East Medinipur Deputation

বিডিও চুপ, নির্দেশ দিচ্ছেন তৃণমূল নেতারা

জেলা

East Medinipur Deputation


দেশের হকার আইন রাজ্যে মানা হবে না। এ রাজ্যে এই সরকারের আইন মানা হবে’। বিডিও’র ঘরে বসে এমনই মন্তব্য ছুঁড়লেন তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা। বলেছেন, উচ্ছেদের মুখে পড়া হকারদের। 
সুতাহাটা বিডিও অফিস তৃণমূলের এমন ঔদ্ধত্যে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়েছে হকারদের মধ্যে। রাস্তা চওড়া করার সরকারি নোটিস না থাকলেও ঠিকাদারের লোক নিয়মিত তাঁদের শাসাচ্ছে বলে অভিযোগ। ডেপুটেশন দিতে যান পশ্চিমবঙ্গ স্ট্রিট ভেন্ডার্স ইউনিয়নের নেতৃত্বে ছোট দোকান ব্যবসায়ী, হকারদের প্রতিনিধিদল। এমনকি বিডিও তৃণমূল নেতাদের সরিয়ে একান্তে কথা বলতে পর্যন্ত রাজি হননি। এলাকায় ছড়িয়েছে তুমুল ক্ষোভ।


তাঁরা বলেছেন, আদালতের স্থগিতাদেশ থাকলেও রাস্তা সম্প্রসারণের নামে উচ্ছেদের হুমকি চলছে। দোকান ভেঙে দিতে বলা হচ্ছে মাইক প্রচার করে। 
২০১৪ সালের কেন্দ্রীয় হকার আইনকে মান্যতা দেওয়া, পুনর্বাসন ছাড়া উচ্ছেদ নয়, প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ সহ অন্যান্য দাবিতে বিডিও'র কাছে ডেপুটেশন দিতে পৌঁছান চৈতন্যপুর বাজারের কয়েকশো দোকানদার। তাঁদের প্রতিনিধি দল বিডিও'র কাছে দাবি সনদ নিয়ে পৌঁছালে দেখা যায় আগে থেকেই ঘরে বসে চৈতন্যপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তৃণমূল নেতা তপন মান্না। পঞ্চায়েত সদস্য তৃণমূল নেতা অরুণ দিন্দাও ছিলেন। 
সিআইটিইউ অনুমোদিত স্ট্রিট ভেন্ডার্স ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ বিডিও’কে বলেন আমরা দাবি নিয়ে একান্তে কথা বলতে চাই। তখন বিডিও’কে বলতে শোনা যায়, ‘আপনারা এঁদের সামনেই বলুন।’ বাধ্য হয়েই তৃণমূল নেতাদের সামনে দাবির উল্লেখ করতে হয় নেতৃবৃন্দকে। তখনই এমন মন্তব্য তৃণমূল নেতাদের।
কুকড়াহাটি থেকে চৈতন্যপুর বালুঘাটা পর্যন্ত রাস্তা সম্প্রসারণের টেন্ডার হয় ২০১৯ সালে। ২০২২ সালের মধ্যে চৈতন্যপুর থেকে বালুঘাটা পর্যন্ত কাজ হয়েছে। এ বছরই চৈতন্যপুর থেকে কুকড়াহাটি পর্যন্ত রাস্তার কাজ শুরু হয়েছে। এই রাস্তার দু’পাশে কয়েকশো দোকানদারকে দোকান ভেঙে নেওয়ার জন্য টোটো করে মাইক প্রচার করা হয়েছে। 


দোকানদারদের অভিযোগ, মাইকে প্রচারের পাশাপাশি ঠিকাদার তার লোক লাগিয়ে প্রত্যেক দোকানদারকে দোকান ভেঙে দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। অথচ কোনও সরকারি নোটিশ নেই। রাস্তা কতটা চওড়া হবে, পরিকল্পনা কী, সে সম্পর্কে জানানো হচ্ছে না। 
জেলাশাসক, গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান, বিডিও, পূর্ত দপ্তরে পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে আবেদন করছেন কয়েকশো দোকানদার। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা করা হয়নি। স্বপন মাইতি নামে এক দোকানদার তথ্যের অধিকার আইনে জানতে চান রাস্তা কতটা চওড়া করা হবে। কিন্তু জেলা শাসকের দপ্তর থেকে জানানো হয়নি। আদালতের অভিযোগ জানালে স্থগিতাদেশ জারি হয়। কিন্তু আদালতের নির্দেশ অগ্রাহ্য করেই কাজ চলতে থাকে। স্বপন মাইতিকে ব্যাপক মারধর করে ঠিকাদারের লোকজন, এমনই অভিযোগ। 
চৈতন্যপুর এলাকায় রাস্তা সম্প্রসারণ এর কাজে বাধা দেন চারশোরও বেশি দোকানদার। সেঁজুতি জানা নামে আরেক ব্যবসায়ী সুতাহাটা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। কাজ বন্ধ হয় ওই এলাকায়। কিন্তু লাগাতার হুমকি চলতে থাকে ঠিকাদারের তরফ থেকে। সঙ্গে যুক্ত হয় তৃণমূল।


বিডিও'র কাছে ডেপুটেশনে সে বিষয়েই বলতে যান ব্যবসায়ীরা। সেঁজুতি জানা বলেছেন, ‘‘বিডিও'র ঘরে বসে তৃণমূল নেতা অরুণ দিন্ডা বলে দিচ্ছেন ২১ মিটার চাওড়া হবে রাস্তা। বিডিও তখন চুপ করে শুনছেন। সরকারি আধিকারিক যে তৃণমূলের দলীয় কর্মীর মত আচরণ করছেন তা ফের প্রমাণ হয়েছে। প্রতিনিধি দলকে বিডিও পরামর্শ দেন পূর্ত দপ্তরে ডেপুটেশন দিতে।
এদিনের প্রতিনিধি দলে উপস্থিত ছিলেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলা স্ট্রিট ভেন্ডারস ইউনিয়নের নেতা ভরত মাইতি, বিশ্বনাথ মান্না, সেঁজুতি জানা, স্বপন মাইতি সহ অন্যান্যরা।
 

Comments :0

Login to leave a comment