নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্য বৃদ্ধির কথা বিবেচনায় রেখে চা বাগানের সমস্ত শ্রেণির শ্রমিকদের জন্য ২০ শতাংশ হারে বোনাস দেবার দাবিতে তরাইয়ে বিভিন্ন বাগানে ক্ষোভ বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। শারদোৎসবের হাতে গোনা দশদিনের মতো বাকি রয়েছে। কিন্তু এখনও তরাইয়ের ৪৫টি চা বাগানের মধ্যে বেশ কিছু চা বাগানে মালিকপক্ষ ন্যায্য ও সম্মানজনক বোনাস দিতে অনীহা প্রকাশ করছে। শ্রমিকদের সুবিধার্থে উৎসবের অন্ততঃ চার সপ্তাহ আগে অর্থাৎ আগস্টের শেষ সপ্তাহের মধ্যে ২০ শতাংশ হারে উৎসব ভাতা বাগিচা শ্রমিকদের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি ছিলো তরাইয়ের সমস্ত চা বাগিচা শ্রমিকদের। এই দাবি নিয়ে চা শ্রমিকদের সংগঠন জয়েন্ট ফোরামের পক্ষ থেকে শিলিগুড়ি সংলগ্ন মাটিগাড়ার টিপা অফিসে টিপার সেক্রেটারি মলয় মৈত্রর হাতে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়েছিলো। তা সত্ত্বেও বোনাস দেওয়া নিয়ে গরিমষি হচ্ছে। এখন উৎসবের মুখে ন্যায্য বোনাস দিতেও অনেকগুলি বাগানের মালিকপক্ষ টালবাহানা করছে। চলতি বছরের উৎসব বোনাস নিয়ে তরাইয়ের অনেকগুলি চা বাগানে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
যদিও ইতোমধ্যেই তরাইয়ের পাহাড়ঘুমিয়া, জয়ন্তিকা, মতিধর, মোহরগাঁ, গুলমা, তাইপু সহ আরও বেশ কয়েকটি চা বাগানে ২০ শতাংশ হারে বোনাস হয়ে গেছে। বেশ কিছু বাগান ন্যায্য বোনাস দিতে প্রস্তুতি সেরে ফেলেছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত নকশালবাড়ি, অটল, সুকনা, ত্রিহানা, মেরিভিউ, থানঝোরা চা বাগান সহ বেশ কিছু বাগান কর্তৃপক্ষ বোনাস সংক্রান্ত বিষয়ে একরোখা মনোভাব নিয়ে চলেছে।
জানা গেছে, মঙ্গলবার নকশালবাড়ি চা বাগানের মালিকিনী সোনিয়া জব্বর ২০ শতাংশ উৎসব ভাতা দেওয়া সম্ভব নয় বলে স্পষ্ট জানিয়েছেন। শ্রমিকদের ডেকে নিয়ে নকশালবাড়ি বাগান কর্তৃপক্ষের তরফে ঘোষণা করা হয় ‘১৪ শতাংশ উৎসব ভাতা নিলে নাও, না হলে যাও’। এই ঘোষণার ফলে বাগিচা শ্রমিকদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। যদিও মালিকপক্ষের সৃষ্টি করা কোন প্ররোচনায় পা দেননি নকশালবাড়ির বাগিচা শ্রমিকেরা। শ্রমিকদের অসন্তোষ এদিন প্রশমিত হলেও, ন্যায্য বোনাসের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হতে শুরু করেছে নকশালবাড়ি চা বাগানের শ্রমিকেরা। এদিকে ত্রিহানা চা বাগানের মালিকপক্ষেরও বোনাস নিয়ে কোনরকম উচ্চবাচ্য নেই। মেরিভিউ, সুকনা, থানঝোরা, অটল সহ আরও কয়েকটি চা বাগান এখনও বোনাস নিয়ে কোন কথাই বলছে না। তরাইয়ে বাগিচা শ্রমিকদের সাফ কথা, উৎসবের মরশুমে প্রতিবারই বোনাস নিয়ে দীর্ঘ টালবাহানা করাটা রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এবছরও বোনাস নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি করার প্রয়াস লক্ষ্য করা গেলেও, তরাইয়ের অনেকগুলি