Tmc corruption

কালীঘাটের কাকু জানালেন, অভিষেকই তাঁর ‘সাহেব’

কলকাতা

অভিষেক ব্যানার্জিকে ছোঁয়ায় ক্ষমতা পৃথিবীর কারো নেই। রীতিমতো বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমের সামনে বসেই সটান জানিয়ে দিলেন কালীঘাটের ‘কাকু’ ওরফে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। অভিষেক ব্যানার্জি তাঁর ‘সাহেব’ তাও জানালেন অকপটে। 
নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে ইতিমধ্যেই সামনে এসেছে অভিষেক ব্যানার্জির ঘনিষ্ঠ, তাঁরই ক্যামাক স্ট্রিট অফিসে বসা সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের নাম। নিয়োগকাণ্ডে ধৃত যুব তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কুন্তল ঘোষকে নিয়ম করেই প্রাথমিক থেকে এসএসসি’র দুর্নীতির টাকা তাঁকে পাঠাতে হতো বলে প্রকাশ্যেই সাংবাদিকদের সামনে দাবি করেছেন ধৃত শিক্ষা ব্যবসায়ী তাপস মণ্ডল।
এদিন সংবাদমাধ্যমের কাছে এই প্রথমবার মুখ খুলেই বেহালার বাসিন্দা সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র স্বীকার করে নেন কুন্তল ঘোষকে তিনি চিনতেন। রাজনতিক কারণেই চিনতেন বলে জানিয়েছিলেন। ১৯৭৭’র সালের ভোটের সময় থেকেই তিনি রাজনীতিতে যুক্ত বলে দাবি করেই ২০১৬ সালে রাজনীতিতে আসা হুগলীর বাসিন্দা নিয়োগকাণ্ডে আপাতত সিবিআই হেপাজতে থাকা কুন্তল ঘোষকে কী কারণে, কীভাবে চিনতেন তা যদিও বলেননি সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র।
তবে সংবাদমাধ্যমের কাছে তিনি অকপটে জানিয়েছেন, ‘আমার সাহেবকে পৃথিবীর কারো ক্ষমতা নেই যে ছোঁবে। কারণ তাঁর সঙ্গে কেউ দেখা করতে পারবে না, কারণ তাঁর সঙ্গে কেউ ফোনে কথা বলতে পারবে না। তাই সেই অবধি পৌঁছানো যাবে না। তাই চেষ্টা করে যাচ্ছে, আর সেটা করতে গিয়ে আমি অবধি এসে থেমে যেতে হচ্ছে’। কার্যত কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা থেকে আইন, আদালত সকলকেই চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন তিনি। কে তাঁর সাহেব? সাংবাদিকদের এই প্রশ্নে তিনি জানিয়েছেন অভিষেক ব্যানার্জি তাঁর সাহেব। তিনি অভিষেক ব্যানার্জির অফিসেই কাজ করেন। ২০০৯ সাল থেকে। অভিষেক ব্যানার্জি তাঁর অন্নদাতা। 
তারপর নাটকীয়ভাবে দাবি করেছেন তিনি একনিষ্ঠ সামান্য কর্মী মাত্র। কোনোদিন তৃণমূলের কোনও পদে, বুথেও পর্যন্ত ছিলেন না। এতটাই সামান্য মানুষ যে নিজের মেয়ে এমনকি ভাইঝি এসএসসি পরীক্ষা দিলেও তাঁদের চাকরির ব্যবস্থা নাকি করে দিতে পারেননি।
এই অতি সামান্য ‘ব্যক্তি’ই যদিও যাকে কেউ ছুঁতে পারে না, দেখা করতে পারে না সেই ‘সাহেব’ অভিষেক ব্যানার্জির সংস্থায় রীতিমতো ডিরেক্টর বনে গিয়েছিলেন!
‘লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস প্রাইভেট লিমিটেড’। ২০১২ সালে ১৯ এপ্রিল বোর্ড অফ ডিরেক্টর্সের অন্যতম সদস্য হিসাবেই যোগ দেন এই সুজয় ভদ্র। অভিষেক ব্যানার্জিও ছিলেন এই বোর্ড অফ ডিরেক্টর্সের সদস্য। অভিষেক ২০১৪ সালে লোকসভা ভোটের আগে বোর্ড অফ ডিরেক্টর্স থেকে পদত্যাগ করেন। এখন আরওসি’র ওয়েবসাইটেও দেখা যাচ্ছে তাঁর বাবা-মা’ই  এই সংস্থার অন্যতম দুই ডিরেক্টর। অমিত ব্যানার্জি ২০১৪ সালের ২ জানুয়ারি এই সংস্থার বোর্ড অফ ডিরেক্টর্সে যোগ দেন। লতা ব্যানার্জি ১৯ এপ্রিল ২০১২ সালে অর্থাৎ কোম্পানির তৈরি সময় থেকেই ছিলেন। আগে অভিষেকের স্ত্রী রুজিরা ব্যানার্জিও ছিলেন এই সংস্থায়।
এই অভিষেকের পারিবারিক সংস্থায় কয়লার টাকা ঢুকেছিল, সেই অভিযোগের তদন্তে কয়লা পাচারকাণ্ডে গত বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি নিজাম প্যালসে জেরা করা হয়েছিল সুজয় ভদ্রকে। সেই জেরা এড়াতে হাইকোর্টে রক্ষাকবচের আবেদনও করেছিলেন এই কালীঘাটের কাকু। যদিও রক্ষাকবচ মেলেনি। কয়লা পাচারকাণ্ডে তাঁকে সিবিআই’র ম্যারাথন জেরার মুখে পড়তে হয়েছিল। 
একটি নির্দিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ‘লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস প্রাইভেট লিমিটেড’ এবং ‘লিপস অ্যান্ড বাউন্ড ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসেস এলএলপি’— কয়লাকাণ্ডের তদন্তে এই দুই সংস্থায় সন্দেহজনক লেনদেনের হদিশ মিলেছে। একটি নির্মাণকারী সংস্থার মাধ্যমে ঢুকেছে টাকা। সেই সংস্থার সঙ্গে আবার সরাসরি যোগ কয়লা মাফিয়া অনুপ মাঝি ওরফে লালার।
কয়লা থেকে নিয়োগ দুর্নীতি— মানিরুট প্রায় একই, ক্রমেই সামনে আসছে সেই ছবি।
আর ‘অতি সামান্য’ এবং অভিষেকের অফিসের কর্মী এই সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রই ২০১১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে ভবানীপুর কেন্দ্র থেকে ভোটে লড়েছিলেন। ২০১১ সালে এই কেন্দ্র থেকে জিতেই মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন মমতা ব্যানার্জি। মমতা ব্যানার্জির বিরুদ্ধে তবে ভোটে কেন দাঁড়িয়েছিলেন অভিষেক ব্যানার্জির অফিসের স্টাফ ‘কালীঘাটের কাকু’ ওরফে সুজয় ভদ্র? তৃণমূল সূত্র থেকেই জানা গেছে, নির্বাচনী রাজনীতির স্বাভাবিক কৌশলেই ‘নির্দল’ প্রার্থী হিসাবে দাঁড়ালেও আসলে তা তৃণমূলেরই ডামি ক্যান্ডিডেট!
 

Comments :0

Login to leave a comment