SC on judges' appointments

বিচারপতি নিয়োগে কেন্দ্রের ঢিলেমিতে বিচার ব্যবস্থায় নৈরাজ্য, ক্ষুব্ধ সুপ্রিম কোর্ট

জাতীয়

SC on judges appointments

বিচারপতি নিয়োগ নিয়ে কেন্দ্রের ঢিলেমিতে বিচার ব্যবস্থায় একটা নৈরাজ্য তৈরি হচ্ছে বলে মনে করছে দেশের শীর্ষ আদালত সুপ্রিম কোর্ট। সোমবার সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি নিয়োগে ঢিলেমি নিয়ে মামলার শুনানিতে বিচারপতিরা এই মনোভাব স্পষ্ট করে দিয়েছেন। কলেজিয়ামে  বিচারপতি নিয়োগে ঢিলেমি নিয়ে বিচারপতিরা পরিষ্কার তাদের ক্ষোভ জানিয়ে বলেছেন, ‘যা চলছে তাতে পুরো ব্যবস্থায় নৈরাজ্য তৈরি হয়েছে। 

 

 

কলেজিয়াম বিচারপতির নাম নিয়োগের জন্য কেন্দ্রে পাঠালেও দেড় বছর হলো তা ঝুলে রয়েছে। নিয়োগ হয়নি। এটাই বিচার ব্যবস্থার বাস্তব পরিস্থিতি। এতে কীভাবে একটা ব্যবস্থা কাজ করবে?’ এই মন্তব্যের সঙ্গে বিচারপতিরা অ্যাটর্নি জেনারেন এবং সলিসিটর বলেন, আপনারা কেন্দ্রকে আদালতের এই ক্ষোভের কথা জানিয়ে দেবেন। নিয়োগে কেন্দ্রের এই ঢিলেমি বিশেষ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করছেন বিচারপতিরা। 
এদিকে বিচারপতি নিয়োগ নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে এদিন সরাসরি প্রায় সংঘাতের আবহ তৈরি হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে। সংঘাতের কেন্দ্রে রয়েছে কলেজিয়াম প্রথায় নিয়োগে নিয়েই। অভিজ্ঞ মহলের মত, কেন্দ্র বিচারপতি নিয়োগে নিয়ন্ত্রণে নিতেই কলেজিয়াম ব্যবস্থা তুলে দিতে চায়। 

 

 

স্বয়ং কেন্দ্রীয় বিচারমন্ত্রী কিরেন রিজিজুর সরাসরি কলেজিয়ামে প্রথায় নিয়োগে বিরোধিতাই নিয়োগের প্যানেল ঝুলে থাকার অন্যতম কারণ বলেও মত বিচারপতির একাংশের। তবে বিচারপতিদের মত, কলেজিয়ামে নিয়োগ যখন দেশের আইন তখন সেই আইন মানতে হবে সরকারকে।বিচার বিভাগের দায়িত্ব হলো কলেজিয়ামে নিয়োগ প্রক্রিয়া যথাযথ ভাবে পালন করা হচ্ছে কিনা তাতে নজর রাখা। 

 

 

বিচারপতিরা এদিন তাদের সেই দায়িত্ব পালনের কথা আদালতে সরাসরি জানিয়ে দিয়েছেন। আগামী ৮ডিসেম্বর হবে পরবর্তী শুনানি। বিচারপতি সঞ্জয় কিশোর কল এবংএএস ওকার বেঞ্চে এই মামলার শুনানি হয়।

 


এদিকে প্রায় দেড় বছর ধরে সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টে বিচারপতি নিয়োগে কলেজিয়ামে সুপারিশ করা ১১জন বিচারপতির প্যানেল নিয়োগ ঝুলে রয়েছে।কলেজিয়াম কেন্দ্রকে এক দফায় সুপারিশ করার পর তা ফেরত পাঠানোয় ফের সেই নাম কেন্দ্রকে পাঠায় কলেজিয়াম। কিন্তু তাদের নিয়োগ করেনি কেন্দ্র। নিয়ম হলো দ্বিতীয় বার কলেজিয়াম একই নাম সুপারিশ করলে মাস চারেকের মধ্যে প্যানেলের বিচারপতিদের নিয়োগে বাধ্য কেন্দ্র। 

 

 

