ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধনের কাজে চুক্তিবদ্ধ ডেটা এন্ট্রি অপারেটরদের ব্যবহার নিষিদ্ধ করার নির্দেশিকা জারি করল নির্বাচন কমিশন। 
ভোটার তালিকার সংশোধন প্রক্রিয়া জেলাশাসকরাই ডিইও(ডিস্ট্রিক্ট ইলেকশান অফিসার) হিসাবে কমিশনের কাজে যুক্ত হন। সেই ডিইও’দের কাছে নির্বাচন কমিশনের কলকাতার সিইও মনোজ আগরওয়াল গত বুধবার একটি নির্দেশিকা পাঠিয়েছেন। ডিইও’দের পাশাপাশি ইআরও(ইলেকশান রেজিস্ট্রেশন অফিসার), এইআরও(অ্যাসিস্ট্যান্ট ইলেকশান রেজিস্ট্রেশন অফিসার)দের  উদ্দেশ্যে লেখা নির্দেশিকায় স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, আইটি সংক্রান্ত কাজে যুক্ত ডেটা এন্ট্রি অপারেটরদের স্থায়ী সরকারি কর্মচারী হিসাবে নিশ্চিত করতে হবে। এমনকি নির্দেশে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, নির্বাচনের কাজে যুক্ত ডেটা এন্ট্রি অপারেটদের রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দপ্তরের অধীনে আইএমএফএস (ইন্ট্রিগ্রেটেড ফিনান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম) পোর্টাল থেকে বেতন প্রাপ্তির বিষয়টিও জেলশাসকদের নিশ্চিত করতে হবে। 
এরআগে শাসক দলের মুখাপেক্ষি হয়ে থাকা চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের বিএলও(বুথ লেবেল অফিসার) পদে রেখে যাবতীয় অন্যায় করার রাস্তা বন্ধ করার পথে হেঁটেছিল কমিশন। অস্থায়ী, চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের পরিবর্তে সরকারের স্থায়ী কর্মচারীদের বিএলও করার নির্দেশ এসেছিল। রাজ্যে এসআইআর চালু করার আগে চুক্তিভিত্তিক ডেটা এন্ট্রি অপারেটদের ভোটার তালিকার কাজ থেকে সরিয়ে দেওয়ার পথ তৈরি করল কমিশন। বৃহস্পতিবারই তৃণমূল ছাত্র পরিষদের এক সভায় মমতা ব্যানার্জি ফের নির্বাচন কমিশনকে তীব্র কটাক্ষ করেছেন। 
ঘটনা হলো, এরাজ্যের সরকারি ব্যবস্থায় নিশ্চিতভাবে কিছু স্থায়ী ডেটা এন্ট্রি অপারেটর পদে কর্মচারী আছে। কিন্তু তা পর্যাপ্ত নয়। সরকারের বিভিন্ন দপ্তর থেকে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে চুক্তিবদ্ধ ডেটা এন্ট্রি অপারেটর পদে কর্মীর সংখ্যায় বেশি। এমনকি জেলা প্রশাসনের অধীনে ‘ইলেকশান সেল’ কর্মরত ডেটা এন্ট্রি অপারেটরদের অনেকেই আবার শুধু চুক্তিবদ্ধই নয়, বিভিন্ন বেসরকারি এজেন্সি থেকে নিয়ে নির্বাচনের কাজে যুক্ত। ফলে কমিশনের নয়া নির্দেশিকা হাতে পাওয়ার পর রাজ্য প্রশাসন কী ব্যবস্থা নিতে চলেছে তা সময় বলবে। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের কাছেও সরকারি ডেটা এন্ট্রি অপারেটরের অপ্রতুলতা অজানা নেই। তাই জেলাশাসকদের নির্দেশিকায় জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, পর্যাপ্ত স্থায়ী সরকারি ডেটা এন্ট্রি অপারেটর না পাওয়া গেলে সরকারের গ্রুপ সি কর্মচারীদের এই কাজে ব্যবহার করতে হবে।
আসলে নির্বাচনের কাজে ভোটার তালিকায় নাম নথিভুক্ত করা থেকে বিয়োজনের কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এই ডেটা এন্ট্রি অপারেটররা। সম্প্রতি পূর্ব বারুইপুর ও ময়না বিধানসভা কেন্দ্রে ভোটার তালিকায় ভুয়ো নাম নথিভুক্ত করার তদন্তে ডেটা এন্ট্রি অপারেটরদের ভূমিকা নজরে এসেছে কমিশনের। ভুয়ো নাম নথিভুক্ত করার তদন্ত করতে গিয়ে চার সরকারি আধিকারিকের পাশপাশি ময়না বিধানসভা কেন্দ্রে এক ডেটা এন্ট্রি অপারেটরকে দোষী হিসাবে চিহ্নিত করেছিল কমিশন। কিন্তু সরকারি আধিকারিকদের বিরুদ্ধে কমিশন সাসপেন্ড করার পাশাপাশি এফআইআর করার নির্দেশ দিয়েছিল রাজ্য সরকারকে। কিন্তু পূর্ব বারুইপুর কেন্দ্রের অভিযুক্ত ডেটা এন্ট্রি অপারেটরের বিরুদ্ধে সাসপেন্ড করার কোনও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেনি কমিশন। চুক্তিবদ্ধ কর্মী হওয়ার জন্য শুধু এফআইআর করার নির্দেশ দিয়েছিল কমিশন। 
