কৌশিক দাম: নাগরাকাটা
উত্তরবঙ্গে বিপর্যয়ের একের পর মৃত্যুর খবর আসার দিনেই কলকাতায় কার্নিভালে ব্যস্ত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। গুরুতর দুর্যোগের পূর্বাভাস সত্ত্বেও সরানো হয়নি বাসিন্দাদের। তীব্র সমালোচনার মুখে সোমবার নাগরাকটায় এসে ‘পাশে দাঁড়ানোর’ আশ্বাস দিলেন সেই মমতা ব্যানার্জিই!
নাগরাকাটায় মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘এই মুহূর্তে রাজনীতি নয়, আসুন সকলে মিলে বন্যাদুর্গত পরিবারের পাশে দাঁড়াই’’। নাগরাকাটার বামনডাঙায় এসে মুখ্যমন্ত্রী ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলি ঘুরে দেখেন তিনি। মৃতদের পরিবারগুলির হাতে আর্থিক সাহায্য তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী। নিহতদের প্রত্যেক পরিবারের জন্য ৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ এবং মানবিক উদ্যোগ হিসেবে প্রতি পরিবার থেকে একজন সদস্যকে হোমগার্ড পদে চাকরির ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী।
মমতা বলেন, “১৫ দিনের মধ্যেই পরিবারের যে কোনও একজন সদস্য চাকরিতে যোগ দিতে পারবেন।”
এদিকে কলকাতায় মুজফ্ফর আহম্দ ভবনে সাংবাদিক সম্মেলনে প্রশাসনের উদাসীনতায় গুরুতর প্রশ্ন তুলেছেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। রবিবার সকালেই মিরিকে বিপর্যয়ের খবর আসে। উত্তরবঙ্গের একের পর এক এলাকা থেকে আসতে থাকে বিপর্যয়ের খবর। কিন্তু কলকাতায় দুর্গাপুজোর কার্নিভাল ছেড়ে যাননি মুখ্যমন্ত্রী। এই আচরণের প্রতিবাদ করার পাশাপাশি পূর্বাভাস থাকা সত্ত্বেও বাসিন্দাদের নিরাপদ জায়গায় সরানোর উদ্যোগ না নেওয়ায় রাজ্য প্রশাসনের কড়া সমালোচনা করেন তিনি।
উল্লেখ্য, এদিনই নাগরাকাটায় বিপর্যস্ত এলাকায় যাওয়ার সময় আক্রমণের মুখে পড়েন বিজেপি’র সাংসদ খগেন মুর্মু ও বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। গাড়ির কাচ ভেঙে দেওয়ার পাশাপাশি শারীরিক আক্রমণও করা হয় দু’জনকেই। মুর্মুর মুখ ফাটিয়ে দেওয়া হয়।
মুখ্যমন্ত্রী এলাকায় এসে অনভিপ্রেত ঘটনা না ঘটানোর বার্তা দেন এদিন। কিন্তু দাবি উঠেছে এই ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে প্রশাসনকে।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী জলবন্দি পরিবারগুলির সঙ্গে কথা বলেন। জেলা প্রশাসনকে দ্রুত ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট পাঠাতে নির্দেশ দেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “যে সমস্ত বাড়িঘর পুরোপুরি ধসে গিয়েছে, রাজ্য সরকার সেগুলি নতুন করে তৈরি করে দেবে।”
প্রবল বর্ষণে নাগরাকাটার বামনডাঙা ও আশপাশের বিস্তীর্ণ এলাকা বিপর্যস্ত। প্রবল স্রোতে বহু মানুষ ভেসে যান। সরকারি হিসেবে এখন পর্যন্ত ৫ জনের দেহ উদ্ধার হয়েছে। যদিও স্থানীয়দের আশঙ্কা আরও অনেকের দেহ উদ্ধার হতে পারে। রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখেন।
এদিন মমতা কলকাতা থেকে বাগডোগরা হয়ে হেলিকপ্টারে করে হাসিমারা পৌঁছান। সেখান থেকে সড়কপথে নাগরাকাটার কালীখোলা সেতু পরিদর্শনে যান। সেতুর এক পাশ নদীতে ধসে পড়ায় নাগরাকাটা ও ডুয়ার্সের সঙ্গে উত্তর-পূর্ব ভারতের যোগাযোগ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন। জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী সেতুর ক্ষতি সরেজমিনে দেখে দ্রুত সংস্কারের নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসনকে।
সেলিম এদিন বলেছেন, ‘‘প্রকৃতির বিপুল লুট চলছে। উত্তরবঙ্গে পরিকাঠামোর নির্মাণের নামে এই লুটে যুক্ত কেন্দ্রের বিজেপি এবং রাজ্যের তৃণমূল সরকার। চলছে কাটমানির দাপট। এদিকে চালু পরিকাঠামো যে রক্ষণাবেক্ষণ হয় না তা দেখা গিয়েছে দুধিয়ার মতো সেতু ধসে পড়ায়। কেবল নীল-সাদা রঙ লাগানো রয়েছে। পুনর্গঠনের কাজে যেন কাটমানির খেলা না চলে।’’ ক্ষতিগ্রস্তদের বিকল্প আবাসন দেওয়ার কাজেও যাতে দুর্নীতি না হয় সেই দাবিও তুলেছেন সেলিম।
এদিকে মমতা প্রশাসনকে এখন বলছেন, “আবহাওয়া দপ্তর আরও ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে, তাই পরবর্তী দু’দিন নিচু এলাকায় কেউ যেন না থাকেন। সকলকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিন।”
এদিন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ ও রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার। তিনি কলকাতায় ফেরার আগে পর্যন্ত উত্তরকন্যাতেই থাকবেন বলে জানা গেছে।
Comments :0