বাংলাভাষীদের হেনস্তা করা অবিলম্বে বন্ধ করুক কেন্দ্র সরকার। সোমবার এক বিবৃতিতে এই দাবি জানিয়েছে সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো। একই সঙ্গে ওই বিবৃতিতে বাংলাকে বিদেশি ভাষা বলার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ক্ষমা প্রার্থনার দাবি জানিয়েছে পলিট ব্যুরো। এই ধরনের কাজের সঙ্গে যে আধিকারিকরা যুক্ত, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের দাবিও জানিয়েছে পার্টি।
দিল্লি পুলিশ যেভাবে বাংলা ভাষাকে ‘বাংলাদেশি ভাষা’ বলে চিহ্নিত করেছে, তার কঠোর নিন্দা করেছে পলিট ব্যুরো। এটা দিল্লি পুলিশের আপত্তিকর মনোভাবকেই প্রকাশ করেছে, যারা অসংখ্য বাংলাভাষী ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে অবৈধ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী সন্দেহে। পলিট ব্যুরো বলেছে, এটি এই সত্য সম্পর্কে দিল্লি পুলিশের অজ্ঞতাও প্রকাশ করে যে, বাংলা ভাষা শুধুমাত্র একটি ভাষা, যার স্বতন্ত্র লিপি রয়েছে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি বঙ্গভবনের আধিকারিককে চিঠি লিখে দিল্লির লোধী থানার পুলিশ কর্তা জানান তাদের ‘বাংলাদেশি ভাষা’র অনুবাদক চাই! তাঁরা বাংলাদেশি বলে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের কাছে পরিচয়পত্রগুলি ‘বাংলাদেশি ভাষা’য় লেখা। সেগুলি অনুবাদের জন্য ‘বাংলাদেশি ভাষা’র অনুবাদক চাই। এই নিয়ে তুমুল বিতর্ক ছড়িয়েছে গোটা দেশে। সিপিআই(এম)’র পক্ষ থেকে রবিবারই সোশাল মিডিয়ায় এই নিয়ে আপত্তি জানানো হয়। পার্টির পলিট ব্যুরো সদস্য, পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম তীব্র প্রতিবাদ জানান। এরপর সোমবার পলিট ব্যুরোর পক্ষ থেকেই কড়া প্রতিক্রিয়া জানানো হলো। প্রতিবাদ জানিয়েছেন, ডিএমকে প্রধান, তামিলনাডুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিনও। এদিন এক্স হ্যান্ডেলে তামিলনাডুর মুখ্যমন্ত্রী লেখেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের আওতাধীন দিল্লি পুলিশ বাংলাকে ‘বাংলাদেশি ভাষা’ বলে উল্লেখ করেছে। এটা সেই ভাষাকে সরাসরি অসম্মান, যে ভাষায় দেশের জাতীয় সঙ্গীত লেখা হয়েছে। এই ধরনের বক্তব্য অনিচ্ছাকৃত ভুল বা আকস্মিক নয়। এগুলি এমন একটি শাসনব্যবস্থার অন্ধকার মানসিকতা প্রকাশ করে, যা ধারাবাহিকভাবে দেশের বৈচিত্রকে ক্ষুণ্ণ করে এবং পরিচয়কে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে।
সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরোও এদিন বিবৃতিতে বলেছে, বাংলা ভারতের অন্যতম একটি জাতীয় ভাষা, যা সংবিধানের অষ্টম তফসিলে স্বীকৃত। সেই ভাষাকে বিদেশি ভাষার তকমা দিয়ে দিল্লি পুলিশ যা সরাসরি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনে কাজ করে, সাংবিধানিক বিধানকে কার্যকরীভাবে লঙ্ঘন করেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ যিনি লাগাতার বাংলাভাষীদের তাচ্ছিল্য করেন, এই ঘটনা তাঁর সেই মনোভাবেরই প্রতিফলন।
তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে পলিট ব্যুরো বলেছে, এই সমগ্র ঘটনায় বাঙালিদের অনুপ্রবেশকারী হিসেবে দাগিয়ে দেওয়ার বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারের অশুভ চেষ্টা স্পষ্ট হয়েছে। কারণ তারা প্রতিবেশী দেশের মতো একই ভাষা ব্যবহার করেন। ক্ষোভের সঙ্গে পলিট ব্যুরো বলেছে, বিভিন্ন রাজ্যে, পুলিশ বাঙালিদের হেনস্তা করছে, বিশেষ করে দরিদ্র পরিযায়ি শ্রমিকদের অবৈধভাবে আটক করে হয়রানি করছে। অনেকের সাথে দুর্ব্যবহার, নির্যাতন এমনকি যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াই দেশত্যাগ করা হয়েছে। এই অবস্থার কথা জানিয়ে পলিট ব্যুরো বলেছে, কেন্দ্র সরকারকে অবিলম্বে বাংলাভাষী নাগরিকদের হেনস্তা বন্ধ করতে হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে বাংলা ভাষাকে বিদেশি ভাষা হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য ক্ষমা চাইতে হবে এবং এর জন্য দায়ি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
PB Bengali
দাবি পলিট ব্যুরোর: বাংলাভাষীদের হেনস্তা বন্ধ করতে হবে কেন্দ্রকে

×
Comments :0