Tea Gardens Closed

বন্ধ চা বাগানে উৎসবের আঁধার, রুটিরুজির খোঁজে ভিনরাজ্যে শ্রমিকরা

রাজ্য জেলা

কৌশিক দাম 

শারদোৎসবের আনন্দের ঢেউ যখন রাজ্যজুড়ে, মণ্ডপে মণ্ডপে যখন উৎসবের রঙ, তখনও জলপাইগুড়ি জেলার বানারহাট ব্লকের তিনটি বন্ধ চা বাগান— রেডব্যাঙ্ক, সুরেন্দ্রনগর ও চামুর্চি-র হাজার হাজার শ্রমিকের জীবনে নেমে এসেছে গভীর অন্ধকার ও অনিশ্চয়তা। উপার্জনের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই শ্রমিক পরিবারগুলির কাছে দুর্গাপূজা মানে এখন কেবলই উদ্বেগ। তাঁদের মুখে একটাই প্রশ্ন— “এবার পুজোটা কেমন কাটবে?” বন্ধ বাগান এলাকায় ঘুরে সামনে এসেছে এক করুণ বাস্তব। সংসার চালানোর তাগিদে বহু শ্রমিক পরিবার-পরিজন ছেড়ে ভিনরাজ্যে কাজের খোঁজে গিয়েছেন। কেউ বেঙ্গালুরু, কেউবা কেরালা গিয়ে দিনমজুরির কাজ করছেন। রেডব্যাঙ্কের জেমস কুজুর, সাগর ছেত্রী, চামুর্চির পবন লাকড়া, গোবিন্দ পাসওয়ান-এর মতো অসংখ্য শ্রমিক আজ ঘরছাড়া। সুরেন্দ্রনগর বাগানের চিত্রও একই। বাগান যদি আবার চালু হয়, সেই আশায় তাঁরা সকলেই ঘরের টানে ফিরে আসার অপেক্ষায়। তবে সকলের পক্ষে বাইরে যাওয়া সম্ভব হয়নি। পরিবার, বৃদ্ধ মা-বাবা বা অসুস্থদের সামলাতে অনেকেই স্থানীয় স্তরে অস্থায়ী রোজগারের পথ খুঁজছেন। একসময় যাঁরা বাগানে কাজ করে দৈনিক ৪০০-৫০০ টাকা উপার্জন করতেন, তাঁদের অনেকেই এখন রাস্তার ধারে ছোট দোকান, লটারি টিকিট বিক্রি কিংবা দিনমজুরির কাজে নেমেছেন। নতুন জামাকাপড় কেনা বা ভালো খাওয়া তাঁদের কাছে এখন শুধুই বিলাসিতা। পুরোনো জমানো টাকা কিংবা সামান্য রোজগারেই কোনওমতে চলছে তাঁদের সংসার। রেডব্যাঙ্ক ও সুরেন্দ্রনগর বাগান আগেও বহুবার বন্ধ হয়েছে, মালিক পাল্টালেও স্থায়ী সমাধান হয়নি। একসময় শ্রমিকরা সংসার চালাতে ডায়না নদী থেকে পাথর তুলতেন, কিন্তু সরকারের নতুন রয়্যালটি নীতির ফলে সেই কাজও বন্ধ হয়ে যায়, ফলে আরও সংকুচিত হয়েছে রোজগারের পথ। শ্রমিক নেতা অজয় মহালী অভিযোগ করে বলেন, “কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের শ্রমিকবিরোধী নীতির প্রয়োগের ফলেই একের পর এক বাগান বন্ধ হচ্ছে। বাধ্য হয়েই শ্রমিকদের বিকল্প রোজগারের পথ খুঁজতে হচ্ছে।” উৎসবের এই দিনেও শ্রমিকদের মুখে আনন্দের আভাস নেই। তাঁদের প্রার্থনা কেবল একটাই— দুর্গা মা যেন তাঁদের জীবনের দুর্গতি ঘোচান। এই অঞ্চলের হাজার হাজার শ্রমিক পরিবার চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। তাঁদের কাছে দুর্গাপূজা মানে এখন আর উৎসব নয়, টিকে থাকার এক কঠিন লড়াই।

Comments :0

Login to leave a comment