনি। কাজের চাপে তাঁর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয় বলে অভিযোগ। এছাড়াও সম্প্রতি মালবাজার ব্লকের রাঙামাটি গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীন একটি চা বাগানের ২০/১০১ বুথের বিএলও শান্তিমুনি এক্কা (ওঁরাও) নিজের বাড়িতে আত্মঘাতী হন। গত শনিবার রিঙ্কু তরফদার নামে এক বিএলও’র ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় নদীয়ায়। চাপড়া স্বামী বিবেকানন্দ হাইস্কুলের পার্শ্বশিক্ষিকা হিসাবে কর্মরত ছিলেন তিনি। চাপড়া ব্লকের চাপড়া-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের ২০১ নম্বর বুথে বিএলও’র দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি। শুক্রবার গভীর রাতে কৃষ্ণনগরের ষষ্ঠীতলায় নিজের বাড়িতে তাঁকে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। এক্ষেত্রেও কাজের চাপ ছাড়াও নির্বাচন কমিশনের বিভিন্ন কাজে সমন্বয়ের অভাবের অভিযোগ উঠেছে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে। 
বিজয় কুমার ভার্মার পরিবারের অভিযোগ খারিজ করে দিয়ে লখনউ জেলাশাসক বিশাক জি জানান, বিজয়কুমারের অসুস্থতার খবর পেয়ে তাঁকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ায় হয়।

Comments :0

Login to leave a comment