Pahalgam terror attack

সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অঙ্গ এখন ঘৃণা প্রচার রোখাও

জাতীয়

‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বৃহত্তর লড়াইয়ের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসাবে ঘৃণাপ্রচারের বিরুদ্ধেও অহরহ সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে।’ পহেলগামে সন্ত্রাসবাদী হামলা এবং তারপরের ঘটনাক্রম ব্যাখ্যা করে পিপলস ডেমোক্র্যাসি (পিডি)-র সম্পাদকীয়তে বুধবার জোরের সঙ্গে একথা বলা হয়েছে। উল্লেখ করা হয়েছে, হিন্দুত্ব ব্রিগেডের ঘৃণা কাঠামো আরও বেশি রক্ত ঝরলে খুশি হতো। ওরা কিছুতেই মেনে নিতে পারেনি সংঘর্ষ বিরতির খবর। তার জেরে সোশাল মিডিয়া জুড়ে তাদের তাণ্ডব ভারতবর্ষের মূল্যবোধেই আঘাত হেনেছে। আন্তর্জাতিক মঞ্চের সামনে দেশের মাথা হেঁট করে দিয়েছে। দেশের বিদেশ সচিব এবং সশস্ত্র বাহিনীর মুখপাত্রদের ব্যাখ্যা করতে হয়েছে, ভারত ধর্মনিরপেক্ষ দেশ এবং এখানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত। কটাক্ষ করে পিডি সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্রি যে উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের নিশানা করবে এতে আর অবাক হওয়ার কি আছে! নিজেদের ‘নেতা’কে তো আর প্রশ্ন করতে পারবে না। হিমাংশী নারওয়ালের পর মিস্রির উপর উগ্র হিন্দুত্ব ব্রিগেডের এই কদর্য আক্রমণ, বিশ্রি ট্রোল করা তাদের মানসিকতাকে আরও প্রকট করে তোলে। সরকারের শীর্ষপদে থাকা রাজনীতিকরা কেউই এর বিরুদ্ধে মুখ খোলেননি। কোনও প্রতিবাদও করেননি। 
এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি থেকে রেহাই পাওয়ার উপায় কী উল্লেখ করে সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, ‘সরকারের উচিত স্পষ্ট ব্যাখ্যা দেওয়ার। প্রধানমন্ত্রীর একতরফা বক্তব্য কখনোই সংসদের গঠনমূলক আলোচনা এবং বিতর্কের পরিপূরক হতে পারে না। দক্ষিণ এশিয়ায় মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী শক্তির আগ্রাসন এক নতুন ধরনে চাগাড় দিয়ে উঠছে, শেষ তিন সপ্তাহে তা আরও ভালোভাবে স্পষ্ট হয়েছে।’ 
মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প টুইট করে ভারত-পাকিস্তানের সংঘর্ষ বিরতির ঘোষণা করেন গত শনিবার। সেই প্রসঙ্গ তুলে সম্পাদকীয়তে সমালোচনা করে বলা হয়েছে, ‘প্রধানমন্ত্রীর বিশ্বস্ত বন্ধুই তাঁকে বারবার বিব্রত করছেন। ট্রাম্পই যে মধ্যস্থতা করে সংঘর্ষ বিরতিতে রাজি করিয়েছেন, বারবার সেই দাবিই করে চলেছেন। সংসদে আলোচনা এড়িয়ে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীর উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন বলে ঠিক করতেই ফের ট্রাম্প মোদীর বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টা আগেই আবার নিজের পিঠ চাপড়েছেন। ফলে চাপে পড়ছে কেন্দ্রীয় সরকারই।’ সংসদে বিরোধীদের মুখোমুখি হতে মোদী ভয় পাচ্ছেন বলেও সরাসরি বলেছে পিডি সম্পাদকীয়। লেখা হয়েছে, ‘সন্ত্রাসবাদী হামলার পর এবং অপারেশন সিঁদুরের পর দু’বার সর্বদল বৈঠক হয়েছে। বিরোধীরা উপস্থিত থাকলেও প্রধানমন্ত্রী একটি বৈঠকেও থাকেননি। বিরোধীরা বারবার প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার ব্যাপারে যেমন জোর দিয়েছেন, তেমনই বিশেষ অধিবেশনের দাবিও তুলছেন। কিন্তু বিরোধীদের পূর্ণ সমর্থন থাকা সত্ত্বেও সংসদে মুখোমুখি হতে ভয় পাচ্ছে সরকার।’
সন্ত্রাসবাদী হামলার পর মুসলিম, বিশেষ করে কাশ্মীরিদের যেরকম জঘন্য ভাষায় আক্রমণ করা হয়েছে, সেই বিষয়ে সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, ‘এতদিন ধরে যে ঘৃণার চাষ হয়েছে, সেই বিষাক্ত প্রচার এই সময়ে আরও বাড়তে থাকে। স্বাভাবিকভাবেই যারা যুদ্ধের বিরোধিতা করেছেন, বিশেষ করে মুসলিমরা টার্গেট হয়ে যান। একইসঙ্গে মুসলিম এবং বিশেষ করে কাশ্মীরিদের বিরুদ্ধে বিষ প্রচার চলতে থাকে। কিন্তু সংঘর্ষ বিরতির জেরে ভারত-পাকিস্তান দু’দেশের সাধারণ মানুষ স্বস্তি পেয়েছেন। সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষজন সংঘর্ষবিরতির পক্ষে হবেন, এটাই স্বাভাবিক। মন থেকে তাঁরা চেয়েছেন যেন সংঘাত বন্ধ হয়ে যায়। পুঞ্চ এবং রাজৌরি কার্যত জ্বলতে থাকে। ছাত্রছাত্রী এবং পরিযায়ী শ্রমিকরা বিপদে পড়েছেন। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চার দিন ব্যাপী সামরিক সংঘর্ষ ১০ মে দুপুরের পর থেকে বন্ধ হলেও রাতের দিকে গোলাগুলির শব্দ শোনা গিয়েছিল। কিন্তু পরে দু’দেশের ডিজিএমও সংঘর্ষ বিরতির কথা নিশ্চিত করেন এবং জানান আপাতত যুদ্ধের কালো মেঘ কেটেছে।’ পহেলগামে সন্ত্রাসবাদী হামলায় ২৫ জন পর্যটক প্রাণ হারান। সেইসঙ্গে এক কাশ্মীরি ঘোড়াচালক ওই নিরীহ পর্যটকদের বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছেন। সেকথা উল্লেখ করে সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, একথা স্পষ্ট যে, ধর্ম চিহ্নিত করেই নিরপরাধ ওই পর্যটকদের খুন করা হয়েছে। সেনাবাহিনী সুস্পষ্ট প্রমাণ দিয়ে জানিয়েছে, এই ঘটনায় লস্কর-ই-তৈবার সংযোগ নিয়ে। ওই কঠিন পরিস্থিতিতে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না। প্রতিটি রাজনৈতিক দলই সন্ত্রাসবাদ দমন অভিযানে সরকারকে সাহায্য করেছিল। সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার ব্যবস্থাই করা হয়। সশস্ত্র বাহিনীকে অভিনন্দন জানিয়ে বলা হয়েছে, তাদের লক্ষ্যই ছিল, সন্ত্রাসাবাদীদের ঘাঁটিতে আক্রমণ চালানো, পাকিস্তানের কোনও সাধারণ মানুষ বা অন্য কোনও প্রতিষ্ঠানে আঘাত হানার লক্ষ্য ছিল না সেনাবাহিনীর।

Comments :0

Login to leave a comment