STORY / SWASTIK SENGUPTA / ASAMANTARAL / MUKTADHARA / 8 JUNE 2025 / 3rd YEAR

গল্প / স্বস্তিক সেনগুপ্ত / অসমান্তরাল / মুক্তধারা / ৮ জুন ২০২৫, বর্ষ ৩

সাহিত্যের পাতা

STORY  SWASTIK SENGUPTA  ASAMANTARAL  MUKTADHARA  8 JUNE 2025  3rd YEAR

গল্প / মুক্তধারা , বর্ষ ৩

অসমান্তরাল

স্বস্তিক সেনগুপ্ত

১.
- আজকেও ছাতা আনিসনি বল?
- হু?
অন্যমনষ্ক হয়ে বৃষ্টি দেখছিল হিল্লোল, তাই পিছন থেকে আসা কথার প্রশ্নবাণটা শুধু ছুঁয়ে বেরিয়ে গেলো। পিছন ঘুরে দেখল কথা দাঁড়িয়ে। অঙ্কের ব্যাচের ছুটি হয়ে গেছে প্রায় মিনিট দশেক। মেঘ করে আসছে দেখে ছুটি আগেই দিয়েছিল স্যার, কিন্তু অঙ্কের হোম ওয়ার্ক গত তিনদিন ধরে না করায় স্যার ওকে বসিয়ে অঙ্ক করতে বলেছিল। আর কথার দেরি হওয়ার কারণও প্রায় এক, খালি অঙ্কগুলো স্যার দেখিয়ে দিচ্ছিল, কারন শেষ তিনদিন কথা আসেনি। বেশি দেরি হলো না যদিও, জ্যামিতির সোজা চ্যাপ্টার, সমান্তরাল রেখার ধারণা। আর এর মাঝেই বৃষ্টি নামায় বাইরে এসে দাঁড়িয়েছিল হিল্লোল। বৃষ্টি দেখছিল সে, খেয়ালও করেনি কথা কখন এসে দাঁড়িয়েছে।
- ছাতা, ছাতা, এনেছিস?
- ও, না।
- ছাতাটা কেনো নিয়ে আসিস না বলতো? বৃষ্টির ওয়েদার তো জানিসই!
- হুম। 
- কিছু হয়েছে নাকি তোর?
- কই না তো।
- বাবাহ তোর মতন ছেলে এত শান্ত হয়ে বৃষ্টি দেখছে! ভাবা যায়! এই চল চল, আমার ছাতা আছে, দুজনে বেরিয়ে যাই।
- চল।
২.
- চেপে আয় ভিজিস না। ঠাণ্ডা লেগে যাবে।
- আমার ঠাণ্ডা লাগে না।
- থাক, আর বাহাদুরি দেখাতে হবে না।
চেপে আসে হিল্লোল, একটা কথা বলতে চেয়েও বলতে পারছে না,  এই খচখচ ভাবটা ধরতে পারে কথা ।
- কিছু বলবি নাকি?
- বলবি তো তুই।
- কি?
- যেটা তোকে বললাম সেদিন।
- দেখ হিল্লোল, তুই তো নিট দিলি, এক্সামও ভালো হয়েছে বলেছিস, এরপর ডাক্তারি পড়তে বাইরে চলে যাবি, তখন...?
- কি তখন?
- কিছু না।
- তুই এমন ভাবছিস কেন? লংডিস্টেন্সও তো হয়!
- না রে, বাড়ি থেকে মানবে না।
- কিন্তু কেনো?
- ইন্টারকাস্ট!
- তো?
- আমরা ব্যানার্জি, তুই ওরাও, পাগল নাকি!
' পাগল!', ' ইন্তরকাস্ট ' কথাগুলো ইকো হচ্ছিল কানে। পৃথিবীটা একমুহুর্তের জন্য যেন থমকে গেলো, সত্যিই তো। বাড়ি থেকে কেনো মানবে? হিল্লোল ওরাও, বাবা রিক্সা চালায়, দিন মজুরি করে, মা সই করতে জানে না, বন্ধুদের সাথে কোথাও গেলে পকেটে ৫০ টাকার বেশি থাকে না, সেটা তো কথাও দেখেছে। কিছু একটা বলছে কথা, কানে আসছে না, শুনতে চাইছে হিল্লোল কিন্তু ওই কথাগুলো কানে বড্ড বাজছে। দাঁড়িয়ে পড়ে হিল্লোল।
- কি হলো, হিল্লোল?
- কিছু না। তোর বাড়ি চলে এলো, যা সাবধানে।
- তুই তো ছাতা অনিসনি, ভিজতে ভিজতে যাবি?
- হ্যাঁ, যাই এইটুকুই তো, আমাদের ঠাণ্ডা লাগে না।
- বাহাদুরি দেখাতে হবে না, ছাতাটা নিয়ে যা।
কিছু কথা না বাড়িয়ে ছাতাটা নিয়ে নেয়, বাড়ির পথে পা বাড়ায় হিল্লোল, অন্যান্য দিনের মতো ঘুরে বাই টুকুও বলেনা আজ। বাড়ি এসে ব্যাগটা ছুঁড়ে ফেলে দেয়, চেনের নিচের ছেড়া জায়গা দিয়ে বইগুলো বেরিয়ে আসে, ব্যাগটা আরো ছিঁড়ে যায়। 
৩.
- Do you think about something?
- No. 
- Then?
- Nothing, just see the rain.
- Anything wrong? You're looking too depressed, do you worrying about the meeting?
- No.
- See the meeting is very important for us, the whole company is looking at you, it's time to show your skill and confidence. It's a huge opportunity for us, a deal of 15 core.
২২ তলা বিল্ডিং এর কাচ দিয়ে ঘেরা জানলা দিয়ে বৃষ্টি দেখতে কতই না ভালো লাগে, নিচে লোকের কর্মব্যস্ততা, শেল্টার খোজার মরিয়া চেষ্টা, জল কাদায় এপাশ ওপাশ হওয়া কিছু হিল্লোল ওরাও আজও কি আছে মধ্যে? কয়েকটা লাইন মনে পড়ে হিল্লোলের, ' দুটো সমান্তরাল রেখা আপাত দৃষ্টিতে না মিললেও অসীমে গিয়ে কিন্তু ঠিক মেলে, কিন্তু দুটো অসমান্তরাল রেখা একবার মিলে গেলে তাদের কিন্তু আর মেলার চান্স নেই। '

Comments :0

Login to leave a comment