অনিন্দিতা দত্ত : শিলিগুড়ি
বৃহস্পতিবার শ্রমিক, কর্মচারি, শিক্ষক, শিক্ষাকর্মীদের যৌথ মঞ্চ ১২ই জুলাই কমিটি দার্জিলিঙ জেলার আহ্বানে উত্তরকন্যা অভিযানে সামিল হলেন উত্তরবঙ্গের সাত জেলা থেকে আগত শ্রমিক, কর্মচারী, শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী অবসরপ্রাপ্তরা। উত্তরকন্যা অভিযানকে সামনে রেখে এদিন সুবিশাল মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্বচ্ছ্বতার সাথে শূন্যপদ পূরন, সম কাজে সম বেতন, চুক্তিভিত্তিক কর্মচারীদের নিয়মিত করন করা, বকেয়া ৩৭শতাংশ মিটিয়ে দেওয়া, চা শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি প্রদান, তাদের জমির পাট্টা দেওয়া ইত্যাদি একাধিক দাবিতে শ্রমিক, কর্মচারি, শিক্ষক, শিক্ষাকর্মীদের দৃপ্ত মিছিল মাঝ রাস্তায় তিনবাত্তি মোড়ে আটকে দিয়েছে পুলিশ।
এদিন সকালের পর থেকেই শিলিগুড়ি এসএফ রোডে ফায়ার ব্রিগেডের পাশে সিদ্ধেশ্বরী কালীবাড়ির সামনে উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, মালদা, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর জেলাগুলির শ্রমিক, কর্মচারি, শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী, অবসরপ্রাপ্তরা জমায়েত হতে শুরু করেন। দুপুর আড়াইটা নাগাদ সেখানেই হিন্দিস্কুলের সামনে থেকে জলপাইমোড় হয়ে শান্তিপূর্ণ মিছিল করে উত্তরকন্যা অভিযানের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে। লাল পতাকায় সুসজ্জিত মিছিল সুন্দরভাবে এগিয়ে আসছিলো। কিন্তু নৌকাঘাট পেরিয়ে মিছিল তিনবাত্তি মোড়ের দিকে এগোতেই প্রশাসনের তরফে বাধাপ্রাপ্ত হয় মিছিল। বিরাট পুলিশ বাহিনী বাঁশের ব্যারিকেড গড়ে তুলে মিছিল আটকে দেয়। আর মিছিল বাধাপ্রাপ্ত হতেই পুলিশের সাথে মিছিলকারীদের বাকবিতন্ডা শুরু হয়ে যায়। রাস্তা অবরোধ করে দীর্ঘসময় বিক্ষোভ ও পুলিশের সাথে আলোচনা চলে। অনুরোধ করা সত্ত্বেও পুলিশ প্রশাসন কোন কথা শোনেনি। ব্যাপক প্ররোচনার সৃষ্টি করা হলেও প্রশাসনের অশান্তির চেষ্টার কোন প্ররোচনায় পা দেননি মিছিলকারীরা। অশান্তির চেষ্টা এড়িয়ে সংগঠনের পক্ষ থেকে কর্মসূচিতে সামিল সকলকে ঐক্যবদ্ধ করে তিনবাত্তি মোড়ে মূল সড়কের ওপরেই ধিক্কার সভা হয়।
প্ররোচনা সৃষ্টিকারী পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে ধিক্কার জানিয়ে সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে ১২ই জুলাই কমিটির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য লিটন পান্ডে বলেন, ন্যায্য অধিকার আদায়ে ধারাবাহিকভাবে লড়াই আন্দোলন চলছেই। তবে আগামীর লড়াই আরও জোরদার করে ফের হবে উত্তরকন্যা অভিযান। আমাদের লড়াইয়ের ২০দফা দাবি সমস্ত স্তরের মানুষের স্বার্থবাহী। বিগত বামফ্রন্ট সরকারের সময়কালে মহার্ঘভাতা সহ যে সমস্ত সুযোগ সুবিধাগুলি আমরা অর্জন করেছিলাম, বর্তমান রাজ্যের সরকার সমস্ত কিছু থেকে আমাদের বঞ্চিত করছে। বঞ্চনার বিরুদ্ধে মুখ খুললেই বাজে ভাষায় আক্রমণ করা হচ্ছে। আমরা সরকারি কর্মচারী বা শিক্ষক শিক্ষাকর্মীরা যে ভাষা শুনতে অভ্যস্ত নই। বিভিন্ন রাজ্যে বাংলা ভাষাভাষিদের ওপর আক্রমণ হচ্ছে। বিগত দিনে পশ্চিমবাংলায় এমনটা