মণিপুর নিয়ে উত্তাল সংসদে বিনা আলোচনাতেই ধ্বনি ভোটে দেশের দুষ্প্রাপ্য মূল্যবান সম্পদ, খনি শিল্পের ঢালাও বেসরকারিকরণের বিল পাশ হয়ে গেল লোকসভায়। কয়লা খানিকটা চলেই গিয়েছে, এবার মোদী সরকারের এই ‘খেলা ঘোরানো’ পদক্ষেপে সোনা-তামা থেকে প্ল্যাটিনাম, হীরেই শুধু নয়, লিথিয়াম থেকে টাইটেনিয়ামের ভাণ্ডারও বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার তোড়জোড় শুরু হলো। খরচসাপেক্ষ উত্তোলনের এই খনিজ সম্পদগুলি এদেশে তেমন উত্তোলন না হলেও দুষ্প্রাপ্য এই খনিজের ভাণ্ডারগুলি বেসরকারি হাতে তোলার বন্দোবস্ত করে মোদীর মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশী ঘোষণা, এই মাইনস অ্যান্ড মিনারেলস (ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রেগুলেশন) অ্যামেন্ডমেন্ট বিল হলো ‘গেম চেঞ্জার’ বা ‘খেলা ঘোরানো’ দিশা। বিরোধীরা যখন মণিপুর তথা গোটা দেশের গণতন্ত্র বাঁচাতে সোচ্চার, তখন হইহট্টগোলের মধ্যে লোকসভায় ধ্বনি ভোটে পাশ করানো হলো এমনই ভয়ানক এক বিল। দেশে স্বনির্ভর অর্থনীতি গড়ে তোলার লক্ষ্যে কেন্দ্রের উদ্যোগে দেশের সম্পদ হিসাবে বিভিন্ন খনিজ শিল্পের রাষ্ট্রায়ত্তকরণ হয়েছিল। সেই স্বনির্ভর নীতি পালটে এখন কর্পোরেট স্বার্থে চলছে মোদী সরকার। তাই স্বনির্ভরতার নীতি বদলে এবার ঢালাও বেসরকারিকরণের পথ নিয়েছে মোদী সরকার। এবার দুষ্প্রাপ্য খনিজ সম্পদ যে ঢালাও বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে তাকে এবার ‘গেম চেঞ্জার’ শব্দবন্ধে বুঝিয়ে দিলেন মন্ত্রী।
এদিন যে যে খনিজ সম্পদ বেসরকারিকরণের লক্ষ্যে এই বিল পাশ করানো হয়েছে তা স্পষ্ট করে দিয়েছে মন্ত্রী। তিনি জানাচ্ছেন, আণবিক খনিজ সম্পদের ছটি খনির বেসরকারিকরণে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে লিথিয়াম (যা ব্যবহার হয় ইলেকট্রিক যানবাহনের ব্যাটারি এবং অন্যান্য ব্যাটারি তৈরিতে), বেরিলিয়াম, নিওবিয়াম, টাইটেনিয়াম, ট্যানটালাম, জিরকোনিয়াম পদার্থের খনি। প্রসঙ্গত, দেশের ১২টি আনবিক খনিজ সম্পদের ছয়টি খনি পুরোপুরি বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এদিকে এই আণবিক খনিজ সম্পদ ছাড়াও আরও যে দুস্পাপ্য খনিজ শিল্পে এই বিলে বেসরকারি সংস্থার কাছে অবাধ করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে, সোনা, রূপা, তামা, জিঙ্ক, সীসা, নিকেল, কোবাল্ট, প্ল্যাটিনাম ও হীরে গোষ্ঠীর যাবতীয় খনি। প্রসঙ্গত দেশে এই সব খনিজ সম্পদের উত্তোলন খুবই কম হয় এবং তার উত্তোলন খুবই খরচসাপেক্ষ। দেশে এই জাতীয় খনিজ সম্পদ প্রয়োজন মতো আমদানি করা হয়।
খনি বিলের উদ্দেশ্য নিয়ে বিলের ভূমিকায় পরিষ্কার বলা হয়েছে, দেশের আণবিক খনিজ পদার্থ আজকে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। মহাকাশ শিল্প, ইলেকট্রনিক শিল্প, যোগাযোগ শিল্প, শক্তি শিল্পে ব্যবহার হচ্ছে। তাই এই শিল্পগুলিতে ব্যবহার্য এই সব সম্পদের খনি বেসরকারি সংস্থার জন্য অবাধ করে দেওয়া হচ্ছে। তাতে এই শিল্পগুলির আরও দ্রুত বিকাশ ঘটবে বলে আশা করা হচ্ছে। পুরানো আইনে পরিবর্তন এনে বেসরকারি সংস্থাকে এই খনি শিল্পে সম্পদ উত্তোলন করে তা বাণিজ্যের কাজে ব্যবহার করার অবাধ অধিকার দেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্র নিলাম ডেকেই এই সব খনি বেসরকারি হাতে তুলে দেবে। প্রসঙ্গত, পুরানো আইন মোতাবেক এই সমস্ত খনি সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বিভিন্ন সরকারি সংস্থা খনিজ সম্পদ উত্তোলনের দায়িত্বে রয়েছে। এবারে আইনে পরিবর্তন এনে তা সরকারি নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিয়ে আসা হলো। মন্ত্রীর দাবি, বেসরকারি সংস্থার জন্য এই খনি শিল্প অবাধ করে দেওয়ায় বিনিয়োগ ও উত্তোলন বাড়বে।
এদিন কয়লা ও খনি মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী বলেন, এই বিল পাশ হওয়ায় যে নতুন খনি আইন হচ্ছে তাতে আমরা বেসরকারি সংস্থাকে খনির সম্পদ উত্তোলনের লাইসেন্স দিয়ে দেব। সেই লাইসেন্সের ফলে তারা অবাধে তাদের প্রয়োজন মতো খনিজ সম্পদের উত্তোলনের কাজ চালাবে। তিনি এই লাইসেন্স দেওয়া হবে নিলাম ডেকে স্বচ্ছ নিয়ম মেনেই। এদিকে বিচ স্যান্ড খনিজ পদার্থের উৎপাদন সরকারের হাতেই থাকছে বলে তিনি জানান। এই খনিজ পদার্থের মধ্যে রয়েছে ইলমেনাইট, রুটাইল, লিউকোক্সিন, গারনেট, মোনাজাইট, জিরকন, সিলিম্যানাইল।
প্রসঙ্গত, এদিন হট্টগোলে পেশ হয়েছে আইআইএম সংশোধনী বিলও। তা আগামী সপ্তাহে আলোচনা ও পাশ হবে বলে জানান মন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘাওয়াল। আগামী সপ্তাহে সংসদে পেশ হতে চলেছে বিতর্কিত দিল্লি অর্ডিন্যান্স বিল। বিরোধী মঞ্চ ‘ইন্ডিয়া’ এই বিলের বিরোধিতা করবে বলে জানিয়ে দিয়েছে।
Monsoon session
খনিজ ভাণ্ডার বেসরকারি হাতে দিতে মোদীর ‘খেলা ঘোরানো’ বিল পাশ

×
Comments :0