EDITORIAL

জেতার নিরাপত্তার খোঁজে প্রধানমন্ত্রী

সম্পাদকীয় বিভাগ

ছত্তিশগড়ে নির্বাচনী জনসভায় ভাষণ দিতে গিয়ে নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেছেন আগামী আরও পাঁচ বছর তাঁর সরকার দেশের ৮০ কোটি মানুষকে বিনামূল্যে খাদ্য সরবরাহ করবেন। অর্থাৎ রেশনে মাথাপিছু মাসে পাঁচ কেজি চাল বা গম বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে। আগামী বছর লোকসভা নির্বাচনের পর তাঁর সরকার আদৌ থাকবে কিনা সেটাই নিশ্চিত নয় অথচ তিনি আগাম পাঁচ বছরের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিলেন। তিনি হয়তো ভুলে গেছেন তাঁর প্রধানমন্ত্রিত্বের মেয়াদ আগামী জুন মাস পর্যন্ত, সারাজীবনের জন্য নয়। তাই সাম্প্রতকিকালে নানা বিষয়ে কখনও ২০৩০ সালের প্রতিশ্রুতি, কখনও ২০৩৫ সালের, কখনও ২০৪০ সালের, এমনকি ২০৪৭ সালের প্রতিশ্রুতি পর্যন্ত দিতে পিছপা হচ্ছেন না। তিনি বড়জোর আগামী জুন মাস পর্যন্ত বিনামূল্যে খাদ্য দেবার সিদ্ধান্ত দিতে পারেন। পরের সিদ্ধান্ত পরে যে সরকার আসবে তারা নেবে। আগামী লোকসভা নির্বাচন উপলক্ষে তাঁর দল যে ইশ্‌তেহার প্রকাশ করবে সেখানে তিনি অবশ্যই আগামী পাঁচ বছর বিনামূল্যে খাদ্য দেবার প্রস্তাব বা প্রতিশ্রুতি দিতে পারেন। কিন্তু তিনি পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের সময় ছত্তিশগড়ে গিয়ে এমন সিদ্ধান্তও ঘোষণা করে অনধিকার চর্চা করেছেন। তাছাড়া নির্বাচনী প্রচার সভায় প্রধানমন্ত্রী এধরনের কোনও প্রতিশ্রুতি দিতে বা সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতে পারেন কিনা সেটা নিয়েও জোর বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিরোধীদের সরাসরি অভিযোগ প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনবিধি লঙ্ঘন করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে অবিলম্বে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশনে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ জমাও পড়ে গেছে। দে‍‌শের নেতা হিসাবে যেখানে প্রধানমন্ত্রী উচিত ছিল নির্বাচন বিধি অক্ষরে অক্ষরে পালন করে আদর্শ দৃষ্টান্ত স্থাপন করা যাতে সকলে তাঁকে অনুসরণ করতে পারে, তার বদলে তিনি নিজেই বিধি লঙ্ঘন করে বসে আছেন।
গরিব মানুষকে সরকারি তরফে নানাভাবে আর্থিক সহায়তা দান, জনকল্যাণমুখী প্রকল্প, ভরতুকি দিয়ে পণ্য ও পরিষেবার মূল্য কম রাখা ইত্যাদিকে বরাবর রেউড়ি সংস্কৃতি বলে বিদ্রূপ করে বিরোধীদের আক্রমণ করে এসেছেন নরেন্দ্র মোদী। এখন দেখা যাচ্ছে তিনিই হয়ে উ‍‌ঠেছেন রেউড়ি সংস্কৃতির প্রধান মুখিয়া।
খাদ্য নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী দেশের ৮০ কোটি গরিব মানুষকে মাসে পাঁচ কেজি খাদ্যশস্য দেবার যে প্রকল্প চালু আছে তার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে আগামী মাসে (ডিসেম্বর)। আন্দাজ ছিল চলতি বিধানসভা নির্বাচন ও ছ’মাস পর লোকসভা নির্বাচনের কথা ভেবে এই প্রকল্প আরও ছ’মাস বাড়ানো হবে। কিন্তু বাস্তবে ছ’মাস নয় এক লাফে পাঁচ বছর বাড়িয়ে দিয়েছেন মোদী। প্রসঙ্গত যে খাদ্য নিরাপত্তা আইনের আওতায় মোদীর এই বিনামূল্যে খাদ্য বিতরণের ঘোষণা সেই আইন তৈরি হয়েছিল প্রথম ইউপিএ সরকারের আমলে প্রধানত বামপন্থীদের চাপে। তখন মোদীর দল বিজেপি এই আইনের বিরুদ্ধে নানা বাহানায় বাধা সৃষ্টি করেছিল যাতে বিল পাশ না হয়। পরিহাস এটাই যে আজ সেই আইনকেই আশ্রয় করে মোদীরা ভোটে জিততে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।

Comments :0

Login to leave a comment