অন্যকথা — মুক্তধারা, বর্ষ ২
মহামতি, ধনঞ্জয় সরদার আর হরিপদ কেরানীর কথোপকথন
একলব্য
আলোর পাখি ডানা মেলল।
আকাশ পানে উড়ে যাওয়া সেই আলোর পাখি দেখে ধনঞ্জয় সরদারের বুক ভরে উঠল আশায়। দীর্ঘদিনের শোষণ আর বঞ্চনার কাহিনী, যন্ত্রনা , চোখের জল বোধহয় এবার শেষ। আশায় উদ্বেল ধনঞ্জয় সরদারের চকচকে চোখ আলো জ্বেলে দিল হরিপদ কেরানির মনে। প্রতিদিনের মাথা গুঁজে পরিশ্রম করা জীবনে, নুন আনতে পান্তা ফুরিয়ে যাওয়া জীবনে এবার বোধহয় সুদিন আসবে। দীর্ঘদিনের যন্ত্রণা লালিত আর্থসামাজিক ব্যবস্থায় সাম্যবাদ এর প্রতি এ এক অপূর্ব ভালোবাসা। সবার হাতে খাবার, সবার হাতে কাজ, শ্রমের যোগ্য মজুরি, এসব আরো নানা ধরনের আলোকরশ্মি স্পর্শ করে গেল এতদিনের শুকনো মুখে। সবাই বুঝতে পারছিল যে কৃষক জমিতে ফসল ফলায় জমির উপর তার সমান অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। যে শ্রমিক কারখানায় কাজ করে শ্রমের মূল্য প্রাপ্তির সঙ্গে সঙ্গে কারখানার উপরে তার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে । অফিসে কিম্বা যেকোনো কাজের ক্ষেত্রে যারা প্রতিদিন শ্রম দেয় তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে । কারণ একটা মতবাদ অর্ধেক পৃথিবীকে আলোকিত করতে পেরেছে।
দিন বদলালো। ভূগোল আর ইতিহাসের নিয়ম মেনে আলো থেকে অন্ধকারের দিকে এগিয়ে গেল পৃথিবীর সেই দিকটা। বেজে উঠল ঘন্টা। সেই ঘন্টার নিনাদ বুঝিয়ে দিলো এতদিন যে শক্তি ছিল মাথা নিচু করে তারা আবার মাথা তুলতে শুরু করেছে। এতদিন পাশের মানুষটার সম্পর্কে যে ভাবনা নিয়ে মানুষ বড় হয়েছে এখন সেই মানুষটাকেই নতুন পরিচয় চিনতে শুরু করতে হবে। জানতে হবে তার ধর্ম কি? তার জাত কি ? সে কি খায়? সে কোথায় থাকে ? তার উপাস্য কে? শোষক শ্রেণীর ধারা এবারে পদদলিত করবে শোষিত শ্রেণীর ধারাকে। আতঙ্কিত ধনঞ্জয় সরদার! আতঙ্কিত হরিপদ কেরানি! আতঙ্কিত রাম হরি সাউ! আতঙ্কিত আমিনা বিবি! একসঙ্গে এক পংক্তিতে দাঁড়িয়ে এতদিন লড়াই করে চলা জীবনটাকে বদলে প্রত্যেককে আলাদা আলাদা মঞ্চে দাঁড়িয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে যাতে অস্ত্র তুলে নিতে পারে তার প্রস্তুতি তৈরি হয়ে গেছে। আতঙ্ক থেকেই আসে অযথা এদিক সেদিক দৌড়ে বেড়ানো। সামনে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি। অভয় দেওয়ার চেষ্টা করছেন। শোষক আর শোষিত এই দুই দল ছাড়া আর কোন মঞ্চ হয় না - একথা বারে বারে তিনি বলছেন, বোঝাচ্ছেন।
এক সময় তার এই কথায় পৃথিবীতে বদল এসেছে। সেই বদলে যাওয়া পৃথিবীর আবার নতুন করে বদলটা ঠেকাতে কি না , তার সেই কথা কাজে লাগবে কিনা তা বলে দেবে সময়।
Comments :0