বিশ্বজিৎ দাস- গুয়াহাটি
প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী জুবিন গর্গের শেষ যাত্রায় রীতিমতো জনসমুদ্র। গুয়াহাটিতে তিল ধারনের জায়গা নেই। প্রিয় শিল্পীকে শেষবারের মতো দেখতে মহানগরে জনতার বাঁধ ভেঙে পড়েছে।
জুবিন গর্গের দেহ শনিবার রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ সিঙ্গাপুর থেকে দিল্লি পৌঁছে। সেখান থেকে আরেকটি বিমানে করে দেহ গুয়াহাটি আনা হয়। ভোর ৬ টা ৩৫ মিনিটে শিল্পীর কফিনবন্দী দেহ গুয়াহাটি বিমানবন্দরে পৌঁছে। শনিবার সন্ধ্যা থেকেই বিমানবন্দরে লোকেলোকারন্য। শিল্পীর দেহ পৌঁছতেই কান্নাররোল ওঠে৷ বৃহস্পতিবার সকালে সুস্থ মানুষটি সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠান করতে গিয়েছিলেন। তিনদিন পর তাঁর মৃতদেহ এসে পৌঁছবে,অবিশ্বাস্য এই ঘটনাটি কেউ ভাবতেই পারেননি। হাসিখুশি,সদা চঞ্চল মানুষটি আজ নির্বাক, কফিনে শায়িত। বিমানবন্দরেই স্বামীর দেহ জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্ত্রী গরিমা শইকিয়া। বিমানবন্দর থেকে শুরু হয় শেষ যাত্রা। বেলা একটায় কাহিলীপাড়ার বাড়িতে পৌঁছে দেহ৷ বাড়িতে দুই ঘন্টা রাখা ছিল দেহ৷ এরপর নিয়ে যাওয়া হয় সরুসজাই স্টেডিয়ামে। এখানেই সাধারণ মানুষ শিল্পীকে শেষ শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন।
মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছেন,জুবিন গর্গের দেহ সোমবার পর্যন্ত শ্রদ্ধা জানানোর সরুসজাইতে থাকবে। সোমবার বিকেলে শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।গর্গের পরিবার চাইছেন শেষকৃত্য গুয়াহাটি সোনাপুরে করা হোক৷ পরিবারের সঙ্গে কথা বলে শেষকৃত্যের স্থান সন্ধ্যায় সরকারি ভাবে জানানো হবে।
উল্লেখ্য, সিঙ্গাপুরে নর্থইস্ট ইন্ডিয়া ফেস্টিভ্যালে অনুষ্ঠানে অংশ নিতে গত বৃহস্পতিবার দল নিয়ে সিঙ্গাপুর গিয়েছিলেন জুবিন। তাঁর অনুষ্ঠান ছিল শনিবার। এর আগেরদিন সিঙ্গাপুরে সমুদ্রে সাঁতার কাটতে গিয়ে তাঁর মৃত্যু ঘটে। তিনি মৃগী রোগে ভুগছিলেন। জলে নামতেই তাঁর সিজার এটাক হয় বলে খবর ছড়িয়েছে। তবে শিল্পীর মৃত্যুর সঠিক কারণ নিয়ে এখনো ধোঁয়াশা রয়েছে। তাঁর অনুরাগীদের অভিযোগ, জুবিনকে পরিকল্পিতভাবে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে । তিন বছর আগে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে জুবিন মাথায় চোট পান। এরপর থেকে বাইরের অনুষ্ঠানে গেলে তাঁর সঙ্গে স্ত্রী গরিমা থাকেন। কিন্তু রহস্যজনকভাবে সিঙ্গাপুরের অনুষ্ঠানে গরিমাকে নিয়ে যাওয়া হয়নি৷ তাঁকে সিঙ্গাপুরে আমন্ত্রণ করে নিয়ে যাওয়া ব্যবসায়ী শ্যামকানু মহন্ত ও জুবিনের ম্যানেজার সিদ্ধার্থ শর্মার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় শতাধিক এফআইআর হয়েছে। শেষ পর্যন্ত জুবিনের মৃত্যুর তদন্তের ভার সিআইডির হাতে তুলে দিয়েছে আসাম সরকার। তবে সিআইডি তদন্তে খুশি নন অনুরাগীরা। বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি করছেন সকলেই। সিঙ্গাপুরে নর্থ ইস্ট ফেস্টিভ্যালের নামে ব্যবসায়ীদের আসর বসে৷ এর পেছনে অনেক কালো হাত রয়েছে বলে অভিযোগ ।
কফিনে শায়িত জুবিন গর্গ। ছবি বিশ্বজিৎ দাস।
কারোর বৃহত্তর স্বার্থে জুবিনকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করছেন। গ্যাংস্টার’ সিনেমায় ‘ইয়া আলি’ গানটি গেয়ে জুবিন সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন গোটা দেশে। শুধু গায়ক নন, সঙ্গীত পরিচালক, চিত্র পরিচালক এমনকি অভিনয়ও করেছেন। ৫২ বছরের জুবিন বাংলা, হিন্দি, অসমীয়া, নেপালি সহ প্রায় ৪০ টি ভাষা ও উপভাষায় গান গেয়ে, ছোট থেকে বড় সকলের মনে দাগ কেটে গেছেন। অসমীয়া সঙ্গীত হোক বা পাশ্চাত্য, আবার লোকসঙ্গীত হোক বা ধ্রুপদী ভিত্তিক সঙ্গীত, সব ধরনের গান গেয়ে কয়েক প্রজন্মে সাড়া ফেলেছিলেন তিনি। তিন বছর বয়স থেকে গান গাওয়া জুবিন ২০০৬ সালে ‘গ্লোবাল ইন্ডিয়ান ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড’ অনুষ্ঠানে সেরা প্লেব্যাক গায়কের সম্মান পান। ১৯৯২ সালে জুবিন ‘অনামিকা’ নামের একটি অসমীয়া গানের অ্যালবাম প্রকাশ করে তাঁর পেশাদারি জীবন শুরু করেন। ওই অ্যালবামের সাফল্যের পরেই তিনি সকলের নজরে পড়েন। এরপর ১৯৯৫ সালে মুম্বাই চলে যাওয়ার আগেই প্রকাশ হয় তাঁর বিহু গানের অ্যালবাল ‘উজান পিরিত’। মুম্বাই গিয়ে ‘চাঁদনী রাত’ নামে এককভাবে ইন্ডিপপ অ্যালবাম প্রকাশ করে বলিউডের যাত্রা শুরু করেন। তারপর একের পর এক ‘গদ্দার’, ‘দিল সে’ ‘ডোলি সাজা কে রাখনা’, ‘কান্তে’, ‘জিন্দেগি’- এর মতো একাধিক সিনেমায় গান গেয়েছেন। পাশাপাশি কিছু হিন্দি অ্যালবামও প্রকাশ করেন।
Comments :0