Why Modi is afraid

মোদী ভয় পাচ্ছেন কেন?

সম্পাদকীয় বিভাগ

সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকার সঙ্গে অতিরিক্ত ভাব জমাতে গিয়ে এবং অতি দক্ষিণপন্থী স্বৈরাচারী মানসিকতার ডোনাল্ড ট্রাম্পকে প্রাণপ্রিয় বন্ধু বানাতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শুধু নিজে নাস্তানাবুদ হচ্ছেন না ভারতের মান মর্যাদাকেও ধূলায় মেশাবার ব্যবস্থা করেছেন। একইভাবে জায়নবাদী যুদ্ধবাজ দেশ ইজরায়েলের সঙ্গে গলায় গলায় ভাব জমিয়ে এবং মানবিক গুণাবলীহীন গণহত্যাকারী প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর দোস্ত হতে গিয়ে ভারতের জন্য আর কত বিপদ ডেকে আনছেন তা অদূর ভবিষ্যতেই টের পাওয়া যাবে। আসলে ভারতের হিন্দুত্ববাদীরা যেহেতু আদর্শগতভাবে ধর্মনিরপেক্ষতা ও উদার গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, একদলীয় আধিপত্যবাদী ও স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থা পছন্দ করে তাই অন্য দে‍শের তেমন নেতা বা শাসকদের সঙ্গেই ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর চেষ্টা করে। আমেরিকার ট্রাম্প, ইজরায়েলের নেতানিয়াহু, ইতালির মেলোনি তাই নরেন্দ্র মোদীদের প্রথম পছন্দের। উদার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা যেহেতু মুক্ত চিন্তার পরিসর দেয়, ধর্মীয় স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দেয়, বিরুদ্ধ মতকে পুরোপুরি অস্বীকার করে না তাই উদার গণতান্ত্রিক পুঁজিবাদী দেশগুলি তাদের কাছে মন্দের ভালো। তাই হিন্দুত্ববাদীরা ক্ষমতায় আসার পর বি‍‌শেষ করে মোদীর নেতৃত্বে ক্ষমতা দখলের পর ভারতের চিরাচরিত প্রতিষ্ঠিত বিদেশনীতি দ্রুত বদলে যাচ্ছে। তাই স্বাধীন প্যালেস্তাইনের দাবি থেকে সরে অবস্থান পালটে মোদীরা ইজরায়েলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা দ্রুত বাড়িয়েছেন। আজ নেতানিয়াহু নেতৃত্বাধীন ইজরায়েল নৃশংসতা ও বর্বরতার জীবন্ত মূর্তি হয়েও ভারতের সবচেয়ে কাছের বিশ্বস্ত বন্ধু। গণহত্যা, যুদ্ধোপরাধ সহ যাবতীয় অমানবিক কার্যকলাপের জন্য সারা বিশ্বে ইজরায়েল ঘৃণিত ও ধিকৃত হলেও অন্ধের মতো মোদীরা ইজরায়েল তোষণায় মগ্ন। গাজায় গত ২০ মাস ধরে নিরন্তর গণহত্যা চালিয়ে প্রায় ৭০ হাজার নিরীহ মানুষের হত্যা দেখার পরও ইজরায়েলী মোহ কাটছে না মোদীদের। ইজরায়েলের বিরুদ্ধে তাই সম্পূর্ণ নীরব ভারত। গণহত্যার নিন্দা নেই, অবিলম্বে গণহত্যা বন্ধের দাবি নেই। খাদ্যহীন বুভুক্ষু মানুষকে ত্রাণ বন্ধ করার বিরুদ্ধেও কোনও কথা নেই। অর্থাৎ ইজরায়েল যত অপরাধ করুক, যত মানুষ খুন করুক, যত ধ্বংসলীলা চালাক, যত মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনুক মোদীর ভারত এর বিরুদ্ধে কোনও কথা বলবে না। বরং পরোক্ষে সমর্থন ও সাহায্য করে যাবে।
ট্রাম্পের সঙ্গে মোদীর গলাগলি-কোলাকুলির বন্ধুত্ব এতটাই গভীর ছিল যে আমেরিকায় গিয়ে ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিয়েছিলেন মোদী। তেমনি ট্রাম্পকে গুজরাটে ডেকে এনে নমস্তে ট্রাম্প নামে দুনিয়াকে চমকে দেবার এলাহি অনুষ্ঠান করেছিলেন মোদী। সেই ট্রাম্প এখন সকাল বিকেল বেইজ্জতি করে চলেছেন মোদীকে। কিন্তু মোদী কিছু বলার সাহস দেখাতে পারছেন না। নীরবে সব হজম করে যাচ্ছেন। পহেলগামে সন্ত্রাসবাদী হামলার পর পাক-ভারত সামরিক সংঘাত পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের দিকে গড়ানোর সময় হঠাৎ আসরে নেমে মোদীকে কার্যত বাক্‌শক্তিহীন করে নিজের কৃতিত্ব জাহির করতে থাকেন। সরাসরি দাবি করেন দু’টি পরমাণু শক্তিধর দে‍‌শের মধ্যে যুদ্ধ তিনি বন্ধ করেছেন। দু’দেশের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধের হুমকি দিয়ে তিনি যুদ্ধ থামাতে রাজি করিয়েছেন বলেও দাবি করেছেন। চার দিনের সমর সংঘাত বন্ধ করা থেকে মোট ১৪ বার তিনি নিজের কৃতিত্ব প্রচার করেছেন। অথচ একবারের জন্যও মোদী মুখ ফুটে বলেননি যে ট্রাম্প ঠিক বলছেন না। বলতে পারেন‍‌নি কাশ্মীর নিয়ে তৃতীয় পক্ষকে ভারত মান্যতা দেয় না, কোনও মধ্যস্থতা মানে না। ট্রাম্পের বার বার মধ্যস্থতার দাবি আর মোদীর নির্বাক নীরবতা এটাই প্রতিষ্ঠিত করে দেয় যে, ট্রাম্পই ঠিক বলছেন। সর্বশেষ ৩৭ দিন পর ট্রাম্পকে ফোন করে মোদী নাকি ভারতের অবস্থানের কথা জানিয়েছেন। কিন্তু সেটা মোদী নিজের মুখে না জানিয়ে বিদেশ সচিবকে দিয়ে প্রকাশ্যে বিবৃত করিয়েছেন। মোদীর দুর্ভাগ্য তার কিছুক্ষণ পরই ফের ট্রাম্প দাবি করেছেন তিনি পাক-ভারত যুদ্ধ থামানোর আসল নায়ক। যথারীতি মোদীর তরফে ট্রাম্পকে মিথ্যাবাদী আখ্যা দেওয়া হয়নি। ভারতবাসী বুঝতে পারছেন ট্রাম্প যদি অসত্য দাবি করে থাকেন মোদীরা জোর গলায় বিরোধিতা করছেন না কেন? মোদী কাকে ভয় পাচ্ছেন?

Comments :0

Login to leave a comment