Behala accident

স্কুলের সামনেই লরির ধাক্কা প্রাণ গেল একরত্তি শিশুর

রাজ্য কলকাতা

লরির ধাক্কায় মর্মান্তিকভাবে প্রাণ গেল একরত্তি শিশুর, গুরুতর জখম বাবা। শুক্রবার সকালে ৭ বছরের ছেলেকে স্কুলে নিয়ে যাওয়ার পথে ঘটলো মর্মন্তুদ এই ঘটনা। অভিযোগ, পুলিশের সামনে দিয়েই উধাও হয়ে যায় ঘাতক লরিটি। এর পরেই অভিভাবক ও এলাকার মানুষের বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠল বেহালা চৌরাস্তার মোড়। ঘটনার পর বড়িশা হাইস্কুলের সামনে পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হতেই পুলিশ বেপরোয়া লাঠি চালায়, এলাকায় নামে র্যা  ফ। এলোপাতাড়ি কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটায় পুলিশ। আতঙ্কে বহু অভিভাবক স্কুলের ভেতরে ঢুকতে চেষ্টা করেন। মারমুখী পুলিশ স্কুলের ভেতরেও কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়ে বলে অভিযোগ।


পরিস্থিতির জেরে পড়ুয়া-শিশু সহ অভিভাবক, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। এর মধ্যেই স্থানীয় মানুষ এবং অভিভাবকরা ‘ঘটনার বিহিত চাই, ঘুষখোর পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা চাই’ স্লোগান তুলে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। স্কুলের সামনে ট্রাফিক পুলিশ গার্ডের ব্যবস্থা নেই কেন, প্রশ্ন তোলেন সকলেই। উত্তেজিত জনতা পুলিশের গাড়িতে ও একটি বাইকে আগুন ধরিয়ে দেয়। দু’-একটি বাসে ভাঙচুরের চেষ্টা হয়। রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় বেহালা চৌরাস্তার মোড়। ডায়মন্ডহারবার রোডের চারপাশের দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায় মুহূর্তের মধ্যে। উত্তেজিত জনতা ঘটনাস্থল সংলগ্ন ট্রাফিক গার্ডের অফিসেও ভাঙচুর চালায়। ঘটনাস্থলে পৌঁছান পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা। বেলা ১১ টার পর অবস্থা কিছুটা স্বাভাবিক হয়। পরে জানা গিয়েছে, ঘাতক লরিটিকে কোনা এক্সপ্রেসওয়ের সাঁতরাগাছি এলাকা থেকে আটক করেছে পুলিশ।


সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম এই ঘটনায় দোষীদের উপযুক্ত শাস্তির দাবি করেছেন। মৃত ছাত্রের শোকার্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন তিনি। পুলিশ প্রশাসনের অপদার্থতা প্রসঙ্গে মহম্মদ সেলিম সোশাল মিডিয়ায় বলেন, ‘‘পুলিশের কাজ শুধু তৃণমূলের হয়ে ভোট লুট করা নয়, ট্রাফিক সামলানোর দায়িত্বও পুলিশের।’’       
বেহালা চৌরাস্তার মোড়ে ডায়মন্ডহারবার রোডের ধারেই বড়িশা হাইস্কুল। ওই স্কুলের প্রাথমিক বিভাগে এদিন প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মূল্যায়ন বা পরীক্ষা ছিল। দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র, সন্তান  সৌরনীলকে নিয়ে পোড়াঅশ্বত্থতলা থেকে অটোতে উঠে চৌরাস্তায় নেমেছিলেন বাবা সরোজ কুমার সরকার। সরশুনা যাওয়ার রাস্তা বীরেন রায় রোড (পশ্চিম) এবং ডায়মন্ডহারবার রোডের সংযোগস্থলে রাস্তা পার হওয়ার সময়ে ছুটে আসে মাটিবোঝাই একটি লরি। একরত্তি শিশুর মাথার ওপর দিয়ে চলে যায় লরিটি। কোনোরকমে প্রাণে বেঁচে গেলেও লরির ধাক্কায় দু’টি পা-ই জখম হয়ে যায় সরোজ সরকারের। 


ততক্ষণে এই হৃদয় বিদারক ঘটনার খবর পৌঁছে গিয়েছে স্কুলে। স্কুলের সকলের সঙ্গেই ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন আশপাশের দোকানদার থেকে পথচারীরা। ছুটোছুটি পড়ে যায় অন্যান্য অভিভাবকদের মধ্যেও। সেসময়ে বেশ কিছুক্ষণ সৌরনীলের দেহ রাস্তাতেই পড়ে থাকে। ছোট্ট শিশুর এই অবস্থা দেখে কেঁদে ফেলেন অনেকেই। 
স্থানীয়রা জানান, পুলিশের সহায়তা না পেয়ে শেষপর্যন্ত স্কুল থেকে উদ্যোগ নিয়ে খুদে পড়ুয়ার নিথর দেহটি বেহালার বিদ্যাসাগর হাসপাতালে পাঠানো হয়। ওই হাসপাতালেই নিয়ে যাওয়া হয় তার বাবা সরোজ সরকারকেও। জখম গুরুতর হওয়ায় সেখান থেকে তাঁকে রেফার করা হয় এসএসকেএম হাসপাতালে। এখন সেখানেই চিকিৎসা চলছে তাঁর।
দুর্ঘটনার পরেই এলাকায় ট্রাফিক চলাচলে চূড়ান্ত অব্যবস্থা ও তার জন্য পুলিশ প্রশাসনকে দায়ী করে শুরু হয় পথ অবরোধ এবং তুমুল বিক্ষোভ। স্থানীয় মানুষ অভিযোগ করেন, পুলিশ নিজের দায়িত্ব পালন করলে দুর্ঘটনাই হতো না। দুর্ঘটনার পরেও পুলিশের কোনও সাহায্য মেলেনি। উলটে পুলিশ ঘুষ খেয়ে লরিটিকে ছেড়ে দিয়েছে। এবিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে পুলিশের নির্বিকার উত্তর, ‘আমরা নম্বর দেখে রেখেছি’!  
পরে লাঠি ও বন্দুক হাতে বিশাল পুলিশ বাহিনী এবং র্যা ফ এসে ঝাঁপিয়ে পড়ে এলাকার মানুষ, অভিভাবকদের ওপর। বেপরোয়া লাঠির সঙ্গেই ফাটাতে থাকে টিয়ার গ্যাসের সেল। পুলিশ স্কুলের ভেতরে টিয়ার গ্যাস ছোঁড়ায় খুদে পড়ুয়াদের সঙ্গে শিক্ষক-শিক্ষিকারাও অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। স্কুলের ভেতরে টিয়ার গ্যাস ছোঁড়ার অনুমতি কে দিল, প্রশ্ন তোলেন সকলে। স্কুলের প্রাথমিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অর্জুন রায়ও এদিন অসুস্থ বোধ করেন।

 

Comments :0

Login to leave a comment