NH10

ফের বন্ধ হয়ে গেলো বাংলা সিকিম লাইফ লাইন

জেলা

সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মেরামতির কারনে বন্ধ রাখা হবে জাতীয় সড়কে যান চলাচল। ওই সড়ক দিয়ে সমস্ত রকম যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। ফলে পর্যটক থেকে শুরু করে নিত্য যাত্রীরা বিপাকে পড়েছেন। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত থাকছে জাতীয় সড়ক বন্ধের নিষেধাজ্ঞা। 
সম্প্রতি উত্তরবঙ্গের প্রাকৃতিক বিপর্যয়, ভূমিধসের কারনে জাতীয় সড়কের ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয়েছে। জাতীয় সড়কের একাধিক জায়গায় বড় বড় ধস নেমেছে। ফলে জাতীয় সড়ক জুড়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। আবার জাতীয় সড়কের রাস্তা কোথাও কোথাও খাদে ভেঙে পড়েছে। কোথাও আবার সড়কের একাংশ জলের তোড়ে উড়ে গেছে। মেরামতির কাজের কারনেই আগামী চারদিন দার্জিলিঙ ও সিকিমমুখী শিলিগুড়ি—সিকিম ১০নম্বর জাতীয় সড়ক পুরোপুরিভাবে বন্ধ থাকছে। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে ভারি বৃষ্টিতে ২৯মাইল থেকে গেইলখোলা পর্যন্ত একাধিক জায়গায় জাতীয় সড়কে বড় আকারের ধস নামে। গেইলখোলা এলাকায় সিঙ্কহোল তৈরি হয়ে সড়কের নীচের স্তর ভেঙে তিস্তায় নেমে যায়। তার মধ্যেই ধস নামে ২৯মাইলে।
এবিষয়ে ন্যাশনাল হাইওয়ে অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের তরফে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তি মারফৎ জানানো হয়েছে ১৩অক্টোবর অর্থাৎ সোমবার দুপুর ১টা থেকে ১৬অক্টোবর সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সেবক থেকে রঙপো পর্যন্ত ১০নম্বর জাতীয় সড়কে যান চলাচল সম্পূর্নভাবে বন্ধ থাকবে। প্রবল বৃষ্টিতে ধস জনিত কারনে ক্ষতিগ্রস্ত জাতীয় সড়কের পুর্নগঠনের কাজ চলবে এই চারদিন। ঝূঁকিপূর্ন যাতায়াত বন্ধ করতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যাত্রীদের নিরাপত্তা ও যানবাহন চলাচলের সঠিক সুরক্ষার কথা চিন্তাভাবনাতে রেখেই জাতীয় সড়ক বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন নিগমের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার শিবম সিং। তবে সিকিম—দার্জিলিঙ—কালিম্পঙগামী যাত্রীদের যাতায়াতের জন্য, পর্যটকদের সুবিধার্থে অথবা জরুরী প্রয়োজনে বিকল্প ঘুরপথে যান চলাচলের ব্যবস্থা করা হবে বলে কালিম্পঙ জেলা প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে। ঘুরপথে আলগাড়া, গরুবাথান দিয়ে যাতায়াত করবে সিকিমগামী সমস্ত যানবাহনগুলি। পাশাপাশি এই সময়ে দার্জিলিঙ থেকে কালিম্পংয়ের রাস্তাও খোলা থাকছে।                                                                                   
