DE DOLLARISATION

দুর্বল হচ্ছে ডলার

সম্পাদকীয় বিভাগ

dollar international politics global economy Editorial bengali news

আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে এবং অন্যান্য বৈ‍‌দেশিক লেনদেনে মাধ্যম হিসাবে ব্যবহৃত হয় আমেরিকান ডলার। আন্তর্জাতিক মুদ্রা বলে কিছু হয় না। তবে মার্কিন ডলারই আন্তর্জাতিক মুদ্রা রূপে কাজ করে। যে কোনও ধরনের আমদানি রপ্তানির ক্ষেত্রে মূল্য দিতে হয় ডলারে। তাই সবদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কই বৈদেশিক লেনদেনের জন্য বিদেশি মুদ্রা প্রধানত মার্কিন ডলার মজুত করে রাখে।

এই বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয় কমে গেলেই কোনও দেশ সিঁদুরে মেঘ দেখতে শুরু করে। সাম্প্রতিককালে বিদেশি মুদ্রার সঙ্কটে যারা পড়েছিল তাদের অন্যতম শ্রীলঙ্কা এবং পাকিস্তান। এই বিদেশি মুদ্রা হিসাবে ডলারের আধিপত্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে। তার আগে আন্তর্জাতিক বিনিময়ে সর্বাধিক ব্যবহার হতো ব্রিটিশ পাউন্ড। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে বিশ্ব আধিপত্যের জায়গায় ব্রিটেনকে সরিয়ে দখল নেয় আমেরিকা।

পাশাপাশি আন্তর্জাতিক লেনদেনের মুদ্রা হিসাবে পাউন্ডের জায়গার দখল নেয় ডলার। তেমনি ডলারের সূত্রে গোটা বিশ্বের মার্কিন প্রভাব ও প্রতিপত্তি প্রশ্নাতীত জায়গায় পৌঁছে যায়। এই নতুন ধরনের এক সাম্রাজ্যবাদ গড়ে ওঠে যা ডলার সাম্রাজ্যবাদ নামে পরিচিত। ডলারের কল্যাণের আন্তর্জাতিক ভারসাম্যে আমেরিকা যেমন কয়েক ধাপ এগিয়ে থাকে তেমনি অন্যান্য দেশগুলিও মার্কিন আধিপত্য মেনে নিতে বাধ্য।


দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রথম দুই দশক মার্কিন অর্থনীতির অপ্রতিরোধ্য বিকাশ ডলারের উপর আস্থা এতটাই বাড়িয়ে দেয় যে ডলার কোনোদিন দুর্বল হবে এটা ভাবারই উপায় ছিল না। ডলার প্রথম সঙ্কটে পড়ে সত্তরের দশকের গোড়ায়। তার থেকে পরিত্রাণের জন্য ডলারের সঙ্গে সোনার সম্পর্ক ছিন্ন করে মার্কিন প্রশাসন। তারপর থেকে ডলার নিছকই কাগজের মুদ্রা।

তাই ডলারের উপর আস্থা কমতে শুরু করে। অনেক ক্ষেত্রে যাদের পক্ষে সম্ভব হয়েছে তারা বিকল্প সঞ্চয় হিসাবে সোনা মজুত করেছে। ডলারের সমস্যা বাড়লে আস্থা কমে তখন বিকল্প হিসাবে সোনার মজুত বাড়ে। স্বাভাবিকভাবেই আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার মূল্য বাড়ে। ইদানীং লক্ষ্য করা যাচ্ছে সোনার দাম হু হু করে বাড়ছে। বিকাশমান দেশগুলি ডলারের আস্থা হারিয়ে সোনা মজুতে জোর দিচ্ছে। এই ঘটনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে গত বছর ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হবার পর।


রাশিয়ার বিরুদ্ধে সর্বাত্মক নিষেধাজ্ঞা জারির ফলে ডলার ভিত্তিক লেনদেন থেকে রাশিয়া বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এই ঘটনায় সিঁদুরে মেঘ দেখতে শুরু করে অন্যান্য অনেক দেশ। ডলারের বিকল্পের ভাবনা জোরদার হয়। এদিকে চীন তাদের মুদ্রায় লেনদেনের জন্য বিভিন্ন দেশে সঙ্গে আলোচনা বাড়ায়। রাশিয়া তাদের রপ্তানি তাদের মুদ্রার মাধ্যমে করার কৌশল নেয়। তার ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের একটা বড় অংশ ডলারকে এড়িয়ে চলতে শুরু করে। 

এক দশক আগে বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কে মোট সঞ্চয়ের ৭৩ শতাংশ ছিল ডলার। এখন সেটা প্রায় ৪৭ শতাংশে নেমে গেছে। আর এর এক তৃতীয়াংশই কমেছে গত বছর। অন্যদিকে সোনার পাশাপাশি চীনের মুদ্রা ইউয়ানের সঞ্চয়ও ধীরে ধীরে বাড়ছে। রাশিয়া তাদের জ্বালানি শক্তির জোরে নিজেদের স্বার্থে চেষ্টা চালাচ্ছে ডলার ব্যবস্থা থেকে তাদের বাণিজ্য সহযোগীদের বের করে আনতে। বিশ্ব অর্থনীতির দুর্বল বিকাশ ও মন্দার আশঙ্কাও ডলারের উপর নেতিবাচক চাপ বাড়াচ্ছে। যা আখেরে ডলার আধিপত্যের ভিত দুর্বল করে দিচ্ছে।
 

Comments :0

Login to leave a comment