কিন্তু  দেড় বছর কেটে গেছে দুই বার একই নাম পাঠানো হলেও আজও তাদের নিয়োগ হয়নি। কেন তাদের নিয়োগ হচ্ছেনা তার কোন জবাবও দেয়নি কেন্দ্র। সুপ্রিম কোর্টে কলেজিয়ামে নিয়োগ না হওয়ায় কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করে অ্যাডভোকেট অ্যাসোসিয়েশন বেঙ্গালুরু। গত ১১নভেম্বর শুনানিতে নিয়োগে এই ঢিলেমিতে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিচারপতিরা। তারা পরিষ্কার জানিয়েছিলেন যেভাবে কেন্দ্র নিয়োগের ফাইল চেপে বসে আছে ও নিয়োগে ঢিলেমি চলছে তা বরদাস্ত করা যায় না। সেদিন কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রকের সচিব ও সহসচিবকে নোটিস দেন বিচারপতিরা।নিয়োগ নিয়ে কেন্দ্রের অবস্থান জানতে চান তারা।এদিকে এর মধ্যেই কলেজিয়াম নিয়োগের তীব্র বিরোধিতা করেন বিচারমন্ত্রী কিরন রিজিজু। 

 

সংবাদ সংস্থাকে এক সাক্ষাৎকারে রিজেজু গত শুনানিতে বিচারপতির নিয়োগ নিয়ে যে বক্তব্যের রেখেছেন তারও সমালোচনা করেন। আদালতে আইনমন্ত্রীর বক্তব্য ধরে তার কঠোর সমালোচনা করেন বিচারপতিরা। এতে নিয়োগ নিয়ে  যে নৈরাজ্যজনক পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে তাও বিচারপতিরা জানিয়ে দেন।

 


টাইমস নাউ চ্যানেলে এক সাক্ষাৎকারে রিজিজু বিচারপতি নিয়োগে কলেজিয়াম ব্যবস্থার তীব্র সমালোচনা করেন। সেখানে বিচারপতির মতামত উড়িয়ে দিয়ে রিজিজু হুঁশিয়ারির সুরে বলেন,  ‘কখনো বলবেন না ফাইলের (কলেজিয়াম নিয়োগের ফাইল) উপর চেপে কেন্দ্র বসে আছে। যদি এরকম বলেন তবে আপনারা ফাইল সরকারকে পাঠাবেন না। নিজেরাই নিজেদের মতো যা করার করে নিন।’ রিজিজু আরও বলেন, দেশের সংবিধান সকলের কাছে ধর্মগ্রন্থের মতো। সরকারের কাছেও তা ধর্মগ্রন্থের মতোই। 

 

 

যা কিছু সংবিধানের ক্ষেত্রে বেমানান দেখা যাচ্ছে তা কোর্ট বা কিছু বিচারপতি সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে মেনে নিতে হবে? আপনি কী করে আশা করেন যে তা সারা দেশ মেনে নেবে? কলেজিয়ামের বৈধতা খন্ডন করে এই যুক্তি  ছুড়ে দিয়েছেন রিজিজু। এই  যুক্তি ছিল সঙ্ঘ পরিবারের রামমন্দির নিয়ে। সারা দেশের মানুষ রামমন্দির চাইছে না বলে অজুহাত তুলে তা নির্মাণে আইন কোনও বাধা হতে পারে না বলে জানায় সঙ্ঘ। এবার দেশের মানুষের দোহাই দিয়ে কলেজিয়াম নিয়োগ ব্যবস্থা বাঞ্ছনীয় নয় বলেই বোঝান রিজিজু।

 


এদিন কোর্টে বিচারপতি কল রিজিজুর এই বক্তব্য উল্লেখ করেন। তিনি মন্ত্রীর নাম উল্লেখ না করে বলেন, সরকারের উচ্চপদে থাকা একজন বলছেন, নিয়োগ নিজেরাই নিজেদের মতো করে নিন। আমরা এটা করে নিতে পারি, কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু প্রশ্ন হলো এটা উচ্চপদে থাকা একজনের মুখে যেভাবে একথা শোনা গেছে,তা আদৌ কাঙ্ক্ষিত নয়।আমি শুধু একটা কথাই বলতে পারি, এজাতীয় বক্তব্য বলা কখনো উচিত নয়। এই সময় বিচারপতির ক্ষোভ প্রশমনে বলেন, সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা বলেন, মিডিয়ার রিপোর্টের উপর মন্তব্য করবেন না। 

