শ্যামবাজারের শ্যাম পার্কের বিপরীতেই রয়েছে একটুকরো ইতিহাস। ৮৮নং রামকান্ত বসু স্ট্রিটের এই ' সেনবাড়ি 'টির সঙ্গে যোগসূত্র রয়েছে ভারতের সেরা ক্লাব মোহনবাগানের। হেমনাথ সেন , মোহনবাগানের প্রথম অধিনায়ক মণিলাল সেন এবং মোহনবাগানের প্রথম সভাপতি ভূপেন্দ্রনাথ বসুরা মিলে তৈরী করেছিলেন এই বাড়ি। সেই থেকেই মোহনবাগান ক্লাবের মতোই মাথা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল ঐতিহ্যশালী এই বাড়ি। তবে তার বর্তমান পরিস্থিতি খুবই করুণ। আধুনিকতার যুগে যেমন ধীরে ধীরে লোপ পাচ্ছে সভ্যতা , সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য। ঠিক তেমনই এই কুপ্রভাব থেকে রেহাই পায়নি মোহনবাগানের এই দন্ডায়মান ঐতিহাসিক ইমারত। বর্তমানে ভেঙে ফেলা হচ্ছে এই বাড়ি। ধূলিসাৎ করে দেওয়া হচ্ছে ঐতিহ্যে পরিপূর্ণ এই বাড়ির প্রত্যেকটি ইট , পাথরগুলি। এই বাড়ির ভিতের উপরেই হয়তো গড়ে উঠবে কোনো বহুতল ফ্ল্যাট। আধুনিকতার কাছে ফের একবার হার মানছে সংষ্কৃতি। তবে বাড়ি ভেঙে গুঁড়িয়ে ফেলা হলেও মুছে ফেলা যাবেনা এই বাড়ির সঙ্গে জড়িত মোহনবাগানের ইতিহাস । একসময় এই বাড়িই ছিল মোহনবাগানের তৃতীয় অফিস। শ্যাম পার্কের শ্যাম স্কোয়ার মাঠটি ছিল মোহনবাগানের তৃতীয় মাঠ। একসময় চুনী গোস্বামী , শৈলেন মান্নাদের পদধ্বনিতে উদ্ভাসিত হতো এই বাড়ি।ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রমাণস্বরূপ এই বাড়িতেই তারা রেখে গেছেন তাদের পদচিহ্নের ছাপ।
গণশক্তি ডিজিটালের পক্ষ থেকে এই বাড়ি সম্পর্কে বিবরণী পেশ করার উদেশ্যে সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন দুই সাংবাদিক। সেই বাড়ির কোনো ছবি এবং ভিডিও করতে গেলেই তাদের বাধা দেওয়া হয় সেই বাড়ির দুইজন নিরাপত্তারক্ষীর তরফ থেকে। তাদের বারংবার বোঝানোর সত্ত্বেও মেলেনি কোনো ছবি বা ভিডিও করবার অনুমতি।তবে সেই এলাকার এক স্থানীয় বাসিন্দা সূর্য সেন এই বাড়িটির বিষয়ে আমাদের জানিয়েছেন ' এই সেনবাড়ি হল আদি মোহনবাগান। আমি চিমার মতো মোহনবাগানের বিভিন্ন বড় বড় প্লেয়ার এবং কর্মকর্তাদের আসাযাওয়া দেখেছি এই বাড়িটিতে। এখানে বিশাল আকারে অন্নপূর্ণা পুজো হতো। মানবাধিকার চেয়ারম্যান এবং অস্থায়ী রাজ্যপাল শ্যামল সেনও আসতেন এই বাড়িটিতে '। স্থানীয় এই বাসিন্দার কথাতেই স্পষ্ট যে , এই এলাকায় এবং তাদের মনে কতটা প্রভাব বিস্তার করেছিল এই বাড়িটা। তাই এই বাড়ি ভেঙে ফেলার কারণে স্বাভাবিকভাবেই তারা বেশ মর্মাহত। তবে এই বাড়ির ধ্বংসস্তূপের উপরেই মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকবে মোহনবাগানের এক টুকরো ঐতিহ্য। যতদিন মোহনবাগান থাকবে ঠিক ততদিনই একসঙ্গেই সমোচ্চারিত হবে এই বাড়ির নাম।
Comments :0