STORY — MRIDUL PAL | MUKTADHARA — 6 MAY 2024

গল্প — মৃদুল পাল | অভিনেত্রীর মৃত্যু রহস্য | মুক্তধারা — ৬ মে ২০২৪

সাহিত্যের পাতা

STORY  MRIDUL PAL  MUKTADHARA  6 MAY 2024

গল্প

অভিনেত্রীর মৃত্যু রহস্য

মৃদুল পাল

মুক্তধারা

দিল্লিস্থিত 'লোকনায়ক জয়প্রকাশ নারায়ন ডিটেকটিভ ইনষ্টিটিউট অফ ক্রিমিন'ল'জি এন্ড ফরেনসিক সায়েন্স' থেকে প্রত‍্যেক শিক্ষাবর্ষে ফাইনাল সেমিষ্টারের শিক্ষানবিসদের সমাজে সংঘটিত অপরাধজনিত ঘটনার তদন্ত পক্রিয়ার চাক্ষুষ পর্যবেক্ষণ করার জন‍্য দেশে বিদেশে পাঠানো হয়।সময়টা ঠিক দুহাজার আঠারোর ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহ।আচমকা অভিনেত্রীর মৃত্যু সংবাদে দেশজুড়ে তোলপাড় লেগে যায়।চায়ের দোকানের বেঞ্চ থেকে লোকসভার অধ‍্যক্ষের টেবিল পর্যন্ত-সব জায়গাতেই আলোচ‍্য বিষয় অভিনেত্রীর মৃত্যু। দেশশুদ্ধ সবাই সৌন্দর্যের অভিনেত্রীর মৃত্যুতে শোকালুপ্ত হয়ে গলে পড়ে।

ক্রিমিন'ল'জি ইনষ্টিটিউটের অধ‍্যক্ষ শ্রী হরি মেধা স্বামী 'ডুবাই পাব্লিক প্রসিকিউসন' এর ডিরেক্টরকে তাদের তদন্ত পক্রিয়ায় অবজারভার হিসেবে ইনষ্টিটিউটের একজন ছাত্রকে সুযোগ দেওয়ায় জন‍্য অনুরোধের সুরে এত্তেলা পাঠান।ডুবাই পাব্লিক প্রসিকিউসন অভিনেত্রীর কেসটার তদন্ত করছিলেন।সংস্থার ডিরেক্টর হালিম আল জিদান ফুড়ুৎ করে শ্রী মেধা স্বামীর অনুরোধ নসাৎ করেন।বলিউদের একজন বেতাজ বাদশ্বাহের(যার জন্মস্থান দিল্লি)মধ‍্যস্থতায় হালিম আল জিদান শ্রী মেধাস্বামীর অনুরোধ তামিল করতে বাধ‍্য হন।আর এই সুযোগেই হিমাংশু শেখর ভৌমিক (ওরফে হিশেভৌ) এক ডুবে ডুবাইতে পৌঁছে যান।

ডুবাইতে তদন্তকারী সংস্থার সদস‍্যবৃন্দের সাথে হিশেভৌ জুমেরা এমিরেটস হোটেলের কামড়া নাম্বার ২২০১ য়ে যান,ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। অভিনেত্রীর শৌহরের ভাষ‍্য শুনেন। শৌহরের  দুর্ঘটনা সংঘটিত সময়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। তাই সন্দেহের তীর ওর দিকে ছুঁটে সবার আগে।ডাক্তারদের রিপোর্ট পঢ়ে।সেই রিপোর্ট মতে কৃত্রিম সৌন্দর্য্যকে ধরে রাখার জন‍্য শরীরের ওপর অত‍্যাধিক প্লাস্টিক সার্জারি করানোর দরুন হৃদপিণ্ড দুর্বল হয়।তার পরিনতিতে হৃদপিণ্ড অচল হয়ে অভিনেত্রীর মারা যান। কিন্তু তার মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে চৌবাচ্চা থেকে। সেকথা আবার ডাক্তারের রিপোর্টে উল্লেখ নেই। হোটেলের গুপ্তক‍্যামেরার ফুটেজ দেখে। সেই ফুটেজে কাওকে ২২০১ এর ভেতর ঢুকতে দেখা যায়নি।

বিকেলবেলা 'ডুবাই পাব্লিক প্রসিকিউসনে'র জিম্মায় থাকা অভিনেত্রীর চেতনাশূণ্য শরীর তন্নতন্ন করে পর্যবেক্ষণ করে।ফাঁক হয়ে থাকা দুটো ঠোঁটের মধ‍্যিখান দিয়ে জিভ দেখা যায়।তার দেহবল্লরী সেই আগের মতনেই আকর্ষনীয়, যেন মৃতু্্যয়ো তার সৌন্দর্যের কামরাঙা আবেদনের নিকট নত স্বীকার করেছে।নিমীলিত চক্ষু,মুখের ডৌল,কাপাস দিয়ে বদ্ধ নাকের ছিদ্র,সমগ্র শরীরে ছড়িয়ে আছে এক ধরনের পেলবতা।মেঝে দাঁড়িয়ে একজন মহিলা কর্মী তার সমগ্র শরীরে একটি রাসায়নিক দ্রবের প্রলেপ লাগিয়ে দিচ্ছে,যাতে অগ্নিস্পর্শ পর্যন্ত এই সৌন্দর্য অক্ষুন্ন থাকে।

