পহেলগামে সন্ত্রাসবাদী হামলাকে ঘিরে বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে। মঙ্গলবার রাঁচিতে দলীয় এক কর্মসূচিতে খাড়গে দাবি করেন, ‘তিন দিন আগে থেকেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদী হামলার খবর ছিল। তিনি গোয়েন্দা রিপোর্ট পেয়েছিলেন। সেই কারণেই জম্মু-কাশ্মীর সফর বাতিল করেন প্রধানমন্ত্রী।’ এর পরেই কংগ্রেস সভাপতি প্রশ্ন তোলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছে যদি সন্ত্রাসবাদী হামলার খবরই থাকে তাহলে তিনি সেই তথ্য নিরাপত্তা বাহিনীকে জানালেন না কেন?’ বস্তুত, খাড়গের এই অভিযোগ দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নতুন করে বিতর্ক উসকে দেবে বলেই মনে করা হচ্ছে। তবে খাড়গের অভিযোগকে উড়িয়ে দিয়ে বিজেপি’র প্রতিক্রিয়া, ‘এটা অবাঞ্ছিত’। ‘এই সময় নিরাপত্তা বাহিনীর মনোবলকেই আঘাত করেছেন’ বলে উলটে আবার খাড়গেকেই দুষেছে বিজেপি।
পহেলগামে সন্ত্রাসবাদী হামলার পর সর্বদল বৈঠক ডেকেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। সেই বৈঠকে অবশ্য প্রধানমন্ত্রী মোদী উপস্থিত ছিলেন না। তিনি সেদিন ব্যস্ত ছিলেন বিহারে নির্বাচনমুখী প্রচারে। তাঁর অনুপস্থিতি নিয়ে সরব হয় বিরোধীরা। সন্ত্রাসবাদী হামলায় ২৬ জনের হত্যার মতো বড় ঘটনাকে নিয়ে ডাকা সর্বদল বৈঠকে মোদী কেন থাকলেন না, সেই প্রশ্ন তুলেছিলেন খাড়গে সহ ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের নেতারা। সেই বৈঠকে অবশ্য পহেলগামে হামলায় নিরাপত্তা গাফিলতির কথা স্বীকার করে নেয় কেন্দ্রীয় সরকার। নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বড় ধরনের গলদ না থাকলে এমন হামলা চালাতে পারে না সন্ত্রাসবাদীরা বলে প্রথম থেকেই বলে আসছিল বিরোধীরা। বৈঠকে বিরোধীদের সেই অভিযোগকেই মান্যতা দিতে বাধ্য হয় কেন্দ্র।
এদিন ঝাড়খণ্ডের রাজধানী রাঁচিতে দলের ‘সংবিধান বাঁচাও’ সমাবেশে খাড়গে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিরাপত্তার ত্রুটির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীকে জড়িয়ে আরও গুরুতর প্রশ্ন তুলে দিলেন। সেই সমাবেশেই তিনি বলেছেন, ‘‘আমার কাছে খবর আছে যে পহেলগামে হামলার তিন দিন আগে প্রধানমন্ত্রীর কাছে গোয়েন্দা রিপোর্ট আসে। সেই রিপোর্টে বলা হয়, কাশ্মীরে এখন তাঁর যাওয়া সঠিক হবে না নিরাপত্তার কারণে। এর ভিত্তিতেই জম্মু-কাশ্মীর সফর বাতিল করেন প্রধানমন্ত্রী।’’ কংগ্রেস সভাপতির প্রশ্ন, ‘‘আপনার কাছে যদি সম্ভাব্য হামলার খবর আগাম এসে থাকে তাহলে আপনি কেন সেই তথ্য নিরাপত্তা বাহিনী, গোয়েন্দা বিভাগ, স্থানীয় পুলিশ কিংবা বিএসএফ-কে দিলেন না নাগরিকদের সুরক্ষার স্বার্থে?’’ তিনি বলেছেন, ‘‘সরকার যদি নিরাপত্তা গাফিলতির কথা স্বীকারই করে নেয় তাহলে পহেলগামে এতগুলি প্রাণহানির দায় নেবে না কেন?’’ এরই সঙ্গে তাঁর দলের অবস্থান ফের স্মরণ করিয়ে দিয়ে খাড়গে বলেছেন, ‘‘পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সরকার যে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে কংগ্রেস পাশে থাকবে। কারণ দেশই প্রধান, দল-ধর্ম-জাতপাতের ঊর্ধ্বে।
উল্লেখ করা যেতে পারে, কাশ্মীরে যে পর্যটকদের ওপর হামলা হতে পারে এমন খবর দিয়েছিল গোয়েন্দা দপ্তর। এই সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনও সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। সেই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, শ্রীনগরের পাশে জবরবান রেঞ্জের তলহাটিতে আশ্রয় নেওয়া সন্ত্রাসবাদীরা পর্যটকদের ওপর হামলা চালাতে পারে সেই মতো ওই অঞ্চলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। চালানো হয় তল্লাশি অভিযান। কিন্তু কোনও কিছুর সন্ধান না পাওয়া যাওয়ায় অভিযান বন্ধ করে দেওয়া হয় ২২ এপ্রিল। তাৎপর্যপূর্ণভাবে বৈসরণে পর্যটকদের ওপর সন্ত্রাসবাদী হামলা হয় ওই দিনটিতেই।
শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রীর জম্মু-কাশ্মীর যাওয়ার কথা ছিল ১৯ এপ্রিল। অথচ সেদিনই বন্দে ভারত ট্রেনের উদ্বোধনের কথা ছিল। ট্রেনটি চন্দ্রভাগা নদীর ওপর নির্মিত বিশ্বের সর্বোচ্চ সেতু দিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই সফর হঠাৎ-ই বাতিল করা হয়। এখান থেকেই রাজনৈতিক মহলের সন্দেহ, মোদী আগে জেনে গিয়েছিলেন হামলার কথা। অথচ সেই তথ্য জানাননি সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলিকে।
এদিকে, গোটা দেশে জাতগণনা বাস্তবায়নের আগে সর্বদল বৈঠক ডাকার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন খাড়গে। সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতেই জাতগণনা নিয়ে এগনো উচিত বলে দাবি করেছেন তিনি। শুধু তাই নয়, জাতগণনার ক্ষেত্রে কংগ্রেস শাসিত তেলেঙ্গানা মডেলকে অনুসরণ করার দাবিও জানিয়েছেন খাড়গে। একই সঙ্গে সংরক্ষণের ৫০ শতাংশ ঊর্ধ্বসীমা প্রত্যাহার এবং সংবিধানের ১৫(৫) ধারাকে মান্যতা দিয়ে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও সংরক্ষণ ব্যবস্থা চালুর দাবি উল্লেখ আছে খাড়গের চিঠিতে।
Pahalgam Kharge
সন্ত্রাসবাদী হামলার আগাম রিপোর্ট ছিল মোদীর কাছে, জানাননি কাউকে

×
Comments :0