ছিলো না। পশ্চিমবাংলায় বাইনারি তৈরী করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পরিবেশ কায়েম করা হচ্ছে। অতীতে কখনই হয়নি। ১৯৭৭সালে বামফ্রন্টের সময়ে শিক্ষানীতি তুলে ধরে বলেন, জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০ কার্যকর করার চেষ্টায় গোটা বাংলায় শিক্ষানীতি ধ্বংসের মুখে দাঁড়িয়েছে। ফলস্বরূপ পশ্চিমবঙ্গে পরিকল্পনামাফিক সমস্ত সরকারি স্কুল ব্যবস্থাকে ভেঙে দিয়ে একের পর এক স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। বেসরকারিকরণের পথে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে গোটা শিক্ষা ব্যবস্থাকে। আট হাজারের ওপর স্কুল এখন বন্ধ হয়েছে। মোটা টাকা ফিস দিয়ে আমার আপনার ঘরের ছেলেমেয়েদের বেসরকারি শিক্ষাগ্রহণে উৎসাহিত করা হচ্ছে, চক্রান্ত অনেক গভীরে। অবিলম্বে বন্ধ হয়ে যাওয়া সমস্ত স্কুলগুলি খোলার পাশাপাশি সরকারের ভ্রান্ত শিক্ষানীতি বাতিল করে সকলের জন্য শিক্ষার দ্বার উন্মুক্ত করতে হবে। কেন্দ্রীয় সরকারি দপ্তর পোষ্ট অফিস কার্যত বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। অবসরপ্রাপ্তদের দেখভালের দায়িত্ব জাতীয় কর্তব্য। ন্যায্য দাবিতে উত্তরকন্যায় স্মারকলিপি দেবার ছিলো। কিন্তু পুলিশ আটকে দিলো। পুলিশের ওপর নির্দেশ আছে যে কোন শান্তিপূর্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলন ভেঙে দিতেই হবে। আগামীর তীব্র লড়াই আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে আমাদের দাবি কেন্দ্র ও রাজ্য দুই সরকারকেই মেনে নিতে বাধ্য করব।
তিনবাত্তি মোড়ে ১২ই জুলাই কমিটি দার্জিলিঙ জেলার যুগ্ম সম্পাদক মনোজ নাগের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন সংগঠনের বিভিন্ন জেলার প্রতিনিধি আশীষ গোস্বামী, বানীব্রত সাহা, শিউলি ঘোষ, অচিন্ত্য মন্ডল, আশীষ কর ও শশাঙ্ক শেখর নাগ। এছাড়াও দাবিদাওয়া তুলে ধরে বলেছেন গণআন্দোলনের নেতা গৌতম ঘোষ। উত্তরকন্যা অভিযান ও ডেপুটেশন দেওয়াকে কেন্দ্র করে মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার ছিলো। সভা চলাকালীন শ্রমিক, কর্মচারী, শিক্ষক, শিক্ষাকর্মীদের যৌথ মঞ্চ ১২ই জুলাই কমিটি দার্জিলিঙ জেলার পক্ষ থেকে ছয় জনের একটি প্রতিনিধিদল উত্তরকন্যায় পৌঁছে আধিকারিকের হাতে স্মারকলিপি তুলে দেন। প্রতিনিধি দলে ছিলেন ১২ই জুলাই কমিটির যুগ্ন আহ্বায়ক পার্থ ভৌমিক, বিদ্যুৎ রাজগুরু, তপন সরকার, দেবাশীষ রায়, প্রদীপ কর্মকার ও নির্মল বোস।
২০দফা দাবিতে এদিন উত্তরকন্যার অ্যাডিশনাল চিফ সেক্রেটারির হাতে স্মারকলিপিটি তুলে দেওয়া হয়েছে। নৈরাজ্য, দুর্নীতি ও স্বৈরাচারী শাসন প্রণালী থেকে রাজ্যকে মুক্ত করা, ভিন রাজ্যে কর্মরত বাংলাভাষী পরিযায়ী শ্রমিকদের ওপর আক্রমণ বন্ধ করা, ভাষা ও ধর্মভিত্তিক বিভাজনের রাজনীতি বন্ধ করে শান্তি ও সম্প্রীতি সুনিশ্চিত করারও দাবি জানানো হয়েছে এই স্মারকলিপিতে। উত্তরকন্যার অ্যাডিশনাল চিফ সেক্রেটারি এদিন স্মারকলিপি গ্রহণ করে দাবি বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন।
Uttarkanya Abhijan
২০ দফা দাবিতে উত্তরকন্যাতেও অভিযান ‘১২ই জুলাই কমিটির’

×
Comments :0