সন্ধে ছটা নাগাদ(ডুবাইর সময়সূচি অনুযায়ী) ডুবাইর তদন্তকারী সংস্থা একটি সাংবাদিক মাহফিলের আয়োজন করেন। অভিনেত্রীর মৃত্যু রহস্যের তদন্তের রিপোর্ট সাংবাদিকদের মাধ‍্যমে গোটা দুনিয়াকে জানানো হবে। হিশেভৌও সেই সংবাদ সন্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। তাকেও একটি প্রতিবেদন তৈরি করে শ্রীমেধা স্বামীর টেবিলে জমা দিতে হবে। ডিরেক্টর হালিম-আল-জিদান সাংবাদিকদের সামনে ঘোষণা করলেন , অভিনেত্রীর মৃত্যু স্বাভাবিক। আগামীকাল অভিনেত্রীর নশ্বরদেহ ভারতবর্ষকে প্রত‍্যার্পন করা হবে।কিন্ত হিশেভৌর মতে এই মৃত্যু স্বাভাবিক নয়,অস্বাভাবিক।

'লাভ ম‍্যারেজ' কি?একসাথে দুটো মানুষ যখন একে অপরের সাথে এক ছাদের তলায় থাকার তাগিদ অনুভব করে,সেটাই 'লাভ ম‍্যারেজ'। অভিনেত্রীর প্রেম পরিণয়ে আবদ্ধ হয়েছিলেন। তাহলে এক ছাদের তলায় থাকা সত্ত্বেও, কেন তার স্বামী অভিনেত্রীর মৃত্যুযাত্রার আর্তনাদ শুনতে পেলো না? অভিনেত্রীর জড়মুখখানার সমান্তরালে আরেকটি নারী প্রতিমা তার মন মগজুতে এসময় ভেসে উঠে,জ‍্যান্ত নারী প্রতিমা ,চয়নিকা গোস্বামীর। চয়নিকা হিশেভৌর বন্ধু। যে শর্তে একটি মেয়ে একটি ছেলের সাথে বন্ধুত্ব করে,ওদের বন্ধুত্বে সেই সব শর্ত পূরণ হয়।ওরা একে অপরের সাথে খাবার ভাগ করে নেয়, প্রফেসরের নোট ভাগ করে নেয়,জামা-কাপড় ভাগ করে নেয়,আর মাঝে মাঝে ভাগ করে নেয় রাতের বিছানা।ইদানিং সে লক্ষ্য করে,লাগামহীন শারীরিক ঘর্ষনের ফলে চয়নিকার শরীরের চামড়া কুঁচকাতে শুরু করেছে।মুখে ক্ষত যোনীর কামরাঙা দাগ।কোনো মরুপ্রদেশের অধুনাশুষ্ক নদীর মতন আবেদনহীন বক্ষবিভাজিকা। তার তুলনায় অভিনেত্রীর দেহবল্লরী সেই আগের মতনেই চিত্তাকর্ষনীয়।হিশেভৌ বুঝতে পারলেন অভিনেত্রীর মৃত্যু রহস‍্য তার সৌন্দর্যের রহস‍্যের মধ‍্যেই লুকিয়ে রয়েছে। আর সৌন্দর্যের রহস্য ভেদ না করা পর্যন্ত মৃত্যুর কারণ জানা যাবে না।

অভিনেত্রীর চামড়া কুঁচকাতে পারে না,গাত্রে কোনো দাগ উঠতে পারেনা,পৃথুলা হতে পারে না,কেশবর্ণ সাদা হতে পারবে না,অন্ততঃ বাজারের চাহিদা অনুযায়ী।তাই পৌঢ় বয়সেও তাকে যৌবনরোদ্গম সৌন্দর্যের প্রতিভু হিসেবেই নিজেকে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখতে হবে।তার জন‍্য শরীরে যত অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন সব করতে হবে। বাজার চাইছে অভিনেত্রীর মারা যেতে পারে, তবুও বৃদ্ধা হতে পারবে না। যে বাজার অভিনেত্রীর জন্ম দিয়েছে সেই বাজারেই অভিনেত্রীর মেরে ফেলেছে। অভিনেত্রীর মৃত্যুর জন‍্য বাজার দায়ী,হিশেভৌ তার প্রতিবেদনে লিখলো।
 

Comments :0

Login to leave a comment