এখন নয়া নির্দেশিকা জারি করে নির্বাচন কমিশন আসলে ডেটা এন্ট্রির কাজে যুক্ত কর্মচারীদের সরকারি কর্মী হিসাবে নিয়োজিত করে প্রশাসনিক দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে চেয়েছে। নির্বাচন কমিশনের এক শীর্ষ আধিকারিক জানিয়েছেন,‘‘ ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধনের আগে বিএলও(বুথ লেবেল অফিসার) দের সরকারের স্থায়ী কর্মচারী হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছিল। অতীতে সরকারের অস্থায়ী কর্মচারী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী থেকে গ্রাম পঞ্চায়েতের চুক্তিবদ্ধ কর্মচারীদের বিএলও করা হতো। এবার তা বন্ধ করা হয়েছে। ভোটার তালিকার সংশোধনের কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় থাকেন ডেটা এন্ট্রি অপারেটররা। তাঁরা সরকারের স্থায়ী কর্মীচারী হিসাবে নিয়োজিত হলে কর্তব্যে গাফিলতি হলে জনপ্রতিনিধিত্ব আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার রাস্তা খোলা থাকবে। নির্ভুল ভোটার তালিকার জন্য এই পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।’’ 
নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে ইআরও ও এইআরও’দের কাছে নির্দেশিকায় একটি বিষয়ে সাবধান করে দেওয়া হয়েছে। কোনোভাবেই ইআরও ও এইআরও পদাধিকারীরা নির্বাচনী পোর্টালের ‘লগইন আইডি’ মোবাইল ‘ওটিপি’ কোনোভাবেই ডেটা এন্ট্রি অপারেটর সহ অন্য কোনো সরকারি কর্মচারীদের কাছে যেন না দেয়। এই প্রশ্নে কোনও শিথিলতা আগামীদিনে কমিশন বরদাস্ত করবে না বলে নির্দেশিকায় জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, এখন বছরভর ভোটার তালিকায় নাম নথিভুক্ত করা যায়। ফলে অতীতে নির্বাচনের কাজে যুক্ত ইআরও ও এইআরও পদাধিকারীরা তাঁদের লগইন আইডি, মোবাইল নাম্বার সহ সবটাই ডেটা এন্ট্রি অপরাটেরদের কাছে দিয়ে দিতেন। সাম্প্রতিক ভুয়ো ভোটার নথিভুক্ত করার তদন্ত করতে গিয়ে কমিশনের এই বিষয়টি নজরে আসে। পূর্ব বারুইপুর, ময়না এমনকি রাজ্যের আরও বেশ কিছু বিধানসভা কেন্দ্রে অস্বাভাবিক হারে ভোটার তালিকায় নাম নথিভুক্ত করার তদন্ত করে কমিশন। তাতেই স্পষ্ট হয়ে যায়, ইআরও’দের নিজস্ব সব তথ্যকেই কার্যত নিয়ন্ত্রণ করছে অস্থায়ী ডেটা এন্ট্রি অপারেটররাই। ফলে ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন শুরু করার আগে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে আধিকারিকদের।
SIR BENGAL
এসআইআর: চুক্তির নয়, ডেটা এন্ট্রির কাজে সরকারি কর্মীই চাইছে কমিশন
                                    
                                
                                    ×
                                    
                                
                                                        
                                        
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
Comments :0