প্রবন্ধ
মুক্তধারা
বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহার দেশপ্রেম
তপন কুমার বৈরাগ্য
২০২৫ ডিসেম্বর ১৮ | বর্ষ ৩
মেঘনাদ সাহা দুটি কারণে স্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে আছেন।
তিনি সাহা আয়নিকরণ সমীকরণ উদ্ভাবন এবং সাহা
ইনস্টিটিউট অফ নিউক্লিয়ার ফিজিক্স প্রতিষ্ঠানের জন্য।
তিনি ১৮৯৩খ্রিস্টাব্দের ৬ই অক্টোবর ঢাকা জেলার শেওড়াতলি
গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।প্রাথমিক শিক্ষা গ্রামের টোলেই শুরু
করেন।ছাত্রজীবন থেকেই তিনি জাতীয়তাবাদী চেতনায়
উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন।১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি ভর্তি হলেন ঢাকা
কলেজিয়েট স্কুলে।তখন তার বয়েস বারো বছর।তখন লর্ড
কার্জন বাংলাদেশকে দ্বিখন্ডিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।সপ্তম
শ্রেণির একজন ছাত্র মেঘনাদের হৃদয় বিদ্রোহের আগুনে
জ্বলে উঠল। একদিন ছোটোলাট ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল
পরিদর্শনে এলেন।মেঘনাদ সকল ছাত্রদের বললেন--বঙ্গভঙ্গের
বিরুদ্ধে এই তো প্রতিবাদের উপযুক্ত সময়।ছোটোলাট আমাদের
ক্লাসে প্রবেশ করলে আমরা ক্লাস বয়কট করবো।যেমন কথা তেমন
কাজ।ফুলার সাহেব ক্লাসে প্রবেশ করার সাথে সাথে মেঘনাদ
ক্লাসের বাইরে বেড়িয়ে গেল।তার দেখাদেখি অন্যান্য ছাত্ররাও
তা পিছন পিছন বেড়িয়ে গেল।মেঘনাদের এই আচরণ দেখে
ফুলার সাহেব খুব রেগে গেলেন।তিনি প্রধান শিক্ষককে নির্দেশ
দিলেন মেঘনাদকে স্কুল থেকে বিতাড়িত করতে এবং তার বৃত্তি
বন্ধ করে দিতে।প্রধানশিক্ষক মহাশয়কে বাধ্য হয়ে ফুলার সাহেবের
আদেশ মানতে হলো।
সালটা ১৯১৪ ।প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়েছে।বিপ্লবী বাঘাযতীন
এবং পুলিন দাসের সঙ্গে তার যোগোযোগ গড় উঠেছে।
পুলিন দাস ছিলেন ঢাকা অনুশীলন সমিতির প্রতিষ্ঠাতা।
জার্মানী থেকে জলপথে অস্ত্র আসবে।সেই অস্ত্র পৌঁছে দেবার
দায়িত্ব বিপ্লবীরা দিলেন মেঘনাদ এবং কয়েকজন দেশপ্রেমিকের
উপর।কিন্তু গোপনসূত্রে ইংরেজরা এই খবর জানতে পারে।এরপর
তিনি গণিতে এম এস সি পরীক্ষায় প্রথম হয়েও ভারতীয় ফাইন্যান্স
পরীক্ষায় ইংরেজ সরকার তাকে বসতে দিলেন না।ইংরেজ সরকারের অভিযোগ তার সাথে বিপ্লবীদের যোগ আছে।তাই
তাকে এই পরীক্ষায় বসার অনুমতি দিলেন না।সুতরাং মেঘনাদের একটা উঁচু কর্মজীবনে প্রবেশ করা হলো না।
এটা ভারতবাসীর কাছে একটা শাপে বর হলো। পরবর্তী ক্ষেত্রে
আমরা মেঘনাদকে পেলাম একজন শ্রেষ্ঠ দক্ষ প্রশাসক এবং
একজন শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী হিসাবে।
Comments :0