 

 

তারা ঠিক বলেনা। সঙ্গে সঙ্গে বিচাপতি জানান এটা কোনও মিডিয়া রিপোর্ট  নয়। এটা একটা সাক্ষাৎকার। যা আমি শুনেছি। তা সরকারের উচ্চ পদে থাকা একজনের পক্ষে বলা উচিত নয়। কল আরো বলেন, আমি আশা করছি অ্যাটর্নি জেনারেল ও সলিসিটর জেনরেলকে আপনারা নিশ্চয় সরকারের  আইন অফিসার হিসাবে এখানে দাবিত্ব পালন করছেন। তাই অপনাদের অনুরোধ করবো সরকারকে দয়া করে বোঝান। দেশের সরকারকে যা আইন তা প্রয়োগ করা নিশ্চিত করতে বলুন।

 

 

 


কলেজিয়াম প্যানলের নিয়োগে ঢিলেমিতে মোদী সরকারের বিচারপতি  নিয়োগে নিয়ন্ত্রণ কায়েমের পরিকল্পনা কাজ করছে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিচারপতিরা। তাই বিচারপতি কাউলের সরাসরি প্রশ্ন, কেন্দ্র কলেজিয়াম নিয়োগ ব্যবস্থা বাতিলে ন্যাশনাল জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কমিশন গঠন আইন ২০১৪ আনলে তা ২০১৫ সালে খারিজ করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। এয়ং পুরোন কলেজিয়াম ব্যবস্থা বহাল রাখে। এতে সরকার খুশি নয় বলে কি কলেজিয়ামের নিয়োগে বাধা দিচ্ছে? বিচারপতির কথায় স্পষ্ট হয়ে গেছে, বিচারপতি নিয়োগে কেন্দ্র যে  নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে চাইছে তা এই নিয়োগ ঢিলেমিতে প্রমাণ হচ্ছে। তাই বিচারপতির সাফ কথা,  যাই হোক সরকারের জানা উচিত,  বিচারপতি নিয়োগ এভাবে ঝুলিয়ে রাখা যায়না। এতে অনেক বিচারপতির সিনিয়রিটির যে পদোন্নতির সুযোগ তা নষ্ট হবে। এতে পুরো ব্যবস্থার মধ্যেই একটা হতাশা তৈরি হচ্ছে। এক সময় দেখা যাচ্ছে, প্যানেল থেকে আপনারা আপনাদের পছন্দ মতো নাম বেছে নিয়ে তাকে নিয়োগ করছেন। দেখা যাচ্ছে  কেন্দ্রের নিয়োগের এই ঢিলেমির জন্য, পছন্দের নিয়োগের জন্য বহু দক্ষ ‌আইনজীবী বিচারপতি  হতেই চান না। তা  তারা প্রত্যাখান করেন। আইন  ব্যবস্থায় এভাবে একটা নৈরাজ্য তৈরি হচ্ছে। তিনি বলেন,কেন্দ্রের জানা উচিত, বিচারপতি নিয়োগে এখন আইন হলো কলেজিয়ামে নিয়োগ। সেই আইন আপনার পছন্দ না হলেও যতক্ষণ তা আইন হয়ে রয়েছে তা সরকারকে কার্যকর করতেই হয়ে। তা সরকার উপেক্ষা করতে পারে না। 

 


এদিন কলেজিয়াম নিয়োগ পদ্ধতি ব্যাখ্যা করে বিচারপতিরা বলেন, এই কলেজিয়াম নিয়োগ প্রক্রিয়া দীর্ঘ সময় ধরে চলে। প্রতিটি বিচারপতিদের নাম যাচাই করা হয়। আইবি মতামত গ্রহণ করা হয়। আইন বিভাগের বিভিন্ন অংশের মতামত গ্রহণ করা হয়। আইনমন্ত্রী রিজিজু কলেজিয়াম নিয়োগ ব্যবস্থা একদম অস্বচ্ছ এবং অনিয়ম রয়েছে বলে জানান। সরকার কলেজিয়াম নিয়ে চুপ করে বসে নেই। এতে ব্যবস্থা নেওয়ার তিনি হুঁশিয়ারি দেন। তার মধ্যেই সুপ্রাম কোর্টে বিচারপতির পালটা হুঁশিয়ারি বিচার বিভাগে শোরগোল ফেলে দিয়েছে।

Comments :0

Login to leave a comment