চাকরিপ্রার্থী বেকারদের ওপর নৃশংস বর্বরতা চালালো ত্রিপুরার বিজেপি সরকারের পুলিশ। সোমবার আগরতলার রাস্তায় ফেলে পুলিশ পিটিয়েছে গর্ভবতী বুল্টি দেবনাথকে। রেহাই পাননি কিডনির অসুখে আক্রান্ত চাকরিপ্রার্থীও। নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য এসটিজিটি উত্তীর্ণ বেকারদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বিনা প্ররোচনায় পুলিশের আক্রমণে কম করে ৪০ জন জখম হয়েছেন। এর মধ্যে জয় ত্রিপুরা, পায়েল পাল, রাহুল রায় সহ ৮-৯ জনের আঘাত গুরুতর। আইজিএম হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে আহতদের। বেশ কয়েকজনের হাত ভেঙ্গে গেছে। চাকরিপ্রার্থীদের উপর বিজেপি সরকারের এই বর্বরোচিত হামলার তীব্র নিন্দা করেছেন সিপিআই (এম), কংগ্রেস সহ বিরোধী দলগুলি। চাকরি প্রার্থীদের উপর পুলিশের বর্বরতার বিরুদ্ধে এবং বেকারদের কাজের দাবিতে এদিন প্রতিবাদ মিছিল করে ডিওয়াইএফআই। 
পশ্চিমবঙ্গে টেট উত্তীর্ণদের মতই সিলেকশন টেস্ট ফর গ্র্যাজুয়েট টিচার বা এসটিজিটি উত্তীর্ণ বেকাররা দীর্ঘ দিন ধরে চাকরির জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছেন ত্রিপুরাতেও। পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সরকার চাকরি প্রার্থীদের ন্যায্য দাবি দমনে পুলিশি নিপীড়নকেই যেমন হাতিয়ার করেছে, ত্রিপুরার বিজেপি সরকারও সেই একই পথ নিয়েছে। বারে বারে বিভিন্ন স্তরের চাকরি প্রার্থীদের উপরে পুলিশি হামলা চালিয়েছে বিজেপি জোটের সরকার। 
শিক্ষা মন্ত্রীর বাড়ি থেকে অর্থমন্ত্রীর বাড়িতে বার কয়েক গেছেন তাঁরা। গত সপ্তাহে মুখ্যমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে ৪ ঘণ্টা বসিয়ে রেখেও তাদের সঙ্গে কথা বলেননি মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা। সোমবার সকালে ন্যায্য চাকরির দাবিতে শিক্ষা মন্ত্রী রতনলাল নাথের বাড়ির সামনে জমায়েত হয়ে তাদের সবার নিয়োগের দাবি জানাতে থাকেন। স্লোগান তোলা হয় শিক্ষা মন্ত্রী আগে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করুন। বর্তমান বিজেপি জোট সরকারের বয়স আর ২ মাসও নেই। জরুরি ভিত্তিতে নিয়োগ করা না হলে অনেকেরই জীবন শেষ হয়ে যাবে সেটাও বোঝানোর চেষ্টা হয়।
বেলা বাড়ার সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রীর দাবি মেনে ৫জন তাঁর সঙ্গে কথাও বলতে যান। অভিযোগ, আগের কথা থেকে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গিয়ে শিক্ষা মন্ত্রী বলেন, অর্থ দপ্তরের অনুমতি নেই তাই চাকরি হবে না। উচ্চ শিক্ষিত এই বেকারদের সঙ্গে কুরুচিকর কথাবার্তাও বলেন শিক্ষা মন্ত্রী। এমনই বক্তব্য প্রতিনিধি দলে যাওয়া বেকারদের। তখন চাকরির দাবিতে শিক্ষা মন্ত্রীর বাড়ির সামনে জমায়েত হওয়া এসটিজিটি উত্তীর্ণ বেকাররা রাস্তায় বসে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করতে থাকেন। তাদের বক্তব্য যেখানে ৬ হাজারের বেশি শিক্ষকের শূন্য পদ রয়েছে সেখানে কয়েকশো পাশ করা ছেলে-মেয়েদের কেন চাকরি দেবে না সরকার। 
মন্ত্রীর বক্তব্যে সন্তুষ্ট না হওয়ায় চাকরিপ্রার্থীরা বসে থাকেন মন্ত্রীর বাড়ির সামনে। তখন চাকরিপ্রার্থীদের উপর পুলিশ, টিএসআর, সিআরপিএফ লেলিয়ে দিয়ে আন্দোলনরত বেকারদের সামনে দিয়ে নিরাপত্তা রক্ষীদের ঘেরাটোপে বেরিয়ে যান শিক্ষা মন্ত্রী। তার কয়েক মিনিটের মধ্যেই চাকরিপ্রার্থী যুবক-যুবতীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পুলিশ। টেনে হিঁচড়ে রাস্তায় ফেলে লাঠিপেটা করা হয় হবু শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। সিআরপিএফ’র লাঠির আঘাতে আহত হয়েছেন মহিলারাও। পুরুষ পুলিশই লাঠি হাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে যুবতীদের উপর। একের পর এক বেকার যুবক-যুবতী আহত হন। সরকার ও পুলিশের বর্বরতায় আহত হওয়া অনেকেই হাসপাতালে ভর্তি হতে পর্যন্ত ভরসা পাচ্ছে না। 