প্রসঙ্গত মেঘভাঙা বৃষ্টিতে দার্জিলিঙ পার্বত্য এলাকায় ধস নেমে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দার্জিলিঙ পাহাড়ের প্রত্যন্ত এলাকায় গ্রামের পর গ্রাম জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বাড়ি ঘর ভেঙে পড়েছে। প্রানহানির ঘটনা ঘটেছে। পাহাড়ে এখনও ওই ভয়াবহ রাতের ধ্বংসের ছবি স্পষ্ট রয়েছে। নিঃস্ব মানুষজন পাহাড়ের একাধিক ত্রান শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন। ৪অক্টোবরের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বাংলা—সিকিম লাইন লাইন ১০নম্বর জাতীয় সড়ক ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ধস পরবর্তী সময়ে ধস পরিষ্কারের কাজ শুরু হলেও, বৃষ্টি না থামায় পাহাড়ের গা বেয়ে নতুন করে ধস নামছিলোই। ফলে ধস পরিষ্কারের কাজে বিঘ্ন ঘটছিলো বারবার। বৃষ্টি বিরতি ঘটতেই ধস সরিয়ে রাস্তা পরিষ্কারের পর জাতীয় সড়কে যানচলাচল কিছুটা স্বাভাবিক হতে না হতেই পুনরায় নতুন করে ধস নেমে জাতীয় সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এবার সংষ্কারের কাজ করার জন্য ফের চারদিন জাতীয় সড়ক বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।   
টানা বৃষ্টির জেরে বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গ। বন্যা ও ধসের কারনে পাহাড়ে বেড়াতে এসে বিভিন্ন সময় পর্যটক সহ সাধারন মানুষদের দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হচ্ছে। সম্প্রতি ধস ও প্রাকৃতি বিপর্যয়ের মুখে বিপর্যস্ত পাহাড়ের একাধিক রাস্তা। ব্যাপক ধস বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে শিলিগুড়ি থেকে সিকিম যোগাযোগ রক্ষাকারী ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক। এদিকে বৃষ্টি ভূমিধসের কারনে উৎসবের সময়ে ও পর্যটনের উপযুক্ত মরশুমে বার বার শিলিগুড়ি সিকিম সংযোগকারী জাতীয় সড়ক বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পর্যটন ব্যবসায়ীরা প্রবল সমস্যার মধ্যে পড়েছেন। পর্যটন মরশুমে বারবার জাতীয় সড়ক বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারনে তার বিরূপ প্রভাব পড়ছে উত্তরের পর্যটনে শিল্পে। পর্যটন ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, পূর্বঘোষণা বা বিকল্প পরিকল্পনা ছাড়াই জাতীয় সড়ক বন্ধের এমন সিদ্ধান্তে হাজারো পর্যটক ও সাধারণ মানুষের দূর্ভোগ বাড়বে। পাহাড়ের অর্থনীতিও ক্ষতির মুখে পড়ছে। শিলিগুড়ি থেকে গ্যাঙটক পৌঁছতে যেখানে মাত্র সাড়ে চার ঘণ্টা লাগে, সেখানে এখন বাগরাকোট—লাভা—আলগাড়া বা গরুবাথান হয়ে একই দূরত্ব পেরোতে সময় লাগবে ছয় ঘণ্টার বেশি। তিস্তা বাজার, পেশক রোড বা কালিঝোরা ঘুরপথ থাকলেও খাড়া পথ ধরে ওঠানামা করা ভারি যানবাহনের পক্ষে একেবারেই প্রায় অসম্ভব। স্থায়ী সমাধান না করে এভাবে বারবার জাতীয় সড়ক বন্ধ করে দেওয়া হলে পাহাড়ের অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে। ইতোমধ্যে পর্যটকদের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। 
চারদিন জাতীয় সড়ক বন্ধ করে মেরামতি প্রসঙ্গে হিমালয়ান হসপিটালিটি ট্যুর অ্যান্ড ট্র্যাভেল ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক সম্রাট সান্যাল এদিন বলেছেন, আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছিলো। ২৯ মাইল থেকে গেইলখোলার মধ্যে অন্তত পাঁচ জায়গায় বড় ধস রয়েছে। চিঠিতে দ্রুত ওই ধস পরিষ্কার করে মেরামতির জন্য বলা হয়েছে। পাশাপাশি অবিলম্বে ধস পরিষ্কার করে রাস্তা মেরামত করা না হলে আন্দোলন হবে বলেও জানানো হয়েছিল।
 

Comments :0

Login to leave a comment