বাগানে ইতোমধ্যেই ২০ শতাংশ হারে শ্রমিকদের উৎসবব ভাতা দিয়েছে মালিকপক্ষ। উৎসবকালীন বোনাস বাগিচা শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা। তবে আমরা কেন পাব না? ২০শতাংশ বোনাস আমাদের ঘরে অনেকটাই আর্থিক সুরাহা এনে দেয়। কোনভাবেই ২০ শতাংশ বোনাসের কম মেনে নেওয়া হবে না। স্বাভাবিকভাবেই অসন্তোষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে যে কোন সময় ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটতে পারে। চা বলয় ছাড়িয়ে ন্যায্য ও সম্মানজনক উৎসব বোনাসের দাবিতে আন্দোলন রাস্তায় নামিয়ে আনতে বাধ্য হবেন বাগিচা শ্রমিকেরা।
চা শ্রমিক নেতা গৌতম ঘোষ বলেন, ‘‘আমরা ২০শতাংশ বোনাসের পক্ষে। এই সময় পর্যন্ত তরাইয়ের প্রায় ১০/১২টি বাগানে বোনাস হয়েছে। ২০/২৫টি চা বাগানে বোনাস হয়নি। এই সংখ্যক বাগানের মধ্যে আগামী দুই তিনদিনের মধ্যে কিছু বাগান মালিকপক্ষের ন্যায্য বোনাস দেবার সম্ভাবনা পরিস্থিতি রয়েছে। কিন্তু ৮/১০টি বাগান ন্যায্য ও সম্মানজনক বোনাস দেবার বিষয়ে একেবারেই উদাসীন। নকশালবাড়ি বাগান কর্তৃপক্ষ যে কোন সময় ১৪ শতাংশ বোনাস শ্রমিকদের আকাউন্টে ঢুকিয়ে দিতে পারে। বাগিচা শ্রমিকরা কোনভাবেই তা মেনে নেবে না। বাগান অচল হয়ে যাবে। বাগিচা শ্রমিকদের দাবির প্রতি আমাদের সম্মতি রয়েছে।’’ তিনি আরও বলেন, কোনমতেই বোনাসকে দুই ভাগে ভাগ করা যাবে না। আগস্টের ২২তারিখ সরকারের তরফে অ্যাডভাইসারি ঘোষণা করা হয়েছিলো। পরবর্তী ২৮ তারিখের মিটিং বাতিল করা হয়। অ্যাডভাইসারিতে মালিকপক্ষ স্বাক্ষরও করে। তারপরেও মালিকপক্ষ ন্যায়সঙ্গত বোনাস দিতে অসম্মত হলে শ্রমিক অসন্তোষ আরও বাড়বে।’’ সরকারের অ্যাডভাইসারিকে মান্যতা দিয়ে সকল বাগান কর্তৃপক্ষ যাতে বাগিচা শ্রমিকদের অবিলম্বে ন্যায্য ও সম্মানজনক বোনাস প্রদান করে সেই দাবি জানান তিনি।
ডুয়ার্সে চা বাগানগুলিতে চা শ্রমিকদের বোনাস প্রদান থমকে থমকে চলছে। উত্তরবঙ্গ জোনের যুগ্ম শ্রম কমিশনার ২২/৮/২০২৫ এক মেমো নম্বরে ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বোনাস প্রদান সমাপ্ত করার আদেশ দিয়েছেন। কিন্তু সেই সময় পেরিয়ে গেছে। বেশ কিছু বাগানে বোনাস প্রদানে টালবাহনা চলছে। ডুয়ার্সে সম্মেলন গ্রুপের চারটি চা বাগান। বাগ্রাকোট, মানাবাড়ী, নাগেশ্বরী ও কিলকোট চা বাগান। এই চা বাগানগুলিতে এখনও বোনাস কবে দেওয়া হবে ও কত দেওয়া হবে কোন ঘোষণা হয়নি। এই অবস্থায় বোনাসের কথা না বলায় ক্ষিপ্ত চা বাগান শ্রমিকরা। প্রায় প্রতিদিন চলছে গেট মিটিং অবস্থান। রয়েছে বকেয়া পাক্ষিক মজুরি। গভীর অনিশ্চয়তা। তাই গেট সভার মাধ্যমে চলছে আন্দোলন। ২০ শতাংশ বোনাস দিতে হবে সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী এই দাবিতে সকল চা শ্রমিকরা একই ছাতার তলায়। মঙ্গলবার বাগরাকোট চা বাগানে গেট মিটিং হয়।
Tea Gardens workers
২০ শতাংশ বোনাসের দাবিতে চা শ্রমিকদের বিক্ষোভ চলছে

×
Comments :0