গুরুতর আহতদের নিয়ে যাওয়া হয় আইজিএম হাসপাতালে। শুরুতে তাদের চিকিৎসা নিয়েও জরুরি বিভাগে টালবাহানা করা হয়। খবর পেয়ে দ্রুত আইজিএম হাসপাতালে পৌঁছে যান সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক জীতেন্দ্র চৌধুরি, রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বিধায়ক রতন ভৌমিক, নরেশ জমাতিয়া, আগরতলা পুর নিগমের প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র সমর চক্রবর্তী সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। আহতদের দ্রুত গতিতে চিকিৎসা শুরুর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। শিক্ষা মন্ত্রীর নির্দেশে হওয়া পুলিশের বর্বরতার তীব্র নিন্দা করেছেন জীতেন্দ্র চৌধুরি। আন্দোলনকারীদের পাশে থাকার সঙ্গে দোষী পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে সিপিআই(এম) উদ্যোগী হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। 
ত্রিপুরায় বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে ২০১৬ সাল থেকেই এসটিজিটি-র মাধ্যমে নবম ও দশম শ্রেণির জন্য শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগ শুরু হয়। ২০১৮ সালের শুরুতে বামফ্রন্ট সরকার চলে যাওয়ার আগে পর্যন্ত সাড়ে ৩ হাজারের বেশি শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগ করে। বিজেপি জোট সরকার ৫বছর ক্ষমতায় থেকে মাত্র ৬১৭ জন নবম ও দশম শ্রেণির জন্য শিক্ষক নিয়োগ করেছে। অথচ স্কুলগুলিতে শিক্ষক নেই। শিক্ষকের দাবিতে প্রায় প্রতিদিনই পথে নামছে ছাত্র ছাত্রীরা। কিন্তু নিয়োগ প্রক্রিয়ার গল্প করলেও বাস্তবে নিয়োগ করছে না বিজেপি জোট সরকার। যেখানে ৬ হাজারের বেশি শিক্ষকের শূন্য পদ রয়েছে সেখানে কয়েকশো এসটিজিটি উত্তীর্ণদের কেন নিয়োগ করা হচ্ছে না, এটাই বেকারদের প্রশ্ন।
প্রথম বছরে ৫০ হাজার সরকারি চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সরকারে বসেছিল বিজেপি জোট সরকার। এখন দুই মাসও নেই বিধানসভা নির্বাচন। এতদিন পর্যন্ত মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে এখন প্রতিবাদী কণ্ঠ থামাতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনেও পুলিশ লেলিয়ে দিচ্ছে। অপশাসন আড়াল করতে সরকারি টাকায় চালিয়ে যাচ্ছে সুশাসনের প্রচার। দুই বছর আগে গ্রুপ সি এবং ডি নিয়োগের পরীক্ষা নেওয়া হলেও নিয়োগ করা হয়নি। চাপের মুখে কয়েকদিন আগে জেআরবিটি-র ফল প্রকাশ করা হয়েছে। নিয়োগ হয়নি। নার্স থেকে শিক্ষক অথবা ১০৩২৩ চাকরিচ্যুত শিক্ষকরা তাদের নিয়োগের দাবি জানালেই ত্রিপুরার বিজেপি সরকার বারে বারে পুলিশ দিয়ে বর্বরতা চালিয়েছে। এদিন আরও একবার তার সাক্ষী হলো আগরতলা।
Tripura
ত্রিপুরায় চাকরিপ্রার্থীদের ফের রাস্তায় ফেলে পেটালো পুলিশ
 
                                    
                                
                                    ×
                                    ![]() 
                                
                                                         
                                         
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                